অথবা, ইবনে রুশদের কার্যকারণ সম্পর্কে লিখ।
অথবা, ইবনে রুশদের কার্যকারণ বিষয়ক মতবাদ সংক্ষেপে তুলে ধর।
অথবা, কার্যকারণ সম্পর্কে ইবনে রুশদ কী মতবাদ দেন।
অথবা, সংক্ষেপে ইবনে রুশদের কার্যকারণ মতবাদ ব্যাখ্যা কর।
উত্তরা৷ ভূমিকা : কার্যকারণের ধারণা হচ্ছে এমন একটি ধারণা যেখানে মনে করা হয়, জগতের প্রতিটি ঘটনা তার পূর্ববর্তী অবস্থা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এবং যে অবস্থাটি উপস্থিত হলে উক্ত ঘটনাটি ঘটতে বাধ্য। এ ধারণা মতে, সকল ঘটনাই তার পূর্ববর্তী অবস্থা দ্বারা এমন এক আবশ্যিক শৃঙ্খলে বাঁধা, যা কখনও রদবদল হয় না। কোনকিছুই প্রকৃতিতে
কারণ ছাড়া সংঘটিত হয় না। শূন্যতা থেকে কোনকিছুই আসে না।
ইবনে রুশদের অভিমত : কার্যকারণ নিয়মকে দার্শনিক ইবনে রুশদ একটি প্রকৃত নিয়ম বলে বিশ্বাস করেন। তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি ও যুক্তির সারসংক্ষেপ নিম্নে তুলে ধরা হলো :
১. ইবনে রুশদের মতে, আমরা স্বাভাবিকভাবেই প্রকৃতিতে যে কার্যকারণ নিয়ম লক্ষ্য করি তাকে অস্বীকার করা
কোন ক্রমেই যথার্থ হতে পারে না। তিনি মন্তব্য করেন, কার্যকারণের বিরুদ্ধে অহেতুক যুক্তি উপস্থাপন এক ধরনের চাতুর্যপূর্ণ বিভ্রান্তিকর যুক্তির সামিল।
২. ইবনে রুশদ মনে করেন যে, কার্যকারণ নিয়ম যারা অস্বীকার করেন তাদের অনেকেই হয়তো এটা আন্ত রিকভাবে করেন না। এদের সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন যে, হয় এরা মনের প্রকৃত কথা মুখে প্রকাশ করেন না, নতুবা কূটতার্কিক প্রকৃতির লোক।
৩. ইবনে রুশদের ধারণা কার্যকারণ নিয়মকে যারা অস্বীকার করেন না অথবা নিমিত্ত কারণ স্বীকার করে না। প্রত্যেকটি কর্মের পিছনে একজন কর্তার হাত রয়েছে এমনটি স্বীকার করাও তাদের কোন কারণ নেই। কার্যকারণ নিয়ম সম্পর্কে ইবনে রুশদ তাদের মতবাদ অযৌক্তিক বলে চিহ্নিত করেন যারা মনে করেন,.জগতের অনেক ঘটনারই কারণ লক্ষ্য করা যায় না। তাৎক্ষণিকভাবে কোন ঘটনার কারণ জানা না গেলেও এটা প্রমাণিত হয় না যে, উক্ত ঘটনার কোন কারণ নেই এবং সাময়িকভাবে এটা দ্বারা আমাদের ঐ কারণ সম্পর্কে অজ্ঞতা প্রকাশিত হতে পারে।
৫. ইবনে রুশদের মতে, দার্শনিকরা জগতের যেসব ঘটনার অন্তরালে কারণ খুঁজে না পেয়ে ঐসব ঘটনাকে.কারণহীন বলে মনে করেন। তিনি তাঁদের সম্পর্কে বলেন যে, তাঁরা স্বপ্রমাণিত (Self evident) এবং অজ্ঞাত এর মধ্যে পার্থক্য ঠিকমতো বুঝেন না। তাঁর ধারণা গাজালির কার্যকারণ নিয়মের অস্বীকৃতি সম্পর্কিত ব্যাখ্যাও এ দোষের শিকার।
৬. ইবনে রুশদ কার্যকারণের নিয়মের সপক্ষে এক পর্যায়ে প্রয়োগিক যুক্তিও উত্থাপন করেন। তাঁর মতে, যদি মানুষ কার্যকারণ নিয়ম স্বীকার না করে তাহলে জ্ঞানবিজ্ঞানের সাধনা ও অগ্রযাত্রা ব্যাহত হবে। কারণ মানুষ ঘটনার
সুনির্দিষ্ট কারণ খুঁজে বের করতে গিয়ে নতুন নতুন আবিষ্কার ঘটিয়ে বসে। যদি মানুষের এ বিশ্বাস দৃঢ় হয় যে, জগতে কোন ঘটনার পিছনে কোন কারণ নেই তবে মানুষের নিরলস অনুসন্ধানেও গবেষণা নিরুৎসাহিত হয়ে
পড়বে।
৭. ইবনে রুশদের ধারণা, গাজালি প্রমুখ দার্শনিকরা যারা আল্লাহর কর্মশক্তির উপর দৃঢ় আস্থা রাখেন। যদি কার্যকারণের নিয়মকে তাঁরা অস্বীকার করেন তবে তা দ্বারা আল্লাহরই গুরুত্বকে তাঁরা খাটো করে দেখেন। কারণ
আল্লাহর রাজ্যে নিয়ম শৃঙ্খলা নেই ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ইবনে রুশদ প্রায়োগিক অর্থে, অর্থাৎ জ্ঞানবিজ্ঞানের সাধনার ক্ষেত্রে কার্যকারণকে যেভাবে অস্বীকার না করার কথা বলেছেন তা অনেক ক্ষেত্রেই যথার্থ মনে হয়। ইমাম আল-গাজালি কার্যকারণ নিয়মকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেন নি, বরং তিনি এ নিয়মের ক্ষেত্রে সংশয় প্রকাশ করেছেন মাত্র। সুতরাং কার্যকারণ নিয়ম
সম্পর্কে ইবনে রুশদের অভিমত গুরুত্বপূর্ণ হলেও গাজালির মতকে আমরা অবহেলা করতে পারি না।