কার্যকারণ বলতে গাজালি কী বোঝেন?

অথবা, কার্যকারণ সম্পর্কে গাজালির মত লিখ।
অথবা, গাজালি কার্যকারণ সম্পর্কে কী মতবাদ দেন?
অথবা, কার্যকারণ সম্পর্কে গাজালির মতবাদ উল্লেখ কর।
অথবা, কার্যকারণ সম্পর্কে গাজালি কী বলেন?
উত্তর৷ ভূমিকা :
একাদশ শতকে ইসলাম ও মুসলিম জগতের এক চরম সংকটময় মুহূর্তে ইমাম আল-গাযালির আবির্ভাব ঘটে। একদিকে সমগ্র খ্রিস্টান ইউরোপে মুসলিম রাষ্ট্রশক্তিকে ধ্বংস করার জন্য কাজ শুরু করে। অন্যদিকে স্পেনের গৌরবোজ্জ্বল মুসলিম রাজশক্তিকে নস্যাৎ করার জন্য অগ্রসর হয়। এ চরম সন্ধিক্ষণে ইমাম আল-গাযালি লেখনী শক্তি ও প্রখর মেধাশক্তি দ্বারা ইসলামকে নব প্রাণরসে সঞ্জীবিত করেন।
কার্যকারণ সম্পর্কে গাযালি : দেহের পুনরুত্থানের বিরুদ্ধে দার্শনিকরা কর্যকারণ দেয়ায় গাযালি তাদের সেই কার্যকারণ বিষয়ক মতের তীব্র সমালোচনা করেন এবং তারই ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত করার প্রয়াস পান মরনোত্তর জীবনের সম্ভাবনাকে। জগতের বস্তু নির্ণয়ের কার্যকারণতত্ত্ব সম্পর্কে আল-গাযালি যে এক অভিনব মতবাদ উপস্থাপিত করেন
দার্শনিকদের কার্যকারণতত্ত্বের দুটি দিকের বিশ্লেষণ ও সমীক্ষণ দ্বারা। যেমন- প্রথমত, দার্শনিকদের মতে, কার্যকারণের সম্বন্ধ অনিবার্য ও আবশ্যিক। অর্থাৎ কারণ থাকলে কার্য থাকবে এবং কার্য সংঘটিত হলে বুঝতে হবে যে, এর অবশ্যই একটি কারণ আছে।
দ্বিতীয়ত, দার্শনিকরা মনে করেন যে, “কার্য ও কারণের মধ্যে সম্বন্ধ একের সঙ্গে একের সম্বন্ধ” অর্থাৎ তাদের মতে, একটি কার্যের একটি কারণ এবং একটি কারণের একটি কার্য থাকবে। আল গাযালি দার্শনিকদের এ ধারণা চ্যালেঞ্জ করেন। প্রথম ধারণা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কার্য ও কারণের মধ্যে কোন
বাধ্যতামূলক আবশ্যিকতা নেই। যেমন- আগুণ ও দাহিকা শক্তির সম্পর্ক কিংবা পানি পান ও পিপাসা নিবৃত্তির কথা। এসব সম্বন্ধের মধ্যে এমন কোন অনিবার্যতা লক্ষ্য করা যায় না। অর্থাৎ কার্য ও কারণের বেলায় আমাদের মন একটি ধারণা থেকে আর একটি ধারণার কোন অনিবার্যতা বা বাধ্যতা দ্বারা পরিচালিত হয় না। যেমন-আমরা এও ভাবতে পারি যে, আগুন
আছে ঠিকই কিন্তু সেই আগুন আর দহন করে না। এ ধরনের ঘটনা এখনও ঘটেনি, কিন্তু ঘটলে ও তা ভাবার মধ্রে কোন যৌক্তিক বাধা বা স্ববিরোধীতা নেই। দ্বিতীয় ধারণা প্রসঙ্গে গাযালি বলেন, দার্শনিকরা কার্যকারণের সম্বন্ধকে একের সঙ্গে একের সম্বন্ধ বলে মনে করেন তা ঠিক নয়। প্লেটোনীয় বিকিরণবাদের প্রতি অতিশয় আকর্ষণে বশবর্তী হয়েই তারা এ ভুল ধারণা পোষণ করেন। কারণ.জিনিসটি কোন এক ধর্মী বস্তু বা ঘটনা নয়। এটি এমন একটি মিশ্র জিনিস যার পিছনে কিছু নঞর্থক শর্ত কাজ করে। তাই কোন কারণের পূর্ণাঙ্গ প্রকৃতি জানতে হলে এ ধরনের সব শর্ত সম্পর্কে অবহিত হওয়া আবশ্যক। কোন একটি সহজ বস্তুর পেছনেও.অনেকগুলো জটিলতা রয়েছে। তাই একটি কার্য কোন একটি একক কারণ নয়। অনেক কারণ দ্বারা সংঘটিত হতে পারে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ইমাম আল-গাযালি যথেষ্ট বলিষ্ঠতার সাথে কার্যকারণ মতবাদের অনিবার্যতাকে
অস্বীকার করেছেন এবং নিজস্ব যুক্তির ও আল্লাহর প্রদত্ত ধারণার মাধ্যমে একে ঘটনার পারম্পর্য বলে উল্লেখ করেছেন।