অথবা, কাদারিয়া সম্প্রদায় কারা?
অথবা, মুসলিম দর্শনে কাদারিয়াদের পরিচয় দাও।
অথবা, কাদারিয়া সম্প্রদায় বলতে কাদের বুঝানো হয়।
অথবা, কাদারিয়া সম্প্রদায় সম্পর্কে যা জান সংক্ষিপ্তভাবে লিখ।
উত্তর৷ ভূমিকা : মুসলিম দর্শন কুরআন ও হাদিসের মর্মবাণী দ্বারা পরিচালিত হয়েছে। ইসলাম বিশ্বভ্রাতৃত্বের বাণীবাহক। মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ ও পার্থক্য সৃষ্টিতে ইসলাম গভীরভাবে ঘৃণা করে। পবিত্র কুরআনে বিভেদ সৃষ্টিকারীদের প্রতি কঠোর সতর্কবাণী উচ্চারিত হয়েছে। মহানবী (স) তিরোধানের পর মুসলমানদের মধ্যে বিভিন্ন মতাদর্শের উদ্ভব ঘটে এবং জনগণ কয়েকটি সম্প্রদায়ের বিভক্তি হয়ে পড়ে। এ সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে কাদারিয়া সম্প্রদায় অন্যতম।
কাদারিয়া সম্প্রদায় : কাদারিয়া শব্দটির উৎপত্তি আরবি ‘কদর’ শব্দ থেকে। ‘কদর’ শব্দের অর্থ হলো ক্ষমতা, শক্তি বা মর্যাদা। এটি আল্লাহর সর্বশক্তিমত্তা এবং জগতের সব কিছুরই পূর্ব নির্ধারণ বুঝায়। আবার এটি বলতে মানুষের ইচ্ছার স্বাধীনতাও বুঝায়`। ইসলামি চিন্তা জগতে যাঁরা বিশেষভাবে মানুষের ইচ্ছার স্বাধীনতায় বিশ্বাসী তাদেরকে কাদারিয়া বলা হয়। জাবারিয়া সম্প্রদায়ের মতামতের প্রতিক্রিয়াস্বরূপ কাদারিয়া সম্প্রদায়ের উদ্ভব ঘটে। উমাইয়া শাসনের শেষ প্রান্তে এ মতবাদের সূত্রপাত। বিশিষ্ট ধর্মতত্ত্ববিদ ইমাম-হাসান-আল বসরী মানুষের ইচ্ছার স্বাতন্ত্র্যে বিশ্বাসী ছিলেন এবং তিনিই কাদারিয়া চিন্তার বীজ বপন করেছিলেন। তাঁর শিষ্য মাবাদ-আল জুহানী উমাইয়া শাসকদের দুর্বৃত্ত ও পাপাচারী বলে অভিহিত করেন। ফলে খলিফা আব্দুল মালিকের নির্দেশে তাকে মৃত্যুবরণ করতে হয়। তার মৃত্যুর পর ইউনুস আলী আসওয়ারিও খিলান দামেস্কি কাদারিয়া সম্প্রদায়ের বিকাশের কাজে আত্মনিয়োগ করেন। মানুষের ইচ্ছার স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার জন্য মাবাদ আল জুহানীর মতো খিলান দামেস্কিকেও (মৃত্যু ৭২৯ খ্রি:) মৃত্যুবরণ করতে হয়। কিন্তু মানুষের চিন্ত ার বিপ্লবী পরিবর্তন কোনকালেই অস্ত্রবলে দমিত হয় নি। এখানেও তার ব্যতিক্রম ঘটে নি।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, কাদারিয়া সম্প্রদায়ের চিন্তাবিদরা অনেকটাই উগ্রপন্থি। কাদারিয়ারা মানুষকে শক্তি স্বাধীনতার স্বেচ্ছাচারিতা প্রদান করে আল্লাহর অপরিসীম শক্তি খর্ব করেন। তারা কুরআনের আয়াতসমূহকে তাদের মতবাদের সমর্থনে উপস্থাপিত করেছেন। সুতরাং কাদারিয়া সম্প্রদায়ের গুরুত্বকে অস্বীকার করা যায় না।