উত্তর:
ভূমিকা : শিল্পকারখানায় নিয়োজিত মনোবিজ্ঞানীদের প্রধান কাজ হলো কর্মচারী নির্বাচন। সঠিক কাজের জন্য সঠিক লোক নির্বাচন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কর্মচারী নির্বাচন প্রক্রিয়ার সাথে সম্পর্কিত বিষয় হচ্ছে ভাবী কর্মচারীর পেশাগত প্রবৃদ্ধি ও বিকাশ এর সুযোগ-সুবিধা। নির্বাচনের সময় স্থির করা দরকার যে, শুধু তাৎক্ষণিক শূন্য পদের জন্য ন্যূনতমস যোগ্যতা সম্পন্ন প্রার্থীদের নির্বাচন করা হবে না, বর্তমান দায়িত্ব ছাড়াও ভবিষ্যতে উচ্চতর দায়িত্ব পালন করে পারবে এরূপ প্রার্থীদের নির্বাচন করা হবে। তাই শিল্প ক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কর্মচারী নির্বাচন খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।
কর্মী বা কর্মচারী নির্বাচন : কর্মচারী বাছাই বা নির্বাচন বলতে বুঝায় কোনো বিশেষ কাজের জন্য দরখাস্তকারীদের মধ্য হতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক উপযুক্ত স্থানে নিয়োগ করা। শিল্পপ্রতিষ্ঠানে দক্ষতা, উৎপাদন বৃদ্ধি এবং কর্মসন্তুষ্টি বিধানের জন্য উপযুক্ত কাজে উপযুক্ত লোক নির্বাচন খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। কর্মচারী নির্বাচন এমন একটি পদ্ধতি, যার সাহায্যে সফলভাবে কার্যসম্পাদনের জন্য যথাযথ দক্ষতাসম্পন্ন প্রার্থীদের নিয়োগের উদ্দেশ্যে বাছাই করা হয়।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা : উইলিয়াম এফ. গুয়েক (William: F. Glueck)-এর মতে, “নির্বাচন হলো একদল আবেদনকারী থেকে যোগ্যতমকে বা যোগ্যতমদেরকে খুঁজে বের করার প্রক্রিয়া।”এস. পি. রবিন্স ও কালটার (S. P Robbins and Coulter)-এর মতে, “সবচেয়ে সঠিক প্রার্থী নিয়োগের নিশ্চয়তা বিধানের জন্য চাকরির আবেদনকারী বাছাইয়ের প্রক্রিয়াকে নির্বাচন বলে। “আর. এম. হাজেটস (R. M. Hodgetts)-এর মতে, “নির্বাচন হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া যাতে নিয়োগের জন্য প্রার্থীগণকে দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়। এর একটি হলো যাদেরকে নিয়োগ প্রস্তাব দেওয়া হবে এবং অন্যদলকে নিয়োগ দেওয়া হয় না।
মনোবিজ্ঞানী টিনা অ্যাপেল (Tina Aghel)-এর মতে, আবেদনকারীদের মধ্য থেকে যাদের নতুন কার্যে সাফল্য অর্জনের | সম্ভাবনা আছে, তাদের নির্বাচন করাকে কর্মচারী নির্বাচন বলে।”
মনোবিজ্ঞানী ডেল ইউডো (Dale Yoder) বলেন, “নির্বাচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চাকরির জন্য আগ্রহী প্রার্থীদেরকে দুটো শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। একটি হলো যাদেরকে চাকরি দেওয়া হবে এবং অন্যটি হলো যাদেরকে চাকরি দেওয়া হবে না।’
মনোবিজ্ঞানী উইরিচ ও কৃষ্ণে (Weihrich and Koontz)-এর মতে, “বর্তমান অথবা ভবিষ্যৎ পদ পূরণের জন্য প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তর বা বাইরের প্রার্থীদের মধ্যে থেকে সর্বাধিক উপযুক্ত প্রার্থী পছন্দ করার প্রক্রিয়াকে নির্বাচন বলে। “মনোবিদ এ. খালেক বলেন, “কর্মচারী নির্বাচন বলতে বুঝায়, কোনো বিশেষ কাজের জন্য দরখাস্তকারীদের মধ্য থেকে প্রয়োজনীয় সংখ্যক লোক খুঁজে বের করা এবং উপযুক্ত স্থানে উপযুক্ত ব্যক্তিকে নিয়োগ করা।উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, কোনো শিল্প বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য আবেদনকারীদের মধ্য থেকে যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিকে খুঁজে বের করে যথাযথ স্থানে সঠিক ব্যক্তিকে নিয়োগ করার প্রক্রিয়াকে কর্মচারী নির্বাচন বলে।
কর্মচারী নির্বাচনে সাক্ষাৎকার পদ্ধতি : সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী এবং সাক্ষাৎকার প্রদানকারী সামনা-সামনি বসে সরাসরি কথোপকথনের মাধ্যমে ব্যক্তির সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্যসংগ্রহ করার কৌশলকে সাক্ষাৎকার পদ্ধতি বলে। শিল্পকারখানায় কর্মচারী নির্ধারণের জন্য সাক্ষাৎকার পদ্ধতি একটি কার্যকরী পদ্ধতি। আধুনিক বিশ্বে শিল্পক্ষেত্রে শ্রমিক বা অন্যান্য শ্রেণির কর্মচারী নির্ধারণের জন্য বহু বৈজ্ঞানিক অভীক্ষার প্রচলন থাকলেও এগুলোর পাশাপাশি প্রায় সব শিল্পপ্রতিষ্ঠানেই সাক্ষাৎকার পদ্ধতির প্রচলন রয়েছে। শিল্পপ্রতিষ্ঠানে সাক্ষাৎকারের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে শ্রীগেল এবং জেমস ৮৫২টি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে জরিপ পরিচালনা করে দেখেন যে, শতকরা ১৮টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান কর্মচারী নির্বাচনের জন্য সাক্ষাৎকার পদ্ধতি ব্যবহার করেন। আমাদের দেশে প্রায় সব সেক্টরেই সাক্ষাৎকার পদ্ধতির প্রচলন রয়েছে। সাধারণ কর্মচারী, শ্রমিক নির্ধারণের জন্য এ পদ্ধতিই বেশি ব্যবহার করা হয়। সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীর আচরণ, সাক্ষাৎকার প্রদানকারীর আচরণকে অনেকাংশে প্রভাবিত করে। ভারপ্যাঙ্ক ও গ্রীনম্পুন (১৯৫৫) ভিন্ন ভিন্ন গবেষণায় সাক্ষাৎকার গ্রহীতা এবং সাক্ষাৎকারদাতার আচরণে পারস্পরিক প্রভাবের প্রমাণ পেয়েছেন। সাক্ষাৎকার প্রক্রিয়ায় আচরণের পারস্পরিক প্রভাব নিচের চিত্রে প্রদর্শিত হলো :
নির্বাচনি সাক্ষাৎকারের কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা লক্ষ করা যায় না। সাক্ষাৎকারের সময়সীমা সাধারণত নির্ভর করে শূন্য পদের সংখ্যা, বাস্তবিক আবেদনকারীর সংখ্যা, সাক্ষাৎকার পদ্ধতির ওপর নির্ধারিত গুরুত্ব, সাক্ষাৎকার গ্রহীতার ব্যক্তিত্ব, নৈপুণ্য এবং সাক্ষাৎকার গ্রহণের ধরনের ওপর। ডানিয়েল ও ওটিস (Daniels and Otis) তাদের গবেষণায় দেখতে পান সাধারণত সাক্ষাৎকারের গড় সময় ১০ মিনিট, যার ৫৭% সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীর এবং ৩০% সাক্ষাৎকার প্রদানকারীর কথাবার্তায় অতিক্রান্ত হয় এবং বাকি ১৩% সময় চুপচাপ কেটে যায়। নিচে সাক্ষাৎকার পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য, উদ্দেশ্য, সুবিধা এবং অসুবিধা আলোচনা করা হলো :
সাক্ষাৎকার পদ্ধতির বৈশিষ্ট্যসমূহ : নীচে সাক্ষাৎকার পদ্ধতির বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা করা হলো :
১.সাক্ষাৎকার ব্যক্তিদের মধ্যে তথ্য বের করার একটি
২.আন্তঃব্যক্তিক প্রক্রিয়া। এটি প্রকৃতপক্ষে একটি ভাষাগত পদ্ধতি ।
৩.এটি একটি গতিময় কৌশল ।
৪. এ পদ্ধতিতে সরাসরি আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে তথ্যের বিনিময় করা হয়।
৫.এ পদ্ধতিতে তথ্যসংগ্রহের ক্ষেত্রে ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে সরাসরি সংযোগ সৃষ্টি হয়।
৬.সাক্ষাৎকার প্রদানকারী কর্তৃক প্রদত্ত তথ্য সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী লিপিবদ্ধ করেন।
৭. এ পদ্ধতিতে খুব কম সময়ে প্রার্থী নির্বাচন করা যায় ।
৮. এ পদ্ধতিতে ব্যক্তির মনোভাব এবং আচরণকে অনেকটা পর্যবেক্ষণ করা যায়।
সাক্ষাৎকার পদ্ধতির উদ্দেশ্যসমূহ : শিল্পপ্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন উদ্দেশ্যে কর্মচারী নির্বাচনের জন্য সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়। নিচে সাক্ষাৎকারের প্রধান উদ্দেশ্যসমূহ উল্লেখ করা হলো :
১. নির্বাচন সংস্থাপন, পদোন্নতি এবং বদলির ক্ষেত্রে সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়।
২.. চাকরি এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে আবেদনকারীর মনোভাব জানার জন্য সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়। এ ধরনের সাক্ষাৎকারকে মনোভাব সাক্ষাৎকার বলা হয়।
৩.কর্মচারীদের ব্যক্তিগত এবং পেশাগত সমস্যা সম্বন্ধে তথ্যসংগ্রহ করার জন্য এবং ঐসব সমস্যাগুলো সমাধান কল্পে পরামর্শদানের উদ্দেশ্যে অনেক সময় সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়।
৪. কোনো বিশেষ কাজে অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানার জন্য সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়। ৫. কোনো কঠিন এবং সংকটাপূর্ণ পরিস্থিতি প্রার্থী কীভাবে মোকাবিলা করে তা দেখার জন্য সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়।
৬. সংশ্লিষ্ট কাজের জন্য প্রার্থী কতটা উপযুক্ত তা যাচাই করার উদ্দেশ্যে সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়।
সাক্ষাৎকার পদ্ধতির সুবিধাসমূহ : কর্মচারী নির্বাচনে সাক্ষাৎকার পদ্ধতি খুবই আলোচিত একটি পদ্ধতি। এ পদ্ধতির যেসব সুবিধা রয়েছে তা নিচে বর্ণনা করা হলো :
১. অধিকতর নমনীয় : সাক্ষাৎকারে তথ্যসংগ্রহের ক্ষেত্রে নমনীয়তা দেখা যায় এবং এটি একটি সহজ পদ্ধতি। অর্থাৎ প্রশ্নকর্তা ইচ্ছা করলে বার বার প্রশ্ন করার মাধ্যমে সঠিক উত্তরটি বের করতে পারেন।
২. বাস্তব আচরণের সমন্বন : এ পদ্ধতিতে সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী এবং প্রদানকারীর মধ্যে সরাসরি কথোপকথন হয়, যার কারণে সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী আবেদনকারীর দোষ-গুণ সরাসরি পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। অর্থাৎ এখানে দু’জনের মধ্যে আচরণের বাস্তব সমন্বয় ঘটে।
৩. অধিক পরিমাণ উত্তর লাভ : সাক্ষাৎকার পদ্ধতিটি মৌখিক হওয়াতে ভাষার সাহায্যে উত্তরদাতা তুলনামূলকভাবে অধিক পরিমাণে তথ্য সরবরাহ করতে পারেন, যা ডাক বা অন্যান্য মাধ্যমে বা পদ্ধতি দ্বারা সম্ভব নয়।
৪. সত্যতা যাচাই : সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে আবেদনপত্র এবং সুপারিশ পত্রের সাহায্যে প্রাপ্ত তথ্যের সত্যতা যাচাই করা যায়।
৫. প্রশ্নের ধারাবাহিকতা রক্ষা : প্রশ্নপত্রে বিন্যাসকৃত প্রশ্নমালার পর্যায়ক্রমিকতা রক্ষা করা এখানে সফলভাবে সম্ভব।
৬. সাক্ষাৎদাতা নিজেই উত্তর দিতে পারে : উত্তরদাতার নিকট হতে সরাসরি তথ্য সংগৃহীত হওয়ায় সে অন্য কারো | সাহায্যে উত্তর প্রদান করে প্রতারণা করার সুযোগ পায় না।
৭. পরিপূর্ণ সাক্ষাৎকার : সাক্ষাৎকারে ব্যবহৃত প্রশ্নমালা সঠিকভাবে ব্যবহার করার কারণে প্রত্যাশিত সব প্রশ্নের উত্তর লাভ করা যায় ।
৮. সময়ানুবর্তিতা : সাক্ষাৎকারের স্থান এবং সময় সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ করা যায় বলে সময়ের পার্থক্যের কারণে উত্তরদাতার আচরণগত যেকোনো পরিবর্তন প্রয়োজন হলে তুলে ধরা যায়।
৯. পরিবেশগত নিয়ন্ত্রণ : সাক্ষাৎকারের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরিতে সাক্ষাৎকার গ্রহীতার যথেষ্ট ভূমিকা থাকে। ব্যক্তিগত সম্পর্ক স্থাপন, গোলমালপূর্ণ স্থান পরিত্যাগ, গোপনীয়তা রক্ষা, নিশ্চয়তা প্রদান এবং কাঠামোবদ্ধ প্রশ্ন ব্যবহারের মাধ্যমে অধিকতর নিয়ন্ত্রিত পরিবেশ তৈরি করার সুযোগ এখানে রয়েছে।
সাক্ষাৎকার পদ্ধতির অসুবিধাসমূহ : সাক্ষাৎকার পদ্ধতির কিছু সুবিধা যেমন রয়েছে, তেমনি কিছু অসুবিধাও এর রয়েছে। এ পদ্ধতির অসুবিধাসমূহ নিচে বর্ণনা করা হলো :
১. মৌখিক উত্তরের যথার্থতা নিরূপণ করা কঠিন : সাক্ষাৎকার একটি বাচনিক কৌশল তাই এ পদ্ধতি সাক্ষাৎকার প্রদানকারীর উত্তরের ওপর নির্ভরশীল এবং এক্ষেত্রে কথা বলাবলির মাধ্যমে তথ্যসংগ্রহ করা হয়। এ ধরনের তথ্যের যথার্থতা নির্ণয় করা খুবই জটিল ব্যাপার।
২. উপাত্তের নির্ভরযোগ্যতা কম : সাক্ষাৎকার, বিশেষ করে অকাঠামোবদ্ধ সাক্ষাৎকার একটি নমনীয় এবং সহজ ও মুক্ত আলোচনা। এ কারণে একটি সাক্ষাৎকার ঠিক একই রকমভাবে পরিচালনা করে একই রকম ফলাফল পাওয়া কষ্টকর। মনোবিজ্ঞানী রাইট, সেফিল্ড, স্মিথ, ওয়াগনার প্রমুখ সাক্ষাৎকার পদ্ধতির ওপর গবেষণা করে নানা প্রকার ফল পেয়েছেন। মনোবিজ্ঞানী ল্যান্ডি ও ট্রম্বো সাক্ষাৎকার পদ্ধতির নির্ভরযোগ্যতা সম্পর্কিত গবেষণা পর্যবেক্ষণ বা বিশ্লেষণ করে বলেন, এ পদ্ধতি হতে প্রাপ্ত তথ্যের নির্ভরযোগ্যতা খুবই কম।
৩. সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীর পরিবর্তনশীল মনোভাব : সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীর সংবেদনশীলতা, মনোভাব এবং অন্যান্য মানসিক অবস্থা সর্বদা এক রকম থাকে না। এক সাক্ষাৎকারের সময় হতে অন্য সাক্ষাৎকারের সময় মনোভাবের পরিবর্তন হতে পারে। তিনি তার ক্ষণিক মেজাজের ভিত্তিতে একই রকমের উত্তর নানা সময়ে নানাভাবে লিখে নিতে পারেন। এ কারণে সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী নিজেই পরিবর্তনশীলতার মূল হতে পারেন।
৪. সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীদের মধ্যে পার্থক্য : যখন কোনো গবেষণায় একাধিক সাক্ষাৎকার গ্রহীতা থাকে, তখন সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীর পক্ষপাতিত্ব, পূর্বসংস্কার এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্যের প্রভাব কমানো গেলেও অন্য অভ্যন্তরীণ সমস্যা পরিলক্ষিত হতে পারে। কারণ একজন সাক্ষাৎকারগ্রহীতা অন্য একজন হতে সম্পূর্ণ পৃথক ব্যক্তি। তাদের মনোভাব, প্রত্যক্ষণ, দৃষ্টিভঙ্গি প্রভৃতি পৃথক হওয়ায় তাদের সাক্ষাৎকারের ফলাফলও পৃথক হবে। তবে অকাঠামোবদ্ধ সাক্ষাৎকারের ক্ষেত্রে এটি অধিক গ্রহণীয়।
৫. তথ্য লিপিবদ্ধকরণ : সাক্ষাৎকার একটি বাচনিক কৌশল হওয়ায় মৌখিক কথাসর্বস্ব তথ্য লিপিবদ্ধ করার নানাবিধ অসুবিধা রয়েছে। আলাপ-আলোচনা চলার সময় কিছু লিপিবন্ধ – করলে তা বাধাগ্রস্ত হয়। অন্যদিকে, সাক্ষাৎকার প্রদানকারীর তথ্য লিপিবদ্ধ না করলে পরে ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৬. ব্যয়বহুল : সাক্ষাৎকার একটি ব্যয়বহুল তথ্যসংগ্রহ পদ্ধতি। কারণ কর্মী নির্বাচনের ক্ষেত্রে এ পদ্ধতির আয়োজন করতে হলে অনেক অর্থের দরকার হয়, যা বহন করতে হয় নিয়োগকারীকেই। তবে আজকাল আবেদনকারীর নিকট হতেও বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে আবেদনের সাথে অর্থ নেওয়া হচ্ছে।
৭. সময়সাপেক্ষ : ডাক প্রশ্নপত্রের তুলনায় সাক্ষাৎকার একটি সময়সাপেক্ষ তথ্যসংগ্রহ পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে তথ্যসংগ্রহ করতে হলে প্রার্থীকে আহ্বান, চিঠি প্রদান, যাওয়া-আসা বিভিন্ন বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখতে হয়, যা সময়সাপেক্ষ বিষয়।
৮. আত্মগোপনের সুযোগের অভাব : কিছু কিছু সময় উত্তরদাতা নিজের নাম, পরিচয় এবং আপত্তিকর প্রশ্নের উত্তর গোপনে প্রদান করতে চায়। ডাক প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে এর কিছুটা সুযোগ-সুবিধা থাকলেও সাক্ষাৎকার পদ্ধতিতে উত্তরদাতার এ ধরনের সুযোগ থাকে না ।
৯. পক্ষপাত : সাক্ষাৎকার পদ্ধতি সরাসরি হয় বলে পরীক্ষক এবং সাক্ষাৎপ্রার্থী উভয় দিক হতে পক্ষপাত আসতে পারে। যেমন- সাক্ষাৎকারপ্রার্থী সাক্ষাৎকার গ্রহীতার অঙ্গভঙ্গি থেকে প্রশ্নের সঠিক উত্তর খুঁজে পেতে পারে।
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়। যে, কিছু অসুবিধা থাকলেও এ পদ্ধতিটি কর্মী নির্বাচনের ক্ষেত্রে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী যতটা চৌকশ হবে, ততটা যোগ্য কর্মী নির্বাচিত হবে। সাক্ষাৎকার পদ্ধতি পক্ষপাতমুক্ত হলে সেক্ষেত্রে যোগ্য প্রার্থী নির্বাচন করা সহজ হয়। সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী যদি অধিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয় এবং বাইরের কোনো দল যদি সাক্ষাৎকার পদ্ধতিকে প্রভাবিত করতে না পারে, তাহলে সঠিক তথ্য পাওয়া এবং যোগ্য প্রার্থী নির্বাচন করা সম্ভব, তা না হলে সম্ভব নয় ।