ভূমিকা:কর্মী নির্বাচনের পদ্ধতিগুলো দেশের ব্যবস্থানিক সংস্থানের নীতি এবং নীতিমালা অনুযায়ী পরিবর্তন করতে পারে, তবে সাধারণভাবে কর্মী নির্বাচনের পদ্ধতি নিম্নলিখিত উপায়ে সম্পাদন করা হতে পারে:
লেখিত পরীক্ষা: প্রাথমিক নির্বাচনের একটি পরীক্ষা অনুষ্ঠান করা হতে পারে, যেখানে প্রাথমিক প্রশ্ন, সাধারণ জ্ঞান, এবং আবশ্যিক পেপারের সেকশন থাকে।
মৌখিক পরীক্ষা: কিছু সময় পরে, লেখিত পরীক্ষার পাশে মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠান করা হতে পারে, যেখানে উম্মুক্ত প্রশ্ন এবং দক্ষতা পরীক্ষা হয়।
সাক্ষরিক মূল্যায়ন: কিছু সরকারি সংস্থানে কর্মী নির্বাচনের জন্য সাক্ষরিক মূল্যায়ন প্রদান করতে পারে, যেখানে কর্মীর উপযোগীতা এবং দক্ষতা মূল্যায়ন করা হয়।
বাণিজ্যিক পদ্ধতি: কিছু প্রাইভেট কোম্পানি কর্মী নিয়োগের জন্য বাণিজ্যিক পদ্ধতি অনুসরণ করে, যেখানে চাকরীর জন্য আবেদন দাখিল করতে হয় এবং উপযোগী উম্মুক্ত অপসারণ পেতে হয়।
ব্যক্তিগত সাক্ষরিক মূল্যায়ন: কিছু স্থানীয় সরকার বা প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান কর্মী নিয়োগের জন্য ব্যক্তিগত সাক্ষরিক মূল্যায়ন প্রদান করতে পারে, যেখানে সর্বশেষ প্রশ্ন এবং দক্ষতা মূল্যায়ন হয়।
উল্লিখিত পদ্ধতিগুলি কর্মী নির্বাচনে ব্যবহৃত সাধারণ পদ্ধতিগুলি হতে পারে, তবে নির্বাচনের পদ্ধতি দেশ, সংস্থা এবং চাকরীর স্বাভাবিক ধরনের উপর নির্ভর করে।
কর্মী বা কর্মচারী নির্বাচনের পদ্ধতিসমূহ : ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান, শিল্পকারখানায় এবং প্রশাসনিক সংস্থায় কর্মচারী বা কর্মী নির্বাচনের জন্য নানা প্রকার নির্বাচন কৌশল বা পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সেগুলো হচ্ছে- (১) সাক্ষাৎকার পদ্ধতি, (২) আবেদনপত্র পদ্ধতি, (৩) সুপারিশ বা প্রশংসাপত্র এবং (৪) মনোবৈজ্ঞানিক অভীক্ষা। মনোবৈজ্ঞানিক অভীক্ষা আবার কয়েক প্রকার। যেমন- বুদ্ধি অভীক্ষা, কৃতি অভীক্ষা, আগ্রহ অভীক্ষা, প্রবণতা অভীক্ষা, পেশাগত প্রবণতা অভীক্ষা এবং ব্যক্তিত্ব অভীক্ষা। ব্যক্তিত্ব অভীক্ষা আবার দুই ভাগে বিভক্ত। যথা : (ক) ক্যালিফোর্নিয়া মনস্তাত্ত্বিক ইনভেন্টরি ও (খ) প্রক্ষেপণ অভীক্ষা। উপরিউক্ত পদ্ধতিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি বা কৌশল হলো সাক্ষাৎকার পদ্ধতি।
কর্মী নির্বাচনের ব্যবহৃত প্রক্ষেপণ বা অভিক্ষেপণ পদ্ধতি : প্রক্ষেপণ পদ্ধতির মাধ্যমে কর্মীর ব্যক্তিত্বকে পরোক্ষভাবে পরিমাপ করা হয়। এই পদ্ধতিতে ব্যক্তিকে একটি অসংগঠিত, অস্পষ্ট, অনির্দিষ্ট উদ্দীপকের সামনাসামনি হাজির করা হয়। এতে ব্যক্তিকে কতকগুলো কালির ছাপ প্রদর্শন করানো হয় এবং তার ওপর মন্তব্য করতে বলা হয়। তাছাড়া কতকগুলো অস্পষ্ট এবং অসম্পূর্ণ ছবি দেখিয়ে গল্প রচনা করতে বলা হয়। এর প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই ব্যক্তি উপস্থিত বিষয়গুলোকে নিজের মনের মত করে সংগঠিত করে ঐ বিষয় সম্পর্কে তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। প্রক্ষেপণ পদ্ধতিগুলোর মধ্যে রয়েছে রোশাক কালির ছাপ অভীক্ষা এবং কাহিনি সংপ্রত্যক্ষণ অভীক্ষা। নিচে এই দুটি অভীক্ষা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
ক. রোশাক কালির ছাপ অভীক্ষা : সুইজারল্যান্ডের মনোচিকিৎসক হারম্যান রোশাক ১৯২১ সালে এই অভীক্ষাটি তৈরি করেন। নানা প্রকৃতি ও রঙের ১০টি কালির ছাপ বিশিষ্ট কার্ড নিয়ে এ অভীক্ষাটি গঠিত। উদ্ভাবকের নামানুসারে এই অভীক্ষাটি রোশাক কালির ছাপ অভীক্ষা নামে পরিচিতি। রোশাক অভীক্ষার ১০টি কালির ছাপের মধ্যে ৫টি কালো ও ধূসর বর্ণের, ২টি কালো ও লাল বর্ণের, এবং বাকি তিনটি অন্যান্য বর্ণের। কার্ডগুলো ১ হতে ১০ পর্যন্ত সংখ্যা দ্বারা চিহ্নিত। কার্ডগুলোর কালির ছাপ প্রকৃতপক্ষে অর্থহীন, কিন্তু এমন প্রকৃতির যে সেগুলোকে যেমন খুশি তেমনভাবে প্রত্যক্ষণ করা যায়। পরীক্ষণপাত্রকে এক একটি করে কার্ড দেওয়া হয় এবং কার্ডে সে কি দেখেছে তা বলতে বলা হয়। কার্ডগুলো দেখার সময় পরীক্ষণপাত্র যতক্ষণ খুশি এবং যেভাবে ইচ্ছা দেখতে পারে। তবে প্রতিটি কার্ড দেখতে কতক্ষণ সময় লাগে তা লিপিবদ্ধ করা হয়। এভাবে পরীক্ষণপাত্রকে ১০টি কার্ড দেখানো শেষ হলে তাকে দ্বিতীয়বার কার্ডগুলো দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় এবং কার্ডের কোন কোন অংশ দেখেছে তা নির্দেশ করতে বলা হয়। পরীক্ষণপাত্রের উত্তরসমূহ তিনটি বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হয়। যথা :
১. পরীক্ষণপাত্র সমগ্র ছবিটি বর্ণনা করেছে, না কি ছবিটির অংশবিশেষ বর্ণনা করেছে : কোনো ব্যক্তি যদি সম্পূর্ণ ছবির ওপর গুরুত্ব দিয়ে থাকে, তাহলে বুঝা যাবে, সে বিমূর্ত চিন্তা ও তাত্ত্বিক জ্ঞান পছন্দ করে। আর যদি সে অংশবিশেষের ওপর গুরুত্ব প্রদান করে থাকে, তাহলে বুঝা যাবে, সে খুঁটিনাটি বা সামান্য বিষয় নিয়ে ব্যস্ত থাকতে ভালোবাসে।
২. ছবির আকৃতি, রং বা অন্যকিছুর দ্বারা তার প্রতিক্রিয়া প্রভাবিত হয়েছে কি না : কোনো ব্যক্তি যদি ছবির রংয়ের উপর অধিক গুরুত্ব প্রদান করে, তাহলে বুঝতে হবে তার মধ্যে অসংযত আবেগ রয়েছে। কিন্তু সে যদি রং এবং আকৃতি উভয়ের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে তাহলে বুঝা যাবে, তার আবেগের প্রকৃতি বা ধরন অবাধ এবং সাবলীল।
৩. পরীক্ষণপাত্র এ ছবিগুলোকে কি হিসেবে দেখেছে : ব্যক্তি যদি মানুষের ছবি বা গতিশীল মানুষের ছবি দেখে থাকে, তবে তার অধিক বুদ্ধির পরিচয় পাওয়া যাবে। আর যদি সে জীবজন্তুর ছবি দেখে থাকে, তবে বুঝা যাবে তার চিন্তার পরিধি খুবই সীমিত।
খ. কাহিনি সংগ্রতাক্ষণ অভীক্ষা : ১৯৩৫ আমেরিকান মনোবিজ্ঞানী মারে (Murry) ও মর্গান (Morgan) সর্বপ্রথম কাহিনি সংপ্রত্যক্ষণ অভীক্ষা উদ্ভাবন করেন। অভীক্ষায় মোট ২০টি কার্ড থাকে। এর মধ্যে ১৯টি কার্ড ছবিযুক্ত এবং বাকি একটি কার্ড শুধু ফাঁকা বা সাদা থাকে। পরীক্ষণপাত্রকে এ অভীক্ষায় প্রতিটি ছবিযুক্ত কার্ড দেখে একটি কাহিনি রচনা করতে বলা হয়। কাহিনি লেখার ধারা হবে ছবিটিতে কি দেখা যাচ্ছে, কি ঘটেছে, ছবিতে লোকগুলো কি ভাবছে, কীভাবে কাহিনি সৃষ্টি হয়েছিল এবং এর পরিণতি কি হবে। পরীক্ষণপার প্রতিটি ছবি থেকে একটি করে গল্প বা কাহিনি লেখার পর তাকে ফাঁকা বা সাদা কার্ডটি দেওয়া হয়। পরীক্ষণপাত্রকে সাদা কার্ডে একটি ছবি কল্পনা করে নিয়ে সে সম্পর্কে তাকে একটি কাহিনি লিখতে বলা হয়।
পরীক্ষক গল্পের মূল বিষয়বস্তু আবিষ্কার করার চেষ্টা করেন এবং তা থেকে ব্যক্তির অভ্যন্তরীণ প্রেষণা ও দ্বন্দ্বসমূহ অনুসন্ধান করেন। পরীক্ষণপাত্র ছবিগুলো দেখে যেসব গল্প রচনা করে, তার সাহায্যে পরীক্ষক পরীক্ষণপাত্রের ইচ্ছা, আশা-আকাঙ্ক্ষা, প্রেষণা, মনোভাব, কল্পনাশক্তি, আবেগ, প্রত্যক্ষণ, দৃষ্টিশক্তি প্রভৃতি বিষয় জানার চেষ্টা করেন এবং এর মাধ্যমে ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব নির্ণয় করেন। পরীক্ষণপাত্রের গল্প বা কাহিনিগুলোতে নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলো লক্ষ করে ব্যক্তিত্বের সাফল্যাঙ্ক নির্ণয় করা হয় :
১.গল্পের প্রকৃতি, দৈর্ঘ্য, ভাষা, বিষয়বস্তু, বৈচিত্র্য,মৌলিকতা, সংগঠন ক্ষমতা প্রভৃতি ।
২.গল্পের মূল বক্তব্য, ব্যর্থতা, দ্বন্দ্ব ইত্যাদি।
৩. একাত্মীকরণ, নায়ক নির্বাচন প্রভৃতি ।
৪. কর্তৃত্বসম্পন্ন ব্যক্তি এবং যৌনতা সম্পর্কে ব্যক্তির প্রতিক্রিয়া।
৫. গল্পের উপসংহারের সঙ্গে অন্যান্য অংশের সম্পর্ক।
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়। যে, প্রক্ষেপণমূলক অভীক্ষার ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ অপেক্ষাকৃত কঠিন কাজ হলেও এতে ব্যক্তির অভ্যন্তরীণ অবস্থা সম্পর্কে বাস্তব জ্ঞান লাভ করা যায়। এছাড়া এতে অভীক্ষার্থী মিথ্যা, দুর্নীতি, এবং ছলচাতুরীর আশ্রয় নিতে পারে না। তাই কর্মী নির্বাচনের ক্ষেত্রে এর ব্যবহার সকলের নিকট সমাদৃত। অতএব বলা যায়, ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব নির্ণয়ের ক্ষেত্রে প্রক্ষেপণমূলক অভীক্ষা খুবই গুরুত্ব বহন করে।