কয়েকদিনের ভিতরেই সে পৃথিবীর বহু পুরাতন ব্যবসাটির এই প্রকাশ্যতম বিভাগের আইনকানুন সব শিখিয়া ফেলিল।”— এ বাক্যে লেখক কী বুঝিয়েছেন?

উত্তর : উদ্ধৃত গদ্যাংশটুকু ত্রিশোত্তর বাংলা সাহিত্যের অন্যতম রূপকার মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় বিরচিত ‘প্রাগৈতিহাসিক’ শীর্ষক ছোটগল্প থেকে চয়ন করা হয়েছে। দুর্ধর্ষ ডাকাত ভিখু কীভাবে ভিক্ষাবৃত্তি পেশায় অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিল তা এখানে বিবৃত করা ডাকাতি করতে গিয়ে ডান কাঁধে বর্শার খোঁচা খেয়ে ভিখু তার ডান হাতটি হারিয়ে পঙ্গু হয়ে যায়। শারীরিক অক্ষমতার কারণে তার পক্ষে আর ডাকাতি করা সম্ভব হয় না। পেহ্লাদের ঘরে আগুন দিয়ে নদীর ঘাট থেকে নৌকা নিয়ে ভিখু নিরুদ্দেশের পথে পাড়ি জমায়। নৌকাটি ভাসতে ভাসতে পরদিন মহকুমা শহরের নিকটবর্তী বাজারের ঘাটে এসে ভিড়ে। নৌকা থেকে নেমে ভিখু নদীর জলে গায়ের ধুলোবালি ও রক্ত মুছে পরিষ্কার করে। তখন তার পেটে প্রচণ্ড ক্ষুধা। পকেটে পয়সা নেই। কোথায় কার কাছে খাবার পাবে তারও কোন নিশ্চয়তা নেই। ক্ষুধার যন্ত্রণায় কাতর ভিখু ধীরে ধীরে রাস্তায় গিয়ে দাঁড়ায়। বাজারের রাস্তায় প্রথম যে ভদ্রলোকটির সাথে তার দেখা হলো তারই সামনে হাত পেতে সে পয়সা চাইল। তার মাথায় জটবাঁধা চাপ চাপ রুক্ষ ধূসর চুল, কোমরে জড়ানো ময়লা ছেঁড়া ন্যাকড়া, আর দড়ির মত দোদুল্যমান পঙ্গু ডান হাতটি দেখে ভদ্রলোকের দয়া হলো। তিনি তাকে একটা পয়সা দিলেন। এক পয়সা দেয়ার জন্য লোকটার উপর ভিখুর রাগ হয়েছিল। কিন্তু কোনক্রমে রাগ সামলে পয়সাটা দিয়ে মুড়ি কিনে গোগ্রাসে খেতে লাগল। এভাবে তার ভিক্ষাবৃত্তির হাতেখড়ি হলো। কয়েকদিনের মধ্যেই সে পৃথিবীর এই বহু পুরাতন ব্যবসাটির আইনকানুন শিখে ফেলল। মানুষ অভ্যাসের দাস । ভিখুও দায়ে পড়ে ভিক্ষাবৃত্তিতে অভ্যস্ত হয়ে গেল। অতি অল্পদিনের মধ্যে সে জাত ভিখারীতে পরিণত হলো।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%97%e0%a7%88%e0%a6%a4%e0%a6%bf%e0%a6%b9%e0%a6%be%e0%a6%b8%e0%a6%bf%e0%a6%95-%e0%a6%97%e0%a6%b2%e0%a7%8d%e0%a6%aa-%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%a8%e0%a6%bf/