কেন্দ্রীয় প্রবণতার ছোট প্রশ্নের উত্তর পেতে এখানে ক্লিক করুন
ভুমিকাঃ ইতোমধ্যেই আপনারা পরিসংখ্যানের ধারণা এবং উপাত্ত উপস্থাপনের বিভিন্ন কৌশল সম্পর্কে বিস্তারিত জেনেছেন। এ ইউনিটে আপনি কেন্দ্রীয় প্রবণতা এবং এর পরিমাপ সম্পর্কে ধারণা লাভ করবেন। তথ্যবিশ্বের উপাদানের কোন বৈশিষ্ট্যের জন্য নমুনা চয়ন করার পর মানগুলোকে বিশেষভাবে লক্ষ্য করলে দেখবেন যে, এদের একটি সংখ্যার খুব কাছাকাছি থাকার প্রবণতা আছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্রীয় প্রবণতা বলে। এরূপক্ষেত্রে যে মানের খুব নিকটবর্তী অন্যান্য মানগুলো বিদ্যমান থাকে তাকে
কেন্দ্রীয় মান বলে। কেন্দ্রীয় প্রবণতার প্রধান পরিমাপকগুলো হলো গড় (গবধহ), মধ্যক (গবফরধহ) এবং প্রচুরক (গড়ফব)। পরিসংখ্যানে এসব পরিমাপক নির্ণয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ ইউনিটে বিভিন্ন পাঠে বিভিন্ন ধরনের গড়, মধ্যক ও প্রচুরক কী, কীভাবে এদের নির্ণয় করা হয় এবং এদের পারস্পরিক
সম্পর্ক নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় প্রবণতা: কেন্দ্রীয় প্রবণতা পরিসংখ্যানের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। কেন্দ্রীয় প্রবণতাকে সংজ্ঞায়িত করার পূর্বে আসুন এ বিষয়ে একটি উদাহরণ নিয়ে আলোচনা করি। মনে করুন আপনি কোন একটি এলাকায় চাষকৃত বিভিন্ন কৃষকের জমিতে ইজ৩ ধানের ফলন কত তা সংগ্রহ করলেন। এখন যদি
আপনাকে কেহ প্রশ্ন করে যে, ঐ এলাকায় ইজ৩ ধানের গড় ফলন কত? তখন আপনি নিশ্চয় এমন একটি সংখ্যা বলবেন ঐ এলাকায় চাষকৃত সকল কৃষকের জমিতে ইজ৩ এর ফলনের কাছাকাছি একটি মান হবে। অর্থাৎ ঐ নির্দিষ্ট মানটি ঐ এলাকায় সকল কৃষকের জমিতে ইজ৩ ধানের ফলনের প্রতিনিধিত্ব করছে যার মাধ্যমে ঐ এলাকায় ইজ৩ ধানের ফলন সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে সকল কৃষকের জমিতে প্রাপ্ত ফসল সংখ্যা যারা একটি নির্দিষ্ট মানের দিকে পুঞ্জিভূত হবার প্রবণতা
দেখায় তাই হলো কেন্দ্রীয় প্রবণতা। আমাদের জীবনযাত্রা, পরিকল্পনা গ্রহণ ইত্যাদি কাজে আমরা কেন্দ্রীয় প্রবণতা ব্যবহার করে থাকি। যেমন- গড় ফলন, গড় বয়স, গড় আয় ইত্যাদি। এসকল তথ্যসমূহের যথার্থ বিশ্লেষণের জন্য সংখ্যাগত বিশ্লেষণ জানা প্রয়োজন। কেননা, সংখ্যাগত বিশ্লেষণ জানতে পারলে আপনি তথ্যরাশিকে একটি প্রতিনিধিত্বমূলক সংখ্যা দ্বারা প্রকাশ করতে সক্ষম হবেন। প্রতিনিধিত্বশীল সংখ্যা বের করতে পারলে বিভিন্ন তথ্যসারির তুলনামূলক আলোচনা করা এবং
সিদ্ধান্ত গ্রহণ সম্ভব হবে।
কেন্দ্রীয় প্রবণতার অর্থ হল কেন্দ্রের দিকে যাওয়ার ঝোক। একগুচ্ছ স্কোরে পৃথক মানের স্কোর থাকলে তাদের ভরকেন্দ্র যাওয়ার ঝোঁক বা প্রবণতা থাকে। এটাই হলো কেন্দ্রীয় প্রবণতা। অর্থাৎ যে সমস্ত বন্টনের প্রতিনিধি স্বরূপ কাজ করে। কেন্দ্রীয় প্রবণতা বা কেন্দ্রীয় অবস্থানের সূচক একটি বন্টনের বিভিন্ন স্কোরের মধ্যে পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও তাদের মাঝামাঝি যাওয়ার একটি প্রবণতা থাকে।
কোন ডাটাকে একটি সংখ্যা বা সামারি স্ট্যাটিসটিকের ( summary statistic ) মাধ্যমে প্রকাশ করতে পারলে বেশ সুবিধা । ডাটাকে আমরা যদি চিত্রের মাধ্যমে দেখাই ( যেমন হিস্টোগ্রাম ) তাহলে দেখতে পাই যে সংখ্যাগুলো কোনো একটি বিশেষ সংখ্যার দিকে ঝুঁকে পড়ে । ডাটার এই বৈশিষ্ট্যকে কেন্দ্রীয় প্রবণতা ( Central tendency ) বলে।
উপসংহার: যোজিত গড়, গুণিতক গড়, উল্টন গড়, মধ্যক ও প্রচুরক এর মধ্যে কিছু কিছু ক্ষেত্রে মিল আবার অমিলও রয়েছে। কেন্দ্রীয় প্রবণতা পরিমাপের যে তিনটি অতীব প্রয়োজনীয় গড় আছে এদের মধ্যে যোজিত গড় (A), গুণিতক গড় (G), এবং উল্টন গড় (H) প্রধান। এ গড় তিনটির মধ্যে সম্পর্ককে অ এ ঐ দ্বারা প্রকাশ করা যায়। প্রতিটি গড়ই কেন্দ্রীয় প্রবণতা পরিমাপককে বহুলভাবে সাহায্য করে বলে, বিবিধ পরিমাপকে এদের বহুল ব্যবহার হয়ে থাকে।