
অথবা, দাম বৈষম্যের কারণসমূহ আলোচনা কর।
উত্তর: একচেটিয়া কারবারি বৈষম্যমূলক দাম নীতি অবলম্বন করতে চাইলে সব সময় তার জন্য তা সম্ভবপর হয় না। দাম বৈষম্যকরণের কারণসমূহ নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
১. দ্রব্যের প্রকৃতি: দ্রব্য সামগ্রিক আকার ও প্রকৃতির উপর দাম বৈষম্য অনেকাংশে নির্ভর করে। ভারি ও ভঙ্গুর দ্রব্য সামমি এক বাজার থেকে অন্য বাজারে স্থানান্তর করা যায় না। এক্ষেত্রে দাম বৈষম্যকরণ সম্ভব হয়।
২. কোটা বা শুল্ক: বিভিন্ন বাজারে কোটা বা শুল্ক প্রাচীর থাকলে সেক্ষেত্রে দাম বৈষম্যকরণ সম্ভব হয়। যেমন- বাংলাদেশের তৈরি পোশাক যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ক্ষেত্রে কোটা নির্ধারণ করে দেয়া হয়। এমতাবস্থায় চীন তৈরি পোশাক রপ্তানিতে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বেশি দাম ও অন্যান্য বাজারে কম দাম ধার্য করতে পারে। বাজারে বেশি দাম ও অন্যান্য বাজারে কম দাম ধার্য করতে পারে।
৩. যাতায়াত ব্যবস্থা : যোগাযোগ ব্যবস্থা অনুন্নত হলে বিভিন্ন বাজারের ক্রেতাদের মধ্যে সুষ্ঠু যোগাযোগ বজায় রাখা সম্ভব হয় না। এমতাবস্থায় দাম বৈষম্যকরণ সম্ভব হয়।
৪. আইনগত বাঁধা: আইনগত স্বীকৃতি থাকলে সেক্ষেত্রে দাম বৈষম্যকরণ সম্ভব হয়। বাংলাদেশে রেলপথে যাতায়াতের ক্ষেত্রে প্রথম শ্রেণির যাত্রীদের জন্য বেশি ভাড়া এবং দ্বিতীয় শ্রেণির যাত্রীদের জন কম ভাড়া ধার্য করা হয়।এক্ষেত্রে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের আইনগত স্বীকৃতি রয়েছে।
৫. অবস্থানগত দূরত্বঃ এক বাজার থেকে অন্য বাজারের অবস্থানের উপর দাম বৈষম্যকরণ নির্ভরশীল। এক বাজার থেকে অন্য বাজারের অবস্থাগত দূরত্ব বেশি থাকলে দাম বৈষম্যকরণ সম্ভব হয়।
৬. সুযোগ-সুবিধাঃ দুটি বাজারের মধ্যে পরিবেশগত সুযোগ-সুবিধার পার্থক্য থাকলে সেক্ষেত্রে দাম বৈষম্যকরণ সম্ভব হয়। যেমন- ফুটপাতের তুলনায় আধুনিক ও সুসজ্জিত শপিং মলগুলোতে ক্রেতারা স্বাচ্ছন্দে দ্রব্য সামগ্রি ক্রয় করতে পারে না। তাই এক্ষেত্রে দাম বৈষম্যকরণ সম্ভব হয়।
৭. ক্রেতাদের অজ্ঞতাঃ দাম বৈষম্যকরণের এক্ষেত্রে বিক্রেতা একই দ্রব্যের জন্য এক বাজারে বেশি দামে এবং অন্য বাজারে কম দাম ধার্য করতে পারে। এরূপ দাম সম্পর্কে ক্রেতারা অবগত না থাকলে সেক্ষেত্রে দাম বৈষম্যকরণ সম্ভব হয়।
৮. দ্রব্যের বৈচিত্রকরণ: একই দ্রব্যের লেভেল, প্যাকেট ও নামের পরিবর্তন আনয়ন করে দ্রব্যের বৈচিত্রকরণ করা
যায়। এরূপ বৈচিত্র্যপূর্ণ দ্রব্যের জন্য ভিন্ন ভিন্ন দাম ধার্য করা যায়। অর্থাৎ দাম বৈষম্যকরণ সম্ভব হয়।
৯. পুনঃবিক্রয়: কম দামের বাজার থেকে বেশি দামের বাজার দ্রব্য পুনঃবিক্রয় করার সুযোগ না থাকলে সেক্ষেত্রে দাম বৈষম্যকরণ সম্ভব হয়।
৮. যাতায়াত খরচঃ বিভিন্ন বাজারে দ্রব্যের নির্ধারিত দামের মধ্যে সৃষ্ট পার্থক্যের তুলনায় যাতায়াত খরচ বেশি হলে দাম বৈষম্যকরণ সম্ভব হয়।
পরিশেষে বলা যায়, দ্রব্য বাজারে উল্লেখিত অবস্থা বিদ্যমান থাকলে দাম বৈষম্যকরণ সম্ভব হয়।