অথবা, ওজোন স্তর কাকে বলে?
অথবা, ওজোন স্তর বলতে কী বুঝ?
অথবা, ওজোন স্তরের সংজ্ঞা দাও।
উত্তর৷ ভূমিকা : মানবসভ্যতার দ্রুত অগ্রগতির পাশাপাশি কিছু পরিবেশগত ঝুঁকিও মারাত্মক আকার ধারণ করছে, যারা মানবসভ্যতাকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। এ পরিবেশগত বিপর্যয়ের মধ্যে ওজোন স্তরের ক্ষয় অন্যতম। দ্রুত শিল্পায়ন ও শহরায়ন প্রক্রিয়া ওজোন স্তরের ক্ষয়কে ত্বরান্বিত করেছে। তবে বিশ্বব্যাপী মানুষ বর্তমানে এ বিষয়ে সচেতন হতে শুরু করেছে। তাই তারা ওজোন স্তরের ক্ষয়রোধে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে। তবে এগুলো প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
ওজোন : ওজোন গাঢ় নীল রংয়ের একটি গ্যাসের নাম যা অক্সিজেনের একটি রূপভেদ। বিজ্ঞানের ভাষায় অলোপিকমডিফিকেশন। ওজোন অণু অক্সিজেনের তিনটি পরমাণু নিয়ে গঠিত। খাটো তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের অতি বেগুনি রশ্মির বিকিরণ প্রভাবে সাধারণত অক্সিজেন অণু ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। তরঙ্গ দৈর্ঘ্য ২৪২ ন্যানোমিটার এর নীচের অতি বেগুনি রশ্মির বিকিরণ প্রভাবে সাধারণ অক্সিজেনের অণুর আলোক বিযুক্তি ঘটে। অক্সিজেন অণুর সাথে ভেঙে যাওয়া মুক্ত অক্সিজেন পরমাণু মুক্ত হয়। ফলে তৈরি হয় ওজোন। বায়ুমণ্ডলে সর্বত্রই ওজোন পাওয়া যায়। এর গড় ঘনত্ব প্রতি কেজি বাতাসে ৬৩৫ মাইক্রোগ্রাম। তবে বায়ুমণ্ডলীয় ওজোন সমভাবে বণ্টিত হয়। মূলত স্ট্রাটোস্ফিয়ারেই এর অবস্থান।
ওজোন স্তর : বায়ুমণ্ডলের সবচেয়ে নিচের স্তরটি হলো ট্রপোস্ফিয়ার, যা পৃথিবীর পিঠ থেকে শুরু করে প্রায় ১১ কিঃ মিঃ পর্যন্ত বিস্তৃত। মেঘ, বায়ুপ্রবাহ, ঝড় ইত্যাদি এ স্তরেই হয়ে থাকে। এরপর রয়েছে স্ট্রাটোস্ফিয়ার, যা পায় ৭০-৮০ কিঃ মিঃ পর্যন্ত বিস্তৃত। ভূপৃষ্ঠ থেকে ২০ থেকে ৩০ মিঃ মিঃ এর মধ্যে বায়ুমণ্ডলের স্ট্রাটোস্ফিয়ারে ওজোন গ্যাসের এক পাতলা স্তর অবস্থিত, যা ওজোন স্তর হিসেবে পরিচিত। ২৫ কিলোমিটারে ওজোনের ঘনত্ব সর্বোচ্চ ১৬ পিপি এম। ট্রপোস্ফিয়ার ও স্ট্রটোস্ফিয়ারকে বিচ্ছিন্নকারী ট্রাপোপোজের অস্তিত্বের জন্য স্ট্রাটোস্ফিয়ারের ওজোন বহুলাংশে দায়ী। সূর্য থেকে পৃথিবীর দিকে এগিয়ে আসা ক্ষতিকর অতি বেগুনি রশ্মির শতকরা ৯৯ ভাগই শোষণ করে আটকে রাখে এ ওজোন স্তর মাত্র ১ শতাংশ এসে পৌঁছায় পৃথিবীতে। ফলে ওজোন স্তর এবং ওজোন ঘনত্ব হ্রাস জীবজগতের জন্য অত্যন্ত বিপর্যয়কর এবং তা মানুষের অস্তিত্ব বিপন্ন করে দিতে পারে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, বায়ুমণ্ডলের চতুর্থ স্তরকে ওজোন স্তর বলে। এ স্তর ভূপৃষ্ঠের ৬৫ মাইল উপরে অবস্থিত। এ স্তরের কাজ হচ্ছে সূর্য হতে আগত সকল অতিবেগুনি (Ultraviolet) রশ্মি শোষণ করা এবং পৃথিবী থেকে উত্থিত সকল শব্দকে প্রতিফলিত করা।