উৎস : আলোচ্য অংশটুকু বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের পথিকৃৎ কাজী আবদুল ওদুদ বিরচিত ‘বাংলার জাগরণ’ শীর্ষক প্রবন্ধ থেকে চয়ন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গ : ডিরোজিও বাংলার তরুণ সম্প্রদায়ের মধ্যে জ্ঞানের মুক্তির যে আন্দোলন ছড়িয়ে দিয়েছিলেন সে প্রসঙ্গে আলোচ্য উক্তির অবতারণা করা হয়েছে।
বিশ্লেষণ : রামমোহন ইউরোপীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের চমৎকারিত্বের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন মাত্র। কিন্তু বাঙালি প্রকৃত প্রস্তাবে সেই সৌন্দর্যের স্বাদ লাভ করে হিন্দু কলেজের শিক্ষক ডিরোজিওর কাছ থেকে। ফরাসি বিপ্লবের চিন্তার স্বাধীনতাবহ্নি তাঁর ভিতরে প্রজ্বলিত ছিল। তিনি ছাত্রদের মাঝে জ্ঞানের আলো জ্বালিয়ে জ্ঞানপিপাসু ছাত্রদের মাঝে একটি নতুন মনোভাব জাগিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন। যার ফলস্বরূপ ভারতীয় সমাজ মধ্যযুগীয় খোলস থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজে পায়। তিনি তরুণ ছাত্র সমাজের নতুন ধ্যান-ধারণার মন্ত্র গুরু ছিলেন। তাঁর জ্ঞানের প্রভাব আমরা লক্ষ করি বাংলার চির আদরের মধুসূদনের মধ্যে। মধুসূদন ডিরোজিওর গৌণ প্রভাবের ফল। মধুসূদন ডিরোজিওর ভাবশিষ্য। মধুসূদনের উপর ডিরোজিওর প্রভাব কত বেশি ছিল তা আমরা মধুসূদনের জীবনাচরণ এবং সাহিত্যসৃষ্টির দিকে তাকালেই বুঝতে পারি। জাতি ধর্ম ইত্যাদি সংকীর্ণতা ক্ষণকালের জন্যও তাঁকে স্পর্শ করতে পারেনি। ডিরোজিওর ধর্ম সম্পর্কিত চিন্তা তাঁকে এতটাই প্রভাবিত করেছিল যে তিনি নিজের ধর্ম পর্যন্ত ত্যাগ করে খ্রিস্ট ধর্মে দীক্ষিত হয়েছিলেন। ইউরোপীয় জ্ঞানবিজ্ঞানের প্রতি গভীর অনুরাগ এবং মধুসূদনের মাইকেল মধুসূদন হয়ে উঠার পিছনে ডিরোজিওর প্রভাব কার্যকর ছিল বলে প্রবন্ধকার মত প্রকাশ করেছেন।
মন্তব্য : রামমোহনের পাশ্চাত্য জ্ঞানবিজ্ঞানের প্রতি যে দুর্বলতা ছিল তা বাঙালি হৃদয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ডিরোজিওর মাধ্যমে।