এ সভ্যতা জাতিবিচার করেনি, বিশুদ্ধ মানব সম্বন্ধের প্রভাব সর্বত্র বিস্তার করেছে।”— ব্যাখ্যা কর।

উৎস : আলোচ্য অংশটুকু বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিরচিত ‘সভ্যতার সংকট’ শীর্ষক প্রবন্ধের অন্তর্গত।
প্রসঙ্গ : ইংরেজ সভ্যতার অন্তঃসারশূন্যতার পাশাপাশি জাপানি ও রাশিয়ান সভ্যতা যে কত বেশি শ্রেয় ছিল তার ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে প্রবন্ধকার মন্তব্যটি করেছেন।
বিশ্লেষণ :
ইংরেজরা প্রায় দুইশত বছর যাবৎ ভারতবর্ষের রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিল। কিন্তু যে যন্ত্রসভ্যতার দ্বারা তারা তাদের বিশ্বকর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করেছিল ভারতকে তার যথোচিত ব্যবহার থেকে বঞ্চিত রেখেছিল। যে ভারতীয়রা এক সময় ইংরেজ শাসনকে আশীর্বাদ বলে মনে করেছিল, সে ভারতীয়দের প্রতি তারা অপরিসীম অবজ্ঞা ও ঔদাসীন্য প্রদর্শন করতে লাগল। ফলে বহুকোটি ভারতীয় মানুষ দিনদিন দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর হতে শুরু করল। অথচ জাপানিরা যন্ত্রশক্তির সদ্ব্যবহার করে সর্বতোভাবে সম্পদবান হয়ে উঠল। জাপানের সে সমৃদ্ধি লেখক স্বচক্ষে দেখে এসেছিলেন। সেখানে দেখা গেছে স্বজাতির মধ্যে তাদের সভ্য শাসনের রূপ। আরো দেখা গিয়েছে রাশিয়ার মস্কো নগরীতে জনসাধারণের মধ্যে শিক্ষা বিস্তারের ও আরোগ্য বিস্তারের অসামান্য অকৃপণ অধ্যবসায়। সে অধ্যবসায়ের প্রভাবে ঐ বৃহৎ সাম্রাজ্যের মূর্খতা, দৈন্য ও আত্মঅবমাননা অপসারিত হয়ে গিয়েছে। জাপান ও রাশিয়ার সভ্যতা জাতিবিচার করেনি বলেই বিশুদ্ধ মানব সম্বন্ধের প্রভাব সর্বত্র বিস্তার করেছে। তার দ্রুত ও আশ্চর্য পরিণতি দেখে একই সাথে ঈর্ষা ও আনন্দ অনুভব করেছেন লেখক। জাপানি ও রাশিয়ানদের মধ্যে সাম্রাজ্য মদমত্ততা ছিল না বলেই তারা সমৃদ্ধিশালী হতে পেরেছিল। কিন্তু ইংরেজরা ভারতীয়দের রক্ত শোষণ করে নিজেদের সাম্রাজ্য বিস্তারের অসৎ উদ্দেশ্যে তৎপর ছিল বলে ভারতবাসীর উন্নতি সাধিত হয়নি। তাই জাপান-রাশিয়ায় যা সম্ভব হয়েছে ভারতবর্ষে তা সম্ভব হয়নি।
মন্তব্য : যে সভ্যতা জাতি-বিচার করেনি সে সভ্যতাই জাপান ও রাশিয়ায় মানবতার বিস্তার ঘটিয়েছে। ভারতীয়রা এ সভ্যতার সংস্পর্শ থেকে বঞ্চিত ছিল।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%b8%e0%a6%ad%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%a4%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%b8%e0%a6%82%e0%a6%95%e0%a6%9f-%e0%a6%aa%e0%a6%ac%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%a7-%e0%a6%b0%e0%a6%ac%e0%a7%80%e0%a6%a8%e0%a7%8d/