উৎস : আলোচ্য অংশটুকু মননশীল গদ্যলেখক কাজী আবদুল ওদুদ বিরচিত ‘বাংলার জাগরণ’ শীর্ষক প্রবন্ধ থেকে চয়ন করা
প্রসঙ্গ : বাংলার জাগরণের সাথে পাশ্চাত্যের জাগরণের পার্থক্য এবং আমাদের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির দিকটি লেখক এখানে চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন।
বিশ্লেষণ : ইউরোপের রেনেসাঁস আন্দোলন এবং বাংলার জাগরণ এ দু’য়ের উপর চোখ বুলিয়ে গেলে যথেষ্ট পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। ইউরোপে রেনেসাঁস আন্দোলন শুরু হয়েছিল একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নিয়ে। বাংলার জাগরণের নেতারা কী উদ্দেশ্য আদর্শের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে কর্মক্ষেত্রে অবতীর্ণ হয়েছিলেন ও এই জাগরণের ফলে দেশের যা লাভ হয়েছে তার স্বরূপ কী, এই সমস্ত চিন্তায় দু’য়ের মধ্যে পার্থক্য লক্ষযোগ্য। তবে প্রবন্ধকারের ভাষায় এই পার্থক্য একই সাথে আমাদের জন্য আনন্দের ও বিষাদের। কেননা আনন্দের এজন্য যে এতে করে আমাদের একটা বিশিষ্ট সত্তার পরিচয় আমরা লাভ করি। অসভ্য বা অর্ধসভ্য জাতির মতো আমরা শুধু ইউরোপকে অনুকরণ করিনি। ইউরোপের অনুকরণে আমরা আমাদের জাতীয় সত্তাকে বিকিয়ে দেইনি। আর বিষাদের এজন্য যে আমাদের জাতীয় চিন্তা ও কর্ম পরস্পরার ভিতর দিয়ে আমাদের যে ব্যক্তিত্ব সুপ্রকট হয়ে উঠে সেটি অতীতের অশেষ অভিজ্ঞতাপুষ্ট অকুতোভয় আধুনিক ব্যক্তিত্ব নয়। সেটি অনেকখানি অল্পপরিসর শাস্ত্রশাসিত মধ্যযুগীয় মানুষের ব্যক্তিত্ব। অর্থাৎ আমাদের জাতীয় চেতনায় আমরা মধ্যযুগীয় চিন্তাধারা থেকে বেরিয়ে আসতে পারিনি।
মন্তব্য : বাংলার জাগরণে জাতি যেমন স্বকীয়তা বজায় রেখে আত্মজাগরণ ঘটাতে সক্ষম হয়েছিল তেমনি মধ্যযুগীয় চিন্তাধারা পরিহার করতে পারলে তা আরো সফল হতো।