অথবা, একটি ভালো প্রতিবেদনের বৈশিষ্ট্যগুলো কী কী?
অথবা, একটি ভালো প্রতিবেদন তৈরি করতে কী কী বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হয়?
অথবা, গবেষণায় ব্যবহৃত ভালো প্রতিবেদন তৈরি করতে কী কী বৈশিষ্ট্য প্রয়োজন?
উত্তর।। ভূমিকা : একজন গবেষককে তাঁর গবেষণার আনুষঙ্গিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা, তথ্য সংগ্রহ এবং বিশ্লেষণের পর গবেষণার প্রতিবেদন তৈরি করতে হয়। দীর্ঘদিন গবেষণার পর প্রতিবেদন লেখা গবেষকের কাছে অবশ্যই আনন্দের বিষয়।গবেষণালব্ধ ফলাফল সকলের অবগতির জন্য প্রতিবেদনের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়। একটি ভালো প্রতিবেদন কোন বিষয় সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা দিতে পারে।
ভালো প্রতিবেদনের বৈশিষ্ট্যাবলি : নিম্নে ভালো প্রতিবেদনের বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা করা হলো-
১. স্পষ্ট চিন্তা : একটি ভালো প্রতিবেদন তৈরিতে যে বিষয়ের প্রতি সর্বাগ্রে দৃষ্টি দিতে হয় সেটি হল স্পষ্ট চিন্তা।প্রতিবেদনে গবেষকের চিন্তা স্পষ্ট হতে হবে। পাঠককে প্রতিবেদনের বিষয় সহজে বোধগম্য করে গড়ে তোলার জন্য দ্ব্যর্থহীন ও পরিষ্কারভাবে চিন্তাধারার উল্লেখ করতে হবে।
২. স্বচ্ছ প্রত্যয় ও পদ : গবেষণায় ব্যবহৃত বিভিন্ন প্রত্যয় ও পদসমূহের সুস্পষ্ট এবং কার্যকরী সংজ্ঞা প্রদান করতে হবে এবং প্রতিবেদনে প্রদত্ত সংজ্ঞা ও ব্যবহারের মধ্যে সংগতি বজায় রাখতে হবে। যেসব প্রত্যয় বা পদ সুস্পষ্ট নয় সেগুলোর প্রায়োগিক সংজ্ঞা দিতে হবে। এতে পাঠকের পক্ষে গবেষকের উদ্দেশ্য বুঝতে পারা সহজ হয়। কোন প্রত্যয় বা পদের প্রায়োগিক সংজ্ঞা দেওয়ার অর্থ হল প্রত্যয় বা পদটিকে বস্তুনিষ্ঠভাবে বোধগম্য এবং প্রমাণসাপেক্ষ করা।
৩. সহজ ও সঠিক ভাষা : ভাষাগত জটিলতা ও অস্পষ্টতা প্রতিবেদন থেকে দূর করতে হবে। প্রতিবেদনের ভাষা হবে সহজ, সরল ও প্রাঞ্জল। যে পাঠকের উদ্দেশ্যে প্রতিবেদন তৈরি করা হয় সে পাঠকই যদি বুঝতে অক্ষম হয় তাহলে সব
প্রচেষ্টাই বৃথা হয়ে যায়। প্রতিবেদনে কোন উদ্ধৃতির ব্যবহার প্রয়োজন হলে সেটা যথাযথভাবে প্রয়োগ করা উচিত।
৪. সুশৃঙ্খল উপস্থাপন : প্রতিবেদনে প্রয়োজনীয় বিষয়বস্তু প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সুশৃঙ্খল ও ধারাবাহিকভাবে উপস্থাপন করতে হবে।সময় প্রতিবেদনকে প্রয়োজনানুসারে অধ্যায় এবং অধ্যায়কে অনুচ্ছেদে বিভক্ত করে নিতে হবে।
এক্ষেত্রে বিভিন্ন অংশের মধ্যে সংগতি রেখে অধ্যায় ও অনুচ্ছেদে বিভক্ত করতে হবে।
৫. উদ্ধৃতি ও পাদটীকা ব্যবহার : প্রতিবেদনে উদ্ধৃতি ও পাদটীকা ব্যবহারের প্রয়োজন হয়। কোন স্বীকৃত বিশেষজ্ঞের অভিমত ব্যক্ত করে গবেষক নিজের মতামতকে আরও সমর্থনযোগ্য বলে দাবি করেন। আবার কখনও গবেষক নিজের মতের বিরোধী উদ্ধৃতিও ব্যবহার করেন। কার্ল মার্কস তাঁর গবেষণা প্রতিবেদন তৈরিতে উদ্ধৃতি ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে সজাগ থাকতেন। সেরা বিশেষজ্ঞ দ্বারা যে মতামতটি সমর্থিত হতো না তিনি সেটা পরিত্যাগ করতেন। তিনি কোন তথ্যের উৎসস্থলে গিয়ে পর্যবেক্ষণ করতেন। এর ফলাফল দাঁড়ায় এমন যে, গবেষকের পক্ষে যুক্তিতর্কের ব্যাপকতা থেকে এড়ানো সম্ভব হয়।
৬. প্রতিবেদনের আকার : প্রতিবেদনের আকার খুব বেশি বড় হওয়া যেমন ভালো নয়, তেমনি খুব ছোট হওয়াও ভালো নয়। প্রয়োজনানুসারে এবং যতটা সম্ভব খুব বড় বা ছোট আকার প্রদান না করে প্রতিবেদন তৈরি করতে হবে।অবশ্য প্রতিবেদনের আকার বড় হলে বা ছোট হলে যে ক্ষতি হবে এমন নয়। একটি প্রতিবেদনের গুণগত মান এর পরিমাণ বা আকারের উপর নির্ভর করে। সুতরাং, মধ্যস্থতা অবলম্বন এ ক্ষেত্রে বাঞ্ছনীয়।
উপসংহার : জটিল সামাজিক প্রপঞ্চের গবেষণা একদিকে যেমন কষ্টসাধ্য ব্যাপার, তেমনি একটি ভালো প্রতিবেদন তৈরিও কম কষ্টসাধ্য নয়। প্রতিবেদনের মাধ্যমে কোন বিষয়ে নতুন তথ্য জানা যায় এবং প্রচলিত ধারণার সংস্কার করা যায়। আবার গবেষককে পাঠকের চাহিদা অনুযায়ী প্রতিবেদন তৈরির প্রতি গুরুত্ব দিতে হয়। প্রতিবেদনের ধরন নির্ভর করে পাঠকের ধরনের উপর। তাই বিভিন্ন বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রেখে প্রতিবেদন তৈরি করতে হয়।