অথবা, একচেটিয়া কারবারে স্বল্পকালীন ভারসাম্য চিত্রের সাহায্যে ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : ভূমিকা : প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে বাজারকে পূর্ণ প্রতিযোগিতা ও অপূর্ণ প্রতিযোগিতা এ দু’ভাগে ভাগ করা যায়। একচেটিয়া হল অপূর্ণ প্রতিযোগিতার একটি রূপ।
একচেটিয়া কারবারের সংজ্ঞাঃ যে বাজারে একজন মাত্র উৎপাদনকারী বা বিক্রেতা থাকে, উৎপাদিত দ্রব্যের কোন ঘনিষ্ঠ পরিবর্তক থাকে না এবং অপর বিক্রেতার জন্য বাজারে প্রবেশে বাঁধা থাকে তাকে একচেটিয়া (Monopoly) বাজার বলে।
ইংরেজীতে ‘Mono’ শব্দের অর্থ একজন এবং Poly শব্দের অর্থ বিক্রেতা। সুতরাং (Monopoly Market) বলতে একজন বিক্রেতার বাজার বুঝায়।
একচেটিয়া কারবারে একজন বিক্রেতা বা একটিমাত্র ফার্ম সংশিষ্ট দ্রব্যাদি উৎপাদন, সংরক্ষণ, দাম নির্ধারণ, বিক্রয় সংক্রান্ত সকল কার্য পরিচালনা করে থাকে। একচেটিয়া কারবারিকে Price Maker বলা হয়।
একচেটিয়া কারবারের বৈশিষ্ট্য বা শর্তাবলী:
১. একজন মাত্র বিক্রেতা;
২. পণ্যের চাহিদা কম।
৩.উপকরণের গতিশীলতার অভাব;
৪. অবিভাজ্য পণ্য;
৫ . নিয়ন্ত্রিত যোগান;
৬. কোন পরিবর্তক দ্রব্য নেই।
৭. বিজ্ঞাপন খরচ নেই।
৮. ব্যক্তিগত ব্যবসায়িক সুনাম বাজারে পণ্য নিয়ন্ত্রণ করে;
৯. নতুন বিক্রেতার বাজারে প্রবেশে বাঁধা।
১০. ক্রেতার সংখ্যা অনেক;
১১. দামের উপর প্রভাব অধিক:
১২. প্রতিদ্বন্দ্বী ফার্মের মুনাফা সম্পর্কিত অজ্ঞতা।
১৩. অসুস্থ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত।
১৪. ফার্ম অভ্যন্তরীণ ও বহিঃস্থ সুবিধা অর্জন করতে পারে।
একচেটিয়া কারবারের ভারসাম্য পরিমাণ ও দাম নির্ধারণঃ একচেটিয়া বাজারে কোন রূপ প্রতিদ্বন্দ্বিতা না থাকায় একচেটিয়া কারবারি দ্রব্যের দামের উপর বিশেষ প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়। সর্বাধিক মুনাফা অর্জনই একচেটিয়া কারবারির প্রধান লক্ষ্য। তবে যোগানের উপর তার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকলেও চাহিদার উপর তার কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। তাই একচেটিয়া কারবারি খেয়াল খুশিমত দ্রব্যের দাম ধার্য্য করতে পারে না।
চাহিদার স্থিতিস্থাপকতা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে একচেটিয়া কারবারে দ্রব্যের দাম নির্ধারণ করতে হয়। দ্রব্যের চাহিদা স্থিতিস্থাপক হলে একচেটিয়া কারবারি দ্রব্যের দাম কমিয়ে যোগান বাড়াবে আবার চাহিদা অস্থিতিস্থাপক হলে দাম বাড়িয়ে দেবে। ভারসাম্যের শর্তঃ নিম্নের দু’টি শর্ত পালিত হলে একচেটিয়া কারবাররের ভারসাম্য দাম ও পরিমাণ নির্ধারিত হবে।
১. প্রয়োজনীয় শর্ত: ভারসাম্য স্তরে MR MC হবে। প্রান্তিক আয় সমান প্রান্তিক ব্যয়।
২. পর্যাপ্ত শর্ত: ভারসাম্য বিন্দুতে MC রেখা MR রেখাকে নিচের দিক থেকে ছেদ করে।
অর্থাৎ, MC রেখার ঢাল > MR রেখার ঢাল।
উপরোক্ত শর্ত পূরণ সাপেক্ষে স্বল্পকালে একচেটিয়া ফার্ম তিন ধরনের ভারসাম্য লাভ করতে পারে। যথা-
১. অস্বাভাবিক মুনাফা সহ ভারসাম্য অর্জন।
২. স্বাভাবিক মুনাফাসহ ভারসাম্য অর্জন। ৩. ক্ষতি বা লোকসানসহ ভারসাম্য অর্জন।
নিম্নে উপরিউক্ত বিষয়গুলো বর্ণনা করা হলঃ
১. অস্বাভাবিক মুনাফাসহ ভারসাম্যঃ একচেটিয়া কারবারে, SMC = MR < AR > SAC এই শর্ত পালিত হলে ফার্মের পক্ষে অর্থনৈতিক মুনাফা বা স্বাভাবিকের অতিরিক্ত মুনাফা অর্জন করা সম্ভব। অর্থাৎ, স্বল্পকালে প্রান্তিক ব্যয় ও প্রান্তিক আয় পরস্পর সমান হলে একচেটিয়া কারবারে ভারসাম্য অর্জিত হবে।
চিত্রের সাহায্যে প্রকাশঃ
চিত্রে OX অক্ষে পরিমাণ ও OY অক্ষে দাম নির্দেশ করে।
চিত্রে, MR = প্রান্তিক আয় রেখা। AR = গড় প্রান্তিক আয়। SMC স্বল্পকালীন প্রান্তিক ব্যয়। SAC = স্বল্পকালীন গড় ব্যয়।
চিত্রে, E বিন্দুতে SMC ও MR পরস্পর ছেদ করে। ভারসাম্য উৎপাদন নির্ধারিত হয়।
OM উৎপাদন ক্ষেত্রে,SAC MF.
সুতরাং, মোট ব্যয় MF × OM = OMFT.
OM উৎপাদন ক্ষেত্রে, AR = MG.
অতএব, মোট আয় TR = MG × OM = OMGPo.
সুতরাং, অস্বাভাবিক মুনাফা, OMGPo-OMFT = TFGPO.
২. স্বাভাবিক মুনাফাসহ ভারসাম্যঃ বাজার চাহিদা ও ব্যয় সংক্রান্ত পরিস্থিতি এমন হতে পারে, একচেটিয়া শূন্য (০) অর্থনৈতিক মুনাফা অর্জন করতে পারে। একচেটিয়া কারবারে, SMCMRAR SAC = P এই শর্ত পালিত হলে ফার্ম স্বাভাবিক বা শূন্য অর্থনৈতিক মুনাফা অর্জন করে। AR রেখা ও SAC রেখার স্পর্শ বিন্দুতে শূন্য অর্থনৈতিক মুনাফা হলো এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ কাম্য অবস্থা।
নিম্নের চিত্রের সাহায্যে বিষয়টি ব্যাখ্যা করা যায়।
রেখাচিত্রঃ
উপরের চিত্রে OX অক্ষে পরিমাণ ও OY অক্ষে দাম/আয়/ব্যয় নির্দেশ করে। চিত্রে, E বিন্দুতে SMC ও MR পরস্পর ছেদ করেছে। ভারসাম্য উৎপাদন নির্ধারিত হয়, OM।
OM উৎপাদন ক্ষেত্রে, SAC MF.
মোট ব্যয়, =OMFPO
OM উৎপাদনে ক্ষেত্রে, AR MF মোট আয়, MF × OM OMFPo.
সুতরাং মুনাফা, OMFPo=0 OMFPO –
৩. ক্ষতি বা লোকসানসহ ভারসাম্যঃ একচেটিয়া কারবারে, SMC = MR <AR <SAC। এই শর্ত পালিত হলে ফার্মের পক্ষে অর্থনৈতিক মুনাফা অর্জন সম্ভব নয়। এই শর্তের অর্থ দাঁড়ায় ঋণাত্মক মুনাফা প্রাপ্তি।
এই শর্ত অনুসারে, স্বল্পকালীন প্রান্তিক ব্যয় ও প্রান্তিক আয় সমান। অর্থাৎ SMC MR-গড় আয় বা দাম স্বল্পকালীন গড় ব্যয়ের চেয়ে কম। ফলে স্বল্পকালে ফার্মের জন্য লোকসান হবে।
বিষয়টি চিত্রের মাধ্যমে প্রকাশ:
চিত্রে OX অক্ষে পরিমাণ ও OY অক্ষে দাম/আয়/ব্যয় নির্দেশ করে।
চিত্রে, E বিন্দুতে SMC ও MR পরস্পর ছেদ করেছে। ভারসাম্য উৎপাদন নির্ধারিত হয় OM। OM উৎপাদন ক্ষেত্রে, SAC = MF সুতরাং মোট ব্যয়, TC = MF × OM = OMFT. OM উৎপাদন ক্ষেত্রে, AR = MG. সুতরাং, মোট আয় TR = MG × OM = OMGPo, সুতরাং, লোকসান (ক্ষতি) = OMGPO-OMFT-TFGPo
অনেকে মনে করেন যে, একচেটিয়া কারবারে কোন লোকসান হয় না। কারণ উৎপাদন বা বিক্রয়ের উপর তার একক কর্তৃত্ব থাকে। প্রকৃত অবস্থায় স্বল্পকালে একচেটিয়া কারবারে ক্ষতি ও হতে পারে।
উপসংহারঃ উপরিউক্ত আলোচনায় দেখা যায় যে, একচেটিয়া কারবারি এমনভাবে দ্রব্যের দাম ও উৎপাদন নির্ধারণ করবে যেন প্রান্তিক আয় ও প্রান্তিক ব্যয় সমান হয়। অর্থাৎ প্রান্তিক আয় ও প্রান্তিক ব্যয় পরস্পর সমান হলে তার তিত্তিতেই ভারসাম্য অবস্থা নির্ধারিত হয়।