উৎস : আলোচ্য অংশটুকু বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিরচিত ‘সভ্যতার সংকট’ শীর্ষক প্রবন্ধের অন্তর্গত।
প্রসঙ্গ : প্রবল প্রতাপশালীর ক্ষমতা ও আত্মম্ভরিতার পতনও অবশ্যম্ভাবী বলে প্রাবন্ধিক এখানে মন্তব্য করেছেন।
বিশ্লেষণ : বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ছিলেন আশৈশব পাশ্চাত্য অনুরাগী। পাশ্চাত্য সাহিত্য, সংস্কৃতি ও সভ্যতার মধ্যেই তিনি লালিত-পালিত ও বর্ধিত হয়েছিলেন। অল্প বয়সে একবার বিলেত গিয়ে তিনি ইংরেজ জাতির মহত্ত্ব ও ঔদার্যের পরিচয় পেয়ে মুগ্ধ হয়েছিলেন। তখন থেকেই রবীন্দ্রনাথ ইংরেজকে হৃদয়ের উচ্চাসনে বসিয়েছিলেন। কিন্তু জীবনের শেষ প্রান্তে পৌছে তিনি ইংরেজদের সভ্যশাসনের অন্তরালবর্তী কদর্যতার পরিচয় পেয়ে বিস্মিত হন। তিনি বুঝতে পারেন ইংরেজরা ভারতের উন্নতি চায় না, তারা ভারতের জনসাধারণকে শোষণ করে নিজেদের ঐশ্বর্যের পাহাড়ের উচ্চতা বাড়াতে চায়। তিনি এও বুঝতে পারেন যে, ইংরেজরা তাদের তথাকথিত সভ্যশাসনের দ্বারা ভারতবর্ষকে কেবল দরিদ্রই করেনি তাকে আত্মবিচ্ছেদের নৃশংস পথে ঠেলে দিচ্ছে। এমতাবস্থায় লেখক ইংরেজদের উপর থেকে তাঁর শ্রদ্ধা ও আস্থা হারিয়ে অবহেলিত ভারতবর্ষের মুক্তিকামনায় মগ্ন হলেন। তিনি নির্দ্বিধায় ঘোষণা করলেন যে, প্রবল প্রতাপশালীরও পতন অনিবার্য। ক্ষমতার মদমত্ততা ও আত্মম্ভরিতা চিরকাল নিরাপদ নয়। দিন কারও একরকম যায় না। ইংরেজকে একদিন এদেশ থেকে চলে যেতে হবে। ভারতবর্ষ একদিন স্বাধীন হবে, ভারতীয়রা তাদের আত্মমর্যাদা ফিরে পাবে। সেদিন আজ সম্মুখে উপস্থিত- যেদিন প্রমাণিত হবে যে, ইংরেজদের ক্ষমতা চূর্ণ হয়েছে- তাদের অহঙ্কারের পতন হয়েছে। প্রমাণিত হবে যে-
“অধর্মেনৈধতে তাবৎ ততো দ্রাণি পশ্যতি
ততঃ সপত্নান জয়তি- সমূলস্ত বিনশ্যতি।”
মন্তব্য : ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়। অহঙ্কারীর ক্ষমতার দাপট কখনো নিরাপদ নয়। অহঙ্কারের পতন ও বিপর্যয় অনিবার্য।