এইডস (AIDS) কী? এইডস কিভাবে চিহ্নিত করা যায়?

অথবা, এইডস বলতে কী বুঝ? এইডস এর লক্ষণসমূহ বর্ণনা কর।
অথবা, এইডস কাকে বলে? এইডস এর লক্ষণসমূহ কী কী?
উত্তর৷ ভূমিকা :
“আজকের পৃথিবী এইচআইভি/এইডসের কারণে এক চরম বিপর্যয়ের সম্মুখীন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ আক্রান্ত হয়েছে এইডস মহামারিতে। আর অনেক দেশে চলছে এ রোগের ধীর ও নীরব বিস্তৃতি। সারা বিশ্বে এ পর্যন্ত ৭ কোটিরও বেশি লোক এইচআইভিতে আক্রান্ত হয়েছে, যার মধ্যে মারা গেছে প্রায় ৩ কোটি। আর বাকি ৪ কোটিরও বেশি আক্রান্ত ব্যক্তি এ রোগ নিয়ে বেঁচে আছেন। ……২০০৩ সালে বিশ্বব্যাপী ৫০ লাখেরও বেশি মানুষ এইচআইভিতে আক্রান্ত হয়েছে। যেসব দেশে এ রোগ মহামারি আকারে দেখা দিয়েছে, সেখানকার অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে প্রতিকূল ও সুদূরপ্রসারী প্রভাব লক্ষণীয়। মোটকথা, তা সার্বিকভাবে ধ্বংস করছে দেশের উন্নয়নের ধারা আর সৃষ্টি করছে ভয়াবহ অবস্থা।” বর্তমানে পৃথিবীতে এইডস একটি অন্যতম ঘাতক এবং নীরবে নিভৃতে এ রোগের বিস্তার বেড়েই চলেছে এবং অকালে ঝরে যাচ্ছে পৃথিবীর লাখ লাখ তাজা প্রাণ।
এইডস (AIDS) : এইডসের একমাত্র পরিচয় এটি একটি ঘাতক ব্যাধি। সারা পৃথিবীর মানুষের কাছে এটি একটি আতঙ্ক। ১৯৮১ সালের পূর্বে মানুষ এ ঘাতক ব্যাধি সম্পর্কে তেমন কিছু জানতে পারে নি। রবার্ট সি গ্যালো এবং ড. লুক মন্টাগলিয়ের এইডস রোগের জীবাণু চিহ্নিত করেন। বাংলাদেশের বর্তমান এইডস পরিস্থিতি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এইডস সম্পর্কে কিছু লোককে প্রশ্ন করা হলে জানায়, “নাম জানি না, তবে রোগ একটি এ রকম আছে, তা শুনেছি।”
AIDS শব্দটির অর্থ হলো, অর্জিত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ঘাটতির লক্ষণ সমষ্টি। AIDS কে এভাবেও বলা যায় ।
A = Acquired (অর্জিত),
I = Immune (রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা),
tree D = Deficiency (অভাব),
S = Syndrome (লক্ষণ, লক্ষণ সমষ্টি)।
AIDS রোগটি নিজে নিজে আসে না। এটি বহুলাংশে মানুষ নিজেই ডেকে আনে। বাংলাদেশের বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী BBC এর এক সাক্ষাৎকারে এ কথাটিই বলেছেন।
AIDS রোগের জন্য HIV ভাইরাসকে (Human Immune Deficiency Virus) দায়ী করা হয়। শরীরে HIV ভাইরাস প্রবেশের সাথে সাথেই লক্ষণ প্রকাশ পায় না। AIDS এর চূড়ান্ত লক্ষণ প্রকাশে ৭/৮ বছর সময় লেগে যায়। মূলত AIDS বলতে ভিন্ন কোন রোগকে বুঝায় না। শরীরে HIV ভাইরাস প্রবেশ করলে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে যায়। এর ফলে শরীরে যে কোন অন্য রোগ তার স্থায়ী আধিপত্য গড়ে তোলে। যেমন- জ্বর হলে সে জ্বর আর ভালো হয় না, শরীরে অন্য যে কোন রোগের জীবাণু প্রবেশ করলে সে রোগ ঐ ব্যক্তির শরীরে স্থায়ী হয়ে যায়।
এইডস এর লক্ষণ : এইডস এর জীবাণু শরীরে প্রবেশের ৭/৮ বছর পরে এর কিছু লক্ষণ দেখা যায় । যথা :
শরীর দুর্বল হয়ে আসে।
হঠাৎ শরীরের ওজন কমে যাওয়া।
স্মরণশক্তি লোপ পায়।
মানসিক অবসাদ দেখা দেয়।
শরীরের বিভিন্ন গ্রন্থি ফুলে যায়।
বিরামহীনভাবে ডায়রিয়া হয়।
মুখে ও গলায় হ্রাস নামক ছত্রাক রোগ হয়।
হারপিস নামক রোগের সৃষ্টি হয়।
বিভিন্ন চর্মরোগ দেখা দেয়।
বাংলাদেশের HIV আক্রান্ত রাশিদা জানান, “আমার শরীরও মাঝে মাঝে খুব খারাপ হয়। প্রায়ই জ্বর, কাশি, মুখে ঘা হয়। এরই মাঝে বেঁচে আছি।”
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, ঘাতক ব্যাধি হিসেবে বর্তমান পৃথিবীতে এইডসের প্রকোপ ক্রমশ বেড়েই চলেছে। এইডসের পরিণাম নিশ্চিত মৃত্যু। এর কোন চিকিৎসা ব্যবস্থা আজও আবিষ্কৃত হয় নি। অতীতে আমরা যেসব রোগ পৃথিবীতে দেখেছি, সেগুলো থেকে এইডস ভিন্ন। মানুষের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ এবং গোপন সম্পর্ক থেকে এ রোগ ছড়ায়। বিশ্বে প্রতি ১৪ সেকেন্ড ১ জন মানুষ এইডসে আক্রান্ত হচ্ছে। এইডসের ভয়াবহতা থেকে বাঁচতে ব্যক্তিপর্যায়ের সচেতনতা থেকে রাষ্ট্রীয় পর্যায় পর্যন্ত সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ অপরিহার্য ।