উপনিষদ কী?

অথবা, উপনিষদ বলতে কি বুঝ?
অথবা, উপনিষদ কাকে বলে?
অথবা, উপনিষদ সম্পর্কে লেখ।
অথবা, উপনিষদ বলতে কী বুঝ?
উত্তর৷ ভূমিকা :
পুরাকালে ঋষিগণ জীবনের প্রকৃত অর্থ নির্ধারণে উৎসুক হয়ে অরণ্যে বসে ধ্যানের মাধ্যমে যেসব সত্যগুলো উপলব্ধি করেন তাই উপনিষদে স্থান পেয়েছে। উপনিষদের বাণী চিরন্তন এবং এর আবেদন শাশ্বত। উপনিষদগুলো একাধারে গভীর ধর্মশাস্ত্র ও আধ্যাত্মিক তত্ত্বকথা। এতে অতলস্পর্শী সব আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতার বর্ণনা আছে। সত্যের মর্ম উদ্ঘাটন করেছে উপনিষদের সব দার্শনিক তত্ত্ব।
উপনিষদ : উপনিষদ হলো বৈদিক সাহিত্যের চতুর্থ বা শেষস্তর। ‘উপনিষদ’ শব্দের অর্থ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। উপ- নি-সদ্ ধাতু কিপ প্রত্যয় করে উপনিষদ শব্দটি নিষ্পন্ন হয়েছে। ‘উপ’ উপসর্গটির দ্বারা সমীপবর্তিতা বুঝায় । সদ্ অর্থে বসা এবং সদ্ অর্থে প্রাপ্তি বা বিনাশও বুঝায়। উপনিষদ শব্দের আক্ষরিক অর্থ হলো যে বিদ্যা নির্জনে গুরুর সমীপে উপবিষ্ট হয়ে
গ্রহণ করতে হয় অর্থাৎ গুহ্যজ্ঞান। অনেকে বলেন, যা মানুষকে ব্রহ্মের সমীপবর্তী করে তাকে উপনিষদ বলে। তবে ব্যবহার অনুসারে উপনিষদ শব্দ বৈদিক সাহিত্যের অন্তিম পর্যায়ে রচিত বিশেষ গ্রন্থাবলিকে বুঝায়। বেদের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য উপনিষদেই প্রকাশিত। বৈদিক সাহিত্যের অন্তর্ভুক্ত গ্রন্থাবলির চারটি ভাগ হলো সংহিতা, ব্রাহ্মণ, আরণ্যক ও উপনিষদ। তবে বৈদিক ঐতিহ্য অনুসারে আরণ্যকগুলো ব্রাহ্মণের এবং উপনিষদগুলো আরণ্যকের অন্তর্গত। প্রতিটি ব্রাহ্মণ ও আরণ্যক একেকটি সংহিতার সঙ্গে সংযুক্ত বলে ধরা হয়, ফলে উপনিষদগুলোও শেষপর্যন্ত সেভাবে পরিগণিত।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, উপনিষদেই ভারতীয় দার্শনিক চিন্তার প্রথম উম্মেষ ঘটে। পূর্ববর্তী যুগের ক্লান্তিকর যজ্ঞীয় জটিলতা, কর্মকাণ্ড সংক্রান্ত চুলচেরা বিচার ইত্যাদি থেকে মুক্তির উপায় এবং চিন্তার জগতে এক নতুন পরিমণ্ডলের সন্ধান পাওয়া যায় উপনিষদে।