উপনিষদের যে কোন চারটি পদ্ধতি সংক্ষেপে আলোচনা কর ।

অথবা, উপনিষদের চারটি পদ্ধতি লেখ।
অথবা, উপনিষদের চারটি পদ্ধতি কী?
অথবা, উপনিষদের চারটি পদ্ধতি সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
পুরাকালে ঋষিগণ জীবনের প্রকৃত অর্থ নির্ধারণে উৎসুক হয়ে অরণ্যে বসে ধ্যানের মাধ্যমে যেসব সত্যগুলো উপলব্ধি করেন তাই উপনিষদে স্থান পেয়েছে। উপনিষদের বাণী চিরন্তন এবং এর আবেদন শাশ্বত। উপনিষদগুলো একাধারে গভীর ধর্মশাস্ত্র ও আধ্যাত্মিক তত্ত্বকথা। এতে অতলস্পর্শী সব আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতার বর্ণনা আছে। সত্যের মর্ম উদ্ঘাটন করেছে উপনিষদের সব দার্শনিক তত্ত্ব। উপনিষদের ভাষ্যকার ও দার্শনিকবৃন্দ তাঁদের আলোচনায় এবং উপদেশ বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতি অনুসরণ করেছেন। উপনিষদের যে কোন চারটি পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হলো :
১. সুত্রমূলক পদ্ধতি (Aphoristic method) : উপনিষদের সূত্রমূলক পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য হলো সূত্র বা জ্ঞানগর্ভ সংক্ষিপ্ত উক্তির মধ্য দার্শনিক চিন্তাধারার প্রকাশ, যেগুলোর তাৎপর্য উপলব্ধির জন্য বুদ্ধির প্রয়োজন। এ কারণেই বিভিন্ন ভাষ্যকার একই সূত্রের বিভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়েছেন। সূত্রের উদ্দেশ্য ছিল বিস্তারিত ভাবকে সংক্ষিপ্ত রূপ দেয়া। সূত্রের আকার
যত সংক্ষিপ্ত হয় তত সহজে কণ্ঠস্থ করা যায়। কিন্তু সূত্রগুলোর অর্থ সবসময় সহজবোধ ছিল না। তাই প্রয়োজন দেখা দিয়েছিল টীকা বা ভাষ্যের।
২. শব্দের উৎপত্তি সংক্রান্ত পদ্ধতি (Etymological method) : শব্দের প্রকৃতি, প্রত্যয় ও মূল উৎপত্তি সংক্রান্ত পদ্ধতিতে কোন একটি শব্দের অর্থ তার মূল উৎপত্তির সাহায্যে বাখ্যাত হয়। বৃহদারণ্যক উপনিষদে বলা হয়েছে যে, ‘পুরুষ’ হলো পুরশিয়ঃ অর্থাৎ হৃদয়পুরে শয়নকারী। এ ধরনের উদাহরণ অন্যান্য উপনিষদেও দেখা যায়।
৩. পৌরণিক কাহিনীমূলক পদ্ধতি (Mythical method) : উপনিষদে পৌরণিক কাহিনীমূলক পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়েছে শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে। যেমন- ঐতরেয়োপনিষদে বলা হয়েছে, কিভাবে আত্মা মস্তিকে অনুপ্রবিষ্ঠ হয়ে জীবত্মারারূপে ব্যক্তির মধ্যে স্বাতন্ত্র্য লাভ করেছে। সময় সময় ব্যঙ্গ করার জন্যও কাহিনীর অবতারণা করা হয়েছে।
৪. উপমামূলক পদ্ধতি (Analogical method) : যেসব বিষয় যুক্তির সাহায্যে ব্যাখ্যা করা যায় না, সেগুলো উপমার সাহায্যে বাখ্যা করা হয়েছে। যেমন-বৃহদারণ্যক উপনিষদের এক জায়গায় বলা হয়েছে ‘অতিভারাক্রান্ত শকট যেমন উচ্চ শব্দ করতে করতে যায় ঠিক তেমনি এ শরীরাধিষ্ঠিত জীবাত্মা যখন উর্ধ্বশ্বাসী হন, তখন পরমাত্মার দ্বারা অধিষ্ঠিত হয়ে শব্দ করতে যান।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, উপনিষদেই ভারতীয় দার্শনিক চিন্তার প্রথম উম্মেষ ঘটে। পূর্ববর্তী যুগের ক্লান্তিকর যজ্ঞীয় জটিলতা, কর্মকাণ্ড সংক্রান্ত চুলচেরা বিচার ইত্যাদি থেকে মুক্তির উপায় এবং চিন্তার জগতে এক নতুন পরিমণ্ডলের সন্ধান পাওয়া যায় উপনিষদে। কোন কোন উপনিষদ থেকে সমকালীন সামাজিক জীবনেরও কিছু ইঙ্গিত পাওয়া যায়। অনেকের মতে উপনিষদে বিজ্ঞান চেতনার সর্বপ্রথম উম্মেষের পরিচয় পাওয়া যায়।