উপজেলা পরিষদের গঠন, কার্যাবলি ও আয়ের উৎস সম্পর্কে আলোচনা কর ।

অথবা, উপজেলা পরিষদের গঠন, কার্যাবলি ও আয়ের উৎস সম্পর্কে বর্ণনা কর।
অথবা, উপজেলা পরিষদের গঠন, কার্যাবলি ও তহবিল গঠন সম্পর্কে আলোচনা কর।
অথবা, উপজেলা পরিষদের গঠন, কার্যাবলি ও তহবিল গঠন সম্পর্কে বর্ণনা দাও।
অথবা, উপজেলা পরিষদের গঠন, কার্যাবলি ও আয়ের উৎস সম্পর্কে যা জান লিখ।
অথবা, উপজেলা পরিষদের গঠন, কার্যাবলি ও তহবিল গঠন প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : জেলা প্রশাসনের পরেই উপজেলা পরিষদ আমাদের দেশের প্রশাসন ব্যবস্থার একটি উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে আছে। পল্লি এলাকার প্রশাসন, শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষা, উন্নয়ন ইত্যাদি বিষয়ে উপজেলা
পরিষদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
উপজেলা পরিষদের গঠন : উপজেলা পরিষদ আইন ১৯৯৮ এবং সংশোধন আইন, ২০০৮ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ব্যক্তিগণ সমন্বয়ে উপজেলা পরিষদ গঠিত হবে। যথা :
ক. চেয়ারম্যান।
খ. দুইজন ভাইস চেয়ারম্যান, যার মধ্যে একজন মহিলা হবেন।
গ. উপজেলার এলাকাভুক্ত প্রত্যেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বা সাময়িক চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বপালনকারী ব্যক্তি।
ঘ. উপজেলার এলাকাভুক্ত প্রত্যেক পৌরসভা, যদি থাকে এর মেয়র বা সাময়িকভাবে মেয়রের দায়িত্ব পালনকারী ব্যক্তি এবং
ঙ. ইউনিয়ন ও পৌরসভার মহিলা সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত উপজেলার মোট সদস্যদের এক-তৃতীয়াংশ সংরক্ষিত মহিলা সদস্য।
উল্লেখ্য যে, উল্লিখিত চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানগণ নির্বাচন কমিশন কর্তৃক প্রণীত ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ভোটারদের দ্বারা নির্বাচিত কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত সময়, স্থান ও পদ্ধতিতে গোপন ব্যালটের মাধ্যমে সরাসরি নির্বাচিত হবেন। কোন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান এর পদসহ শতকরা ৭৫ ভাগ সদস্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে এবং
নির্বাচিত সদস্যদের নাম সরকারি গেজেটে প্রকাশিত হলে পরিষদ আইনের অন্যান্য বিধান সাপেক্ষে যথাযথভাবে গঠিত হয়েছে বলে বিবেচিত হবে।
উপজেলা পরিষদের কার্যাবলি : উপজেলা পরিষদ আইন অনুযায়ী উপজেলা পরিষদ নিম্নোক্ত কার্যাদি সম্পাদন করে থাকে-
পাঁচসালা ও বিভিন্ন মেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরি করা। পরিষদের নিকট হস্তান্তরিত বিভিন্ন দপ্তরের কর্মসূচি বাস্তবায়ন এবং উক্ত দপ্তরের কাজকর্মসমূহের তত্ত্বাবধান ও
৪. ভূ-উপরিস্থ পানি সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য সরকারের নির্দেশনা অনুসারে উপজেলা পরিষদ ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন । সমন্বয় করা।
আন্তঃ ইউনিয়ন সংযোগকারী রাস্তা নির্মাণ, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ করা।
৮. জনস্বাস্থ্য, পুষ্টি ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা নিশ্চিতকরণ। স্যানিটেশন ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নতি সাধন এবং সুপেয় পানীয় জলের সরবরাহ ব্যবস্থা গ্রহণ । উপজেলা পর্যায়ে শিক্ষা প্রসারের জন্য উদ্বুদ্ধকরণ এবং সহায়তা প্রদান। কুটির ও ক্ষুদ্র শিল্প স্থাপন ও বিকাশের লক্ষ্যে কার্যক্রম গ্রহণ । সমবায় সমিতি ও বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের কাজে সহায়তা প্রদান এবং কাজে সমন্বয়সাধন।
১০. মহিলা, শিশু, সমাজকল্যাণ এবং যুব, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে সহায়তা প্রদান এবং বাস্তবায়ন করা।
১১. উপজেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নসহ পুলিশ বিভাগের কার্যক্রম আলোচনা এবং নিয়মিতভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রতিবেদন প্রেরণ ।
১২. আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য নিজ উদ্যোগে কর্মসূচি গ্রহণ, বাস্তবায়ন এবং এতদসম্পর্কে সরকারি কর্মসূচি বাস্তবায়নে সরকারকে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান।
উপজেলা পরিষদের আয়ের উৎস : উপজেলা পরিষদ নিম্নোক্ত খাত হতে আয় করতে পারবে।
১. উপজেলার আওতাভুক্ত এলাকায় অবস্থিত সরকার কর্তৃক নির্ধারিত হাট-বাজার, হস্তান্তরিত জলমহল ও বা ফেরিঘাট হতে ইজারালব্ধ আয়।
২. যে সকল উপজেলায় পৌরসভা গঠিত হয়নি সেখানে সীমানা নির্ধারণপূর্বক উক্ত সীমানার মধ্যে অবস্থিত ব্যবসা- বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান ও শিল্পকারখানার উপর ধার্যকৃত কর।
৩.ক. যে সকল উপজেলায় পৌরসভা নেই সেখানে থানা সদরে অবস্থিত সিনেমার উপর কর;
খ. নাটক, থিয়েটার ও যাত্রার উপর করের অংশ; মাইন
৪. রাস্তা আলোকিতকরণের উপর ধার্যকৃত কর।
৬.বেসরকারিভাবে আয়োজিত মেলা, প্রদর্শনী ও বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানের উপর ধার্যকৃত ফি । ইউনিয়ন পরিষদের নির্ধারিত খাত এবং সংশ্লিষ্ট উপজেলার আওতা বহির্ভূত খাত ব্যতীত বিভিন্ন ব্যবসা, বৃত্তি ও. পেশার উপর পরিষদ কর্তৃক প্রদত্ত লাইসেন্স ও পারমিটের উপর ধার্যকৃত ফি ।
৭. পরিষদ কর্তৃক প্রদত্ত সেবার উপর ধার্যকৃত ফিস ।
৮. উপজেলা এলাকাভুক্ত সম্পত্তি হস্তান্তর বাবদ আদায়কৃত রেজিস্ট্রেশন ফিসের ১% এবং আদায়কৃত ভূমি উন্নয়ন করের ২% অংশ।
৯. সরকার কর্তৃক সময়ে সময়ে নির্দেশিত অন্য কোন খাতের উপর আরোপিত কর, রেইট, টোল, ফিস বা অন্য কোন উৎস হতে অর্জিত আয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, উপজেলা পরিষদের তহবিলে জমাকৃত অর্থ কোন সরকারি ট্রেজারি বা ট্রেজারির কার্য পরিচালনাকারী কোন ব্যাংকে জমা রাখা হবে। প্রতি অর্থ বছর শুরু হবার ষাট দিন পূর্বে পরিষদ উক্ত বছরের আয়ব্যয় সংবলিত বাজেট প্রণয়ন করবে। পরিষদের আয়ব্যয়ের হিসাব বিধিমত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নিরীক্ষিত হবে।