অথবা, উদ্দীপক কী? উদ্দীপকের শ্রেণিবিভাগ আলোচনা কর।
অথবা, উদ্দীপক কী? উদ্দীপক কত প্রকার ও কী কী? ব্যাখ্যা কর।
অথবা, উদ্দীপক কাকে বলে? উদ্দীপকের শ্রেণিবিন্যাস ব্যাখ্যা কর।
অথবা, উদ্দীপকের সংজ্ঞা দাও। উদ্দীপকের শ্রেণিবিভাজন আলোচনা কর।
অথবা, উদ্দীপক কী? উদ্দীপকের শ্রেণিবিভাগ বা প্রকারভেদ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর।। ভূমিকা : আচরণের শ্রেণিবিভাগের সমস্যাটি সমাধান করার জন্য কোন কোন মনোবিজ্ঞানী একটি নতুন সমাধান দিয়েছেন। তাঁরা আচরণকে সরল ও জটিল এই দুই শ্রেণিতে ভাগ করেছেন। তারা বলেন যে, আচরণ মাত্রই কোন না কোন উদ্দীপকের প্রতি প্রতিক্রিয়া। উদ্দীপকের সাথে যখন কোন প্রতিক্রিয়ার সম্বন্ধ হয় তখন তা অপেক্ষাকৃত স্থায়ী হয়।এ ধরনের সংযোগই উদ্দীপক প্রতিক্রিয়া সংযোগ। যেমন- গুলির শব্দ শুনে দৌড়ে পালানো। এটি অভিজ্ঞতালব্ধ। আমাদের অনেক শিক্ষণই উদ্দীপক প্রতিক্রিয়া সংযোগ।
উদ্দীপক : সাধারণ অর্থে উদ্দীপক বলতে বুঝায় যা উজ্জীপিত বা উত্তেজিত করে। তাহলে উদ্দীপক নিশ্চয়ই কোন শক্তি যা উত্তেজনা ঘটায়।
মানবজীবনের একটি মূল ক্রিয়া বা বৃত্তির নাম সংবেদন। সংবেদনে দেখা, শোনা, স্পর্শ করা, স্বাদ গ্রহণ করা, গন্ধ নেয়া প্রভৃতি ঘটে উদ্দীপকের উত্তেজনায়। যেমন- একটি রং বা বর্ণ দেখলাম। এ বর্ণ দেখা রূপ সংবেদন ঘটে ঐ বর্ণের চক্ষুকে উত্তেজিত করার ফলে। এক্ষেত্রে বর্ণটি উহার দর্শন সংবেদনের উদ্দীপক। বর্ণটির উপস্থিতিতে ইহার সন্নিহিত ইথার আন্দোলিত হয়ে নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্য এবং উচ্চতাসম্পন্ন তরঙ্গ সৃষ্টি করে। ঐ তরঙ্গ চক্ষুর বিভিন্ন স্তর অতিক্রম করে অক্ষিপটের পীতবিন্দু সন্নিহিত দর্শন নার্ভের বহিঃপ্রান্তকে উদ্দীপিত বা উত্তেজিত করে। এ উত্তেজনা দর্শন নার্ভের প্রবাহ রূপে অগ্রসর হয়ে মস্তিষ্কের দর্শনকেন্দ্রস্থ দর্শন নার্ভের অন্তঃপ্রান্তে পৌঁছায়। এ পর্যন্ত উত্তেজকরূপ হলো বর্ণটির ক্রিয়া। এ ক্রিয়া অবশ্যই কোন শক্তির। তাই উদ্দীপক যে একটি শক্তি তাতে কোন সন্দেহ নেই।
উদ্দীপকের প্রকারভেদ : উদ্দীপক বিভিন্ন প্রকার হয়ে থাকে। যেমন- ভৌত, বৈদ্যুতিক, রাসায়নিক প্রভৃতি। বর্ণ সংবেদনের বেলায় যেমন বর্ণ এবং ইথার তরঙ্গের আকারে উহার চক্ষুকে উত্তেজিত করা একটি ভৌত উদ্দীপকের উদাহরণ।
আবার কোন গন্ধ দ্রব্যের গ্যাসীয় কণার মাধ্যমে নাসিকাকে উত্তেজিত করা ও ভৌত উদ্দীপকের উদাহরণ কিন্তু কোন খাদ্যের লালাসিক্ত হয়ে জিহ্বাকে উদ্দীপিত করা একটি রাসায়নিক শক্তির উদাহরণ। এসব প্রকারভেদ পদার্থ-বৈজ্ঞানিক।কিন্তু যেহেতু আমাদের বিষয় পদার্থবিদ্যা নয়, মনোবিদ্যা, সেহেতু উদ্দীপকের প্রকারভেদ মনোবৈজ্ঞানিক হওয়া বাঞ্ছনীয়।
মনোবৈজ্ঞানিক দিক থেকে বলা যায় যে, উদ্দীপক দুই প্রকার। যথা : ১. পর্যাপ্ত উদ্দীপক ও ২. অ-পর্যাপ্ত উদ্দীপক।
১. পর্যাপ্ত উদ্দীপক : যে উদ্দীপক ইন্দ্রিয়কে উত্তেজিত করে সংবেদন উৎপন্ন করবার পক্ষে যথেষ্ট, তাকে ঐ ইন্দ্রিয়ের ইথার তরঙ্গ চক্ষুকে উত্তেজিত করে দর্শন সংবেদন,এবং একটি বিশেষ সংবেদনের পর্যাপ্ত উদ্দীপক বলে। যেমন
বায়ুতরঙ্গ কর্ণকে উত্তেজিত করে শব্দ সংবেদন, কোন দ্রবণীয় পদার্থ জিহ্বার সংস্পর্শে এসে স্বাদ সংবেদন এবং গ্যাসীয় পদার্থ নাসিকার ঝিল্লীতে উত্তেজিত করে ঘ্রাণ সংবেদন ঘটাবার পক্ষে পর্যাপ্ত উদ্দীপক।
২. অ-পর্যাপ্ত উদ্দীপক : যে উদ্দীপক স্বভাবত কোন সংবেদন বা প্রতিক্রিয়া উৎপন্ন করবার পক্ষে যথেষ্ট নয়। সেই উদ্দীপকের ঐ প্রতিক্রিয়ার অ-পর্যাপ্ত উদ্দীপক বলে। যেমন- আঘাত বা আঘাতে আশঙ্কা ব্যথা সংবেদনের পর্যাপ্ত উদ্দীপক কিন্তু চক্ষু গোলকে আঘাত লাগলে, ঐ আঘাত চক্ষুতে শুধু আঘাত সংবেদনই উৎপন্ন করে না আলোক সংবেদনই উৎপন্ন করে। এক্ষেত্রে আঘাত আলোক সংবেদনরূপ প্রতিক্রিয়ার অ-পর্যাপ্ত উদ্দীপক। আবার চর্মকে সূচীবিদ্ধ করা ব্যথা সংবেদনের পর্যাপ্ত উদ্দীপক। কিন্তু চর্মের কোন চাপ বিন্দুকে সূচীবিদ্ধ করলে ঐ স্থানে ব্যথা সংবেদন না ঘটে চাপ সংবেদন প্রতিক্রিয়াই ঘটে। অথচ চাপ সংবেদনের পর্যাপ্ত উদ্দীপক ইহা নয়। চাপ সংবেদনের পর্যাপ্ত উদ্দীপক চর্যের আকর্ষণ বা বিকর্ষণ। সুতরাং, এই স্থলে চাপবিন্দুতে সূচীতের চাপ সংবেদনের অ-পর্যাপ্ত উদ্দীপক।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, উদ্দীপক একটি উত্তেজিত অবস্থা যা প্রাণী এবং মানুষকে উত্তেজিত করে আবার উদ্দীপক নিশ্চয়ই কোন শক্তি যা উত্তেজনা ঘটায়। উদ্দীপক বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। মাত্রাভেদ অনুসারে একই উদ্দীপকের কম বা বেশি তীব্রতা, কম বা বেশি ব্যাপকতা থাকতে পারে। সুতরাং, উদ্দীপকের প্রকারভেদের গুরুত্বকে মনোবিজ্ঞানে অস্বীকার করা যায় না।