অথবা, ঈশ্বরের অস্তিত্বের পক্ষে ন্যায় কারণ বিষয়ক মত সংক্ষেপে আলোচনা কর।
অথবা, ন্যায় দর্শনে ইশ্বরের অস্তিত্বের একটি প্রমাণ সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।
অথবা, ন্যায় দার্শনিকগণ কীভাবে কারণ বিষয়ক যুক্তি দ্বারা ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণ করেন?
উত্তর৷ ভূমিকা : ভারতীয় দর্শনের আস্তিক স্কুলসমূহের মধ্যে বস্তুবাদী দর্শন হিসেবে ন্যায়দর্শন স্বাধীন চিন্তা ও বিচারের উপর প্রতিষ্ঠিত এবং এ দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা হলেন মহর্ষি গৌতম। ন্যায়দর্শনের মূলভিত্তি হলো ‘ন্যায়সূত্র’। ন্যায়দর্শনের প্রধান আলোচ্যবিষয় হলো জ্ঞানতত্ত্ব, জীবাত্মার স্বরূপ ও যুক্তিতত্ত্ব এবং ঈশ্বরতত্ত্ব। নৈয়ায়িকগণ ঈশ্বরের অস্তিত্বের পক্ষে একাধিক যুক্তি প্রদর্শন করেন। উদয়নাচার্যের ‘ন্যায় কুসুমাঞ্জলি’ গ্রন্থে এ যুক্তিসমূহ উপস্থাপিত হয়েছে। নিম্নে ঈশ্বরের অস্তিত্বের পক্ষে ন্যায় কারণ বিষয়ক যুক্তি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
কারণ বিষয়ক যুক্তি : এ জগতের যাবতীয় যৌগিক পদার্থ, যেমন- সূর্য, চন্দ্র, গ্রহ, নক্ষত্র, সমুদ্র, পর্বত প্রভৃতি পরমাণুর সংযোগের ফলেই উদ্ভূত। এগুলো হলো কার্য, যেহেতু এগুলো অংশের সমষ্টি বা সমবায়। আবার এগুলোর অবান্ত রমহত্ত্ব বা সীমিত পরিসর আছে। এদের নিশ্চয় কারণ আছে। কারণ দু’প্রকার। যথা : নিমিত্ত কারণ এবং উপাদান কারণ বা সমবায়ী কারণ। যেমন— ঘটরূপ কার্যের উপাদান কারণ হলো মৃত্তিকা, আর নিমিত্ত কারণ হলো কুম্ভকার। জগতের যৌগিক পদার্থগুলোর উপাদান ও নিমিত্ত কারণ আছে। এদের উপাদান কারণ হলো- ক্ষিতি, অপ, তেজ ও মরুৎ পরমাণু। কিন্তু এদের নিমিত্ত কারণ এমন কেউ হবেন যার পরমাণু প্রত্যক্ষ করার ক্ষমতা আছে, যার উদ্দেশ্যসিদ্ধির ইচ্ছা ও ক্ষমতা আছে। অধিকন্তু তিনি হবেন সর্বজ্ঞা। কেননা সর্বজ্ঞা না হলে পরমাণুর মতো সূক্ষ্মবস্তুকে প্রত্যক্ষভাবে জানা সম্ভব নয়। সুতরাং এ সর্বজ্ঞ ও সর্বশক্তিমান নিমিত্ত কারণ হলো ঈশ্বর।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, নৈয়ায়িকদের ঈশ্বরতত্ত্বের আলোচনা ভারতীয় দর্শনের অমূল্য সম্পদ। ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্পর্কে তাঁদের যুক্তিগুলো এ কথাই প্রমাণ করে যে, ভারতীয় দর্শন বিচারবিযুক্তবাদী দর্শন নয়। বরং অতিসূক্ষ্ম বিচার বিশ্লেষণের উপর প্রতিষ্ঠিত। এ দৃষ্টিতে ন্যায়দর্শনের ঈশ্বরতত্ত্ব গুরুত্বের দাবিদার এবং একটি সন্তোষজনক মতবাদ।