উৎস : ব্যাখ্যেয় গদ্যাংশটুকু ত্রিশোত্তর কথাশিল্পী বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় বিরচিত ‘পুঁইমাচা’ শীর্ষক গল্প থেকে চয়ন
প্রসঙ্গ : এখানে দরিদ্র ব্রাহ্মণ সহায়হরি চাটুয্যের স্বীয় স্ত্রী অন্নপূর্ণার প্রতি যে সমীহবোধ সে সম্পর্কে উল্লিখিত মন্তব্য করা হয়েছে।
বিশ্লেষণ : বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পুঁইমাচা’ গল্পের সহায়হরি চাটুয্যে একজন দরিদ্র ব্রাহ্মণ। তারক খুড়ো খেজুর গাছ কেটেছে জানতে পেরে সহায়হরি তার কাছ থেকে রস আনার জন্য বাড়িতে প্রবেশ করে স্ত্রী অন্নপূর্ণার কাছে একটা ঘটি বা বাটি চাইলেন। অন্নপূর্ণা তখন রান্না ঘরের বারান্দায় বসে চুলে নারকেলের তেল মাখছিলেন। স্বামীকে আসতে দেখে তিনি গায়ের কাপড় টেনে দেয়ার পর স্বামীর প্রস্তাবে বিস্মিত হয়ে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলেন। সহায়হরি স্ত্রীর নির্লিপ্ততা দেখে বললেন, “কি হয়েছে, বসে রইলে যে? দাও না একটা ঘটি।” অন্নপূর্ণা খানিকক্ষণ চেয়ে রইলেন। পরে অত্যন্ত শান্ত স্বরে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তুমি মনে মনে কি ঠাউরেছ বলতে পারো?’ স্ত্রীর এই অতিরিক্ত রকমের শান্ত সুরে সহায়হরির মনে ভীতির সঞ্চার হলো। কেননা স্ত্রীকে তিনি ভালো করে চিনতেন। অন্নপূর্ণার মধ্যে যখন ক্রোধের সঞ্চার হতো তখন প্রথমত তিনি শান্তভাব ধারণ করতেন। সহায়হরি জানতেন এই শান্তভাব ঝড়ের পূর্বলক্ষণ। তিনি বুঝতে পারলেন কিছুক্ষণের মধ্যেই অন্নপূর্ণা অগ্নিমূর্তি ধারণ করবেন।
মন্তব্য : সহায়হরি তাঁর স্ত্রী অন্নপূর্ণার গতিবিধি ভালো করেই জানতেন। তাই স্ত্রীর শান্ত স্বভাব প্রত্যক্ষ করে তিনি তাঁর প্রতি সমীহ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে অপেক্ষা করছিলেন।