উৎস : আলোচ্য অংশটুকু বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক আবুল মনসুর আহমদ রচিত ‘হুযুর কেবলা’ শীর্ষক ছোটগল্প থেকে চয়ন করা
প্রসঙ্গ : ধর্মের আজগুবি কাহিনি শুনিয়ে মুরিদদের ভেতর ভীতি সৃষ্টি করার কৌশল হিসেবে পীর সাহেব আলোচ্য উক্তিটির
অবতারণা করেছেন।
বিশ্লেষণ : পীর সাহেব ছিলেন একজন ধর্ম ব্যবসায়ী। তাঁর নিজের প্রভাব প্রতিপত্তি ও ব্যবসায়কে টিকিয়ে রাখার জন্য মুরিদদের তিনি নানাভাবে বোকা বানিয়েছেন। হাদিস এবং কুরআনের অপপ্রশ্ন করে মুরিদদের ভীত সন্ত্রস্ত করেছেন। নিজেকে একজন প্রকৃত এবং শক্তিমান পীর হিসেবে জাহির করতে গিয়ে তিনি তাঁর অনেক অলৌকিক ক্ষমতার কথা উল্লেখ করেছেন। ভণ্ডামীর শ্রেষ্ঠ নিদর্শন হিসেবে আমরা লক্ষ করি; একবার তিনি কিছুক্ষণ চোখ বুজে থেকে হঠাৎ চিৎকার করে উঠেন এবং বলেন- ‘কুদরতে ইযদানী, কুদরতে ইযদানী’। মুরিদদের পীড়াপীড়িতে তাঁর এ কথা বলার কারণ হিসেবে তিনি জানান এরই মধ্যে তারা বহু বছর পার করে এসেছে। তিনি এ কথার প্রশ্ন দেন না তবে গোপনীয়তা রক্ষা করে মুরিদদের তাঁর একটা নিজের অলৌকিক কাহিনি শোনান। তার সারমর্ম হলো এই একবার তিনি এলমে লাদুন্নি হাসেল করবার আগে লওহে মাহফুযে উপস্থিত হয়েছিলেন। তিনি নূরে ইযদানী দেখে বেহুশ হয়ে পড়েছিলেন। তাঁর রুহু তাঁকে ছেড়ে গিয়েছিল। তারপর তাঁর মুর্শেদ লওহে মাহফুয থেকে আবার তাঁর রুহু এনে তাকে জিন্দা করেন। তিনি এ গল্প বলে মুরিদদের কত বৎসর যাবৎ তারা এখানে বসে আছে তা একটা বিবরণ দেন। তিনি বলে সাদুল্লাহ এখানে আসবার পর আমি আমার রুহুকে ছেড়ে দিয়েছিলাম। সে তামাম দুনিয়া ঘুরে সাত হাজার বছর কাটিয়ে তারপর আমার জেসমে পুনরায় প্রবেশ করেছে। এ সাত হাজার বছর পৃথিবীর যেসব পরিবর্তন হয়েছে সব তাঁর মনে আছে বলে তিনি দাবি করেন। এটুকু বলেই তিনি মুরিদদের উদ্দেশ্যে বলেন এর বেশি আর তিনি বলবে না। কেননা এর বেশি শুনলে তাদের কলব ফেটে যাবে।
মন্তব্য : ভণ্ডপীর তাঁর অসীম ক্ষমতার গল্প দিয়ে মুরিদদের প্রতি তাঁর ভক্তি বৃদ্ধির চেষ্টা করেছেন এখানে।