অথবা, ইয়াহিয়া খান কিভাবে ক্ষমতায় আসীন হয় তা সংক্ষেপে বিশ্লেষণ কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : আইয়ুব খানের পতনের পর ইয়াহিয়া খান ক্ষমতায় আসে। ইয়াহিয়া খান ১৯৬৯ সালের ২৫ মার্চ ক্ষমতা গ্রহণ করে। সে একটা নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠিত করে। এতে আওয়ামী লীগ বিজয় লাভ করে। কিন্তু ইয়াহিয়া ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা শুরু করে। তবে পূর্ব বাংলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অসহযোগ
আন্দোলনের ডাক দেয়। অবশেষে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলার মানুষ বিজয়ী হয়।
ইয়াহিয়ার ক্ষমতায় আসীন: আইয়ুব সরকার যখন পূর্ব বাংলায় দমন পীড়নে মত্ত তখন শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেন। ফলে আইয়ুব সরকার তাকে দমানোর জন্য আগরতলা মামলা দায়ের করে। এ মামলায় শেখ মুজিবুর রহমানসহ ৩৫ জন আসামি করা হয়। ফলে বাংলার সাধারণ নাগরিক, ছাত্র সমাজ শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্ত করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ে। ফলে আন্দোলনের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ দ্রুত চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। গণঅভ্যুত্থানে ভীত সন্ত্রস্ত আইয়ুব সরকার আগরতলা মামলা বাতিলসহ শেখ মুজিবুর রহমানকে নিঃশর্ত মুক্তি প্রদান করে। তারপরও শেষ রক্ষা হয়নি পাকিস্তান তথাকথিত ‘লৌহমানব’ জেনারেল আইয়ুব খানের। ১৯৬৯ সালের ২৫ মার্চ তিনি ক্ষমতা ত্যাগ করতে বাধ্য হন। এ সময় ইয়াহিয়া খান ক্ষমতা দখল করে নেয়। ইয়াহিয়া খানের ক্ষমতায় আরোহণের প্রেক্ষাপট নিচে আলোচনা করা হলো :
১. ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন : গণতান্ত্রিক সংগ্রাম পরিষদ গঠনের পূর্বে পাকিস্তানের ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন ও জাতীয় ছাত্র ফেডারেশন নিয়ে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয় ১৯৬৬ সালে ৬ জানুয়ারি। আগরতলা মামলা প্রত্যাহার ও শেখ মুজিবুর রহমানসহ নেতাদের মুক্তি ও আইয়ুব সরকারের পতনের জন্য গণআন্দোলন শুরু হয় ফলে আইয়ুব সরকারের পতন হয় ও ইয়াহিয়া ক্ষমতায় আসে।
২. ছয় দফার ভূমিকা : ইয়াহিয়া ক্ষমতায় আসার পূর্বে আইয়ুব খান ক্ষমতায় ছিল। সে সময় পূর্ব বাংলার প্রাণের দাবি উত্থাপন করে শেখ মুজিবুর রহমান যা ঐতিহাসিক ছয় দফা নামে পরিচিত। এ ছয় দফা আদায়ের পথ বেয়ে আইয়ুব সরকারের পতন ও ইয়াহিয়া সরকার ক্ষমতায় আসীন হয়।
- National Democratic Front গঠন : আইয়ুব যখন সকল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করেছিল, তখন পূর্ব বাংলায় National Democratic Front (NDF) গঠিত হয়। এতে আইয়ুব খানের পতনের পথ প্রশস্ত হয় এবং পরবর্তীতে ইয়াহিয়া খান ক্ষমতায় আসে।
৪. আসাদুজ্জামানের ও ড. শামসুজ্জোহার মৃত্যু : ১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারির আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আসাদুজ্জামান ও ১৯৬৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. শামসুজ্জোহা পুলিশের গুলিতে মারা যান। ফলে আন্দোলন তীব্র হতে তীব্রতর হয়, আইয়ুব খানের পতন হয় ও ইয়াহিয়া খান
ক্ষমতায় আসে।
৫. ছাত্রদের ১১ দফা: আইয়ুব শাসন আমলে ছাত্ররা ১১ দফা দাবি উত্থাপন করে। আইয়ুব সরকার তা না মানলে আন্দোলন শুরু হয় ও গণআন্দোলনে পরিণত হয়। ফলে আইয়ুব সরকার ক্ষমতা হস্তান্তর করতে বাধ্য হয়। আইয়ুব খান ১৯৬৯ সালের ২৫ মার্চ রাতে ক্ষমতা ত্যাগ করে। ইয়াহিয়া পরের দিন ক্ষমতা গ্রহণ করে।
৬. আইয়ুব সরকারের বিরুদ্ধে অসন্তোষ : আইয়ুব সরকার জনগণের সকল অধিকার নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। কিন্তু জনগণের চাওয়া পাওয়া পূরণে ব্যর্থ হয় এ সরকার। ফলে মামলা-হামলার পথ বেছে নেয়। এতে জনগণ তার বিরুদ্ধে অসন্তোষ প্রকাশ করে। এতে তার ক্ষমতা ইয়াহিয়া খানের কাছে দিতে বাধ্য হয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, আইয়ুব সরকারের ব্যর্থতা ইয়াহিয়াকে সহজেই ক্ষমতায় পদার্পণ করায়। আইয়ুব খান তার শাসন আমলে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থ হলে জনগণ তার প্রতি বিরূপ প্রক্রিয়া ব্যক্ত করে। এতে করে, গণআন্দোলনের মুখে আইয়ুব খান পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। এর ফলে ইয়াহিয়া খান ক্ষমতায় আসে। এর মাধ্যমে এক জালিমের জায়গায় পদার্পণ করে আরেক জালেম।