ইবনে সিনার মনোবিদ্যা ও অধিবিদ্যা সম্পর্কে সংক্ষেপে লিখ ।

অথবা, ইবনে সিনা মনোবিদ্যা ও অধিবিদ্যা সম্পর্কে কী বলেন?
অথবা, ইবনে সিনার মনোবিদ্যা ও অধিবিদ্যা সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখ।
অথবা, মনোবিদ্যা ও অধিবিদ্যা সম্পর্কে ইবনে সিনা কিরূপ মতবাদ দেন?
উত্তর৷ ভূমিকা :
প্রাচ্যের অন্যতম মৌলিক চিন্তাবিদ ছিলেন ইবনে সিনা। তিনি অল্প বয়সেই অসামান্য মেধা ও প্রখর স্মৃতিশক্তি বলে বহু বিষয়ে পান্ডিত্য অর্জন করেন। তিনি কৈশোরেই হাকিম উপাধিতে ভূষিত হন। ইবনে সিনার জীবনীকার ইবনে খাল্লিকান বলেন যে, মাত্র ষোল বছর বয়সেই ইবনে সিনার নিকট মশহুর চিকিৎসাবিদগণ চিকিৎসাশাস্ত্রের
ও তাঁর অভিনব চিকিৎসা প্রণালীতে শিক্ষা গ্রহণ করতে আসতেন।
ইবনে সিনার মনোবিদ্যা : ইবনে সিনা দেহ ও আত্মার দ্বৈতবাদের কথা বলেছেন। আত্মা স্বতন্ত্র এবং এটি দেহ হতে সম্পূর্ণ পৃথক সত্তা। আকস্মিকভাবে আত্মা মানবদেহের সাথে সংযুক্ত রয়েছে। এটি দেহের অবিচ্ছেদ্য অংশ নয়। প্রতিটি আত্মা বিশ্বাত্মা হতে এসেছে। আত্মা একটি বিশেষ বা স্বতন্ত্র দ্রব্য। আত্মাকে ইবনে সিনা তিন ভাগে ভাগ করেছেন । যথা : ১. উদ্ভিদ আত্মা ২. জীবাত্মা ও ৩. মানবাত্মা ।
১. উদ্ভিদ আত্মা : উদ্ভিদ আত্মার রয়েছে তিনটি বৃত্তি। যথা : বর্ধন শক্তি, বিকাশ শক্তি ও পুনরুৎপাদন শক্তি।
২. জীবাত্মা : জীবাত্মার রয়েছে প্রধানত দুটি বৃত্তি। প্রথমটি হলো সঞ্চালন শক্তি। এর রয়েছে দুটি বৃত্তি। যথা :
ক্ষুন্নিবৃত্তি ও ক্রিয়াকর্ম । দ্বিতীয়ত হলো প্রত্যক্ষণ শক্তি। এর রয়েছে দুটি দিক। যথা : ক্ষুন্নিবৃত্তি ও আত্মঃইন্দ্ৰিয়। বহিঃইন্দ্ৰিয়
হলো দর্শন, শ্রবণ, স্পর্শ, স্বাদ, ঘ্রাণ। আর আন্তঃ ইন্দ্রিয়গুলো হলো সাধারণ বুদ্ধি, কল্পনা, চিন্তামূলক শক্তি, মূল্য নির্ধারক
শক্তি ও স্মৃতি।
৩. মানবাত্মা : মানবত্মার রয়েছে দুটি বৃত্তি। যথা ঃ প্রথমটি হলো বিশুদ্ধ বুদ্ধি, যা মূর্ত চিন্তা করে আর দ্বিতীয়টি হলো ব্যবহারিক বুদ্ধি, যা দৈহিক মানদন্ড সম্পর্কে আলোচনা করে।
ইবনে সিনার অধিবিদ্যা : ইবনে সিনা আধ্যাত্মিক শক্তিকে পার্থিব শক্তির ঊর্ধ্বে উন্নীত করেছিলেন। তাঁর মতে, খোদা শ্রেষ্ঠতম আধ্যাত্মিক সত্তা। তিনি সমস্ত জড়শক্তির উর্ধ্বে। আত্মা জড় ও আধ্যাত্মিক শক্তির মধ্যে বিদ্যমান দূরত্বকে লাঘব করে। আত্মার দ্বারা আধ্যাত্মিক ও জড়াত্মক উভয় শক্তির সমন্বয় সাধিত হয়েছে। সত্তার আলোচনায় ইবনে সিনা সম্ভাব্য ও নিশ্চয়াত্মক সত্তা নামে দুটি সত্তার কথা বলেছেন। সম্ভাব্য সত্তা নিশ্চয়াত্মক সত্তার উপর নির্ভরশীল। নিশ্চয়াত্মক সত্তা কারও উপর নির্ভরশীল নয়। সে নিজেই স্বয়ংসম্পূর্ণ। ইবনে সিনা সত্তার মত অস্তিত্বকেও দুই ভাগে ভাগ করেন। যথা : সম্ভাব্য অস্তিত্ব ও অনিবার্য অস্তিত্ব। অনিবার্য সত্তা এক ও অদ্বিতীয়। এর মধ্যে বহুত্ব নেই। তাই যদি হয় তাহলে বহুত্বের ব্যাখ্যা কফ হতে পারে? এ প্রসঙ্গে ইবনে সিনার মত হলো বিশ্বাত্মার ধারণার মধ্যেই আছে বহুত্বের ধারণা। এ বিশ্বাত্মা বা World Soul বৈচিত্র্য বা বহুত্বের উদ্ভব হয়েছে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ইবনে সিনা ছিলেন একাধারে দার্শনিক, চিকিৎসাবিদ ও কবি। তাঁর জীবন ছিল বৈচিত্র্যময় ঘটনাবলির সমষ্টি। অল্প বয়সে চিকিৎসা শাস্ত্রে ব্যুৎপত্তিমূলক জ্ঞান অর্জন করেন। তিনি মনোবিদ্যা ও অধিবিদ্যায় অসামান্য পান্ডিত্য অর্জন করেন। তাই মুসলিম দর্শনে তাঁর অবদানকে অস্বীকার করা যায় না।