অথবা, অধিবিদ্যায় ইবনে সিনার অবদান কী?
অথবা, ইবনে সিনা কিভাবে অধিবিদ্যা ব্যাখ্যা করেন?
অথবা, অধিবিদ্যায় ইবনে সিনা কিরূপ মতবাদ দেন?
অথবা, ইবনে সিনার অধিবিদ্যা সংক্ষেপে তুলে ধর।
উত্তর৷ ভূমিকা : মুসলিম জাহানের অন্যতম শ্রেণি চিন্তাবিদ ইবনে সিনা তাঁর জ্ঞানের গভীরতা, চিন্তাশক্তির প্রখরতা এবং উদারনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা বিশ্বের সমস্ত জ্ঞানভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করেছেন। তিনি পাশ্চাত্য দার্শনিক এরিস্টটলের একজন সফল ভাষ্যকার। তিনি তাঁর উৎকৃষ্ট রচনা করেন। সকলের নিকট গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেন। জ্ঞানের অন্যান্য শাখার পাশাপাশি তিনি অধিবিদ্যক আলোচনায়ও অসামান্য অবদান রেখেছেন।
ইবনে সিনার অধিবিদ্যা : ইবনে সিনা অধিবিদ্যায় স্বতন্ত্র চিন্তাভাবনার অধিকারী ছিলেন। তিনি আধ্যাত্মিক শক্তিকে পার্থিব শক্তির বহু ঊর্ধ্বে উন্নীত করেছিলেন। তিনি আল্লাহকে শ্রেষ্ঠতম আধ্যাত্মিক সত্তা হিসেবে সমস্ত জড়ের উপরে স্থান দিয়েছেন। তিনি তাঁর অধিবিদ্যায় বিভিন্ন বিষয় আলোচনা করেছেন।
সম্ভাব্য ও নিশ্চয়াত্মক সত্তা : ইবনে সিনা দু’ধরনের সত্তার কথা বলেছেন। যথা : সম্ভাব্য সত্তা ও নিশ্চয়াত্মক সত্তা। সম্ভাব্য সত্তা এমন সত্তা যা অন্যান্য সত্তার উপর নির্ভর করে। কিন্তু নিশ্চয়াত্মক সত্তা এমন সত্তা, যা অন্য কোন বিন্দুর উপর নির্ভরশীল নয়। ইবনে সিনার মতে, নিশ্চয়াত্মক সত্তার অস্তিত্ব ও গুণ এক ও অভিন্ন।
সম্ভাব্য ও অনিবার্য অস্তিত্ব : ইবনে সিনার মতে অস্তিত্ব দুই প্রকার-সম্ভাব্য অস্তিত্ব এবং অনিবার্য অস্তিত্ব। সম্ভাব্য অস্তিত্ব সসীম ও সাপেক্ষ সত্তাকে বোঝায় এবং অনিবার্য অস্তিত্ব বলতে এমন অস্তিত্বকে বোঝায় যার অস্তিত্ব ছাড়া অন্য কোন কিছুর অস্তিত্ব সম্ভব নয়।
বহুত্বের ধারণা : অনিবার্য সত্তা এক ও অদ্বিতীয়। ইবনে সিনার মতে শুধুমাত্র বিশ্বাত্মার মধ্যেই রয়েছে বহুত্বের ধারণা। এ বিশ্বাত্মা থেকেই বহুত্বের ধারণা বা বৈচিত্র্যের ধারণা এসেছে।
সত্তার অস্তিত্ব : ইবনে সিনার মতে, প্রত্যেক সত্তা যে ব্যক্তি কিংবা বস্তু যাই হোক না কেন, তার অস্তিত্ব আল্লাহর ইচ্ছার মাধ্যমে লাভ হয়। তাঁর মতে জগতে মঙ্গল ও অমঙ্গল উভয়েরই অপরিহার্যতা রয়েছে। ইবনে সিনার মতে, জগতে যদি মন্দ বা অকল্যাণ না থাকতো তবে সম্ভবত সেটাই হতো আমাদের জন্য অকল্যাণ। তিনি মনে করেন, আল্লাহ কেবল সার্বিককেই জানেন বিশেষকে নয়।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বলতে পারি যে, ইবনে সিনা ইসলামের মূল আদর্শের সাথে সামঞ্জস্য রেখে অধিবিদ্যাকে আলোচনায় প্রবৃত্ত হয়েছেন। তাঁর অধিবিদ্যক আলোচনা ও আত্মাতত্ত্ব অপরিহার্য সম্পর্কে সম্পর্কিত। চিনি আত্মাকে জড় ও আধ্যাত্মিক সত্তার মধ্যবর্তী বলে মনে করেন এবং আল্লাহকে সর্বোচ্চ সত্তা বলে ঘোষণা করেন।