ইবনে রুশদ এর সৃষ্টিতত্ত্ব সম্পর্কে সংক্ষেপে লিখ।

অথবা, সৃষ্টিতত্ত্ব সম্পর্কে ইবনে রুশদ এর মত লিখ।
অথবা, ইবনে রুশদের সৃষ্টিতত্ত্ব সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।
অথবা, সংক্ষেপে ইবনে রুশদের সৃষ্টিতত্ত্ব স্মপর্কে ধারণা দাও।
অথবা, সৃষ্টিতত্ত্ব সম্পর্কে ইবনে রুশদ কী বলেন সংক্ষেপে লেখ।
অথবা, ইবনে রুশদের সৃষ্টিতত্ত্ব সম্পর্কে যা জান সংক্ষেপে উল্লেখ কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : মুসলিম পাশ্চাত্য দার্শনিকদের মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী দর্শনিক ছিলেন ইবনে রুশদ। সৃষ্টি প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা মুসলিম দর্শনে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সৃষ্টি প্রক্রিয়া অনাদিকাল ধরে চলছে। জগতের সকল বস্তুর মধ্যে এক নিবিড় যোগসূত্র রয়েছে। ইবনে রুশদ তার দর্শন আলোচনায় আলকিন্দি, আল ফারাবি, ইবনে সিনা প্রমুখ
ফালাসিফা সম্প্রদায়ের দার্শনিকদের মোটামুটিভাবে সমর্থন করলেও সৃষ্টিতত্ত্বের ক্ষেত্রে তাদের থেকে স্বতন্ত্র মত প্রদান করেন।
সৃষ্টিততত্ত্ব সম্পর্কে ইবনে রুশদ : ইবনে রুশদ সৃষ্টিতত্ত্বে জগৎ যে আল্লাহ কর্তৃক সৃষ্টি তা অস্বীকার করেন না, বরং তিনি বিষয়টিকে পরিষ্কারভাবে বুঝার জন্য এর বিচারমূলক ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করেন। নিম্নে ইবনে রুশদের সৃষ্টিতত্ত্ব সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. জগৎ আল্লাহর সৃষ্টি : আল্লাহ জগৎ সৃষ্টি করেছেন তা সম্পূর্ণ নিশ্চিত। আল্লাহ জগৎকে কোন এক সময়ে শূন্য থেকে সৃষ্টি করেছেন। কুরআনে উল্লেখ আছে, “নভোমণ্ডল ও পৃথিবীকে তিনি ছয় দিনে সৃষ্টি করেছিলেন, আর তার সিংহাসন অধিষ্ঠিত ছিল পাণিতে।”
২. কার্যকারণ সম্পর্ক : ইবনে রুশদের মতে, জগতের প্রতিটি বস্তু বা বিষয় ভিন্ন ভিন্ন সময়ে সৃষ্টি হলেও একটি অপরটির সাথে সম্পর্কিত। কার্যকারণ সম্পর্ক হলো এ সম্পর্কে প্রধান সম্পর্ক। যদি কার্যকারণ সম্পর্কের অনুসরণ করে পিছনে যাওয়া যায় তাহলে আমরা একে আদিকালের ধারণায় উপনীত হই।
৩. আদিগতি : সৃষ্টিতত্ত্ব সম্পর্কে ইবনে রুশদ বলেন, জগৎ অন্তহীন গতির মাধ্যমে অনন্তভাবে ধাবমান। একটি গিত অন্যগতির উপর নির্ভরশীল । ঐ গতি আবার পূর্ববর্তী গতির উপর নির্ভরশীল। এভাবে একটি আদি গতির ধারণায় উপনীত হতে হয়।
৪. অস্তিত্বের ধারণা : ইবনে রুশদ এরিস্টটলের ন্যায় প্রতিটি অস্তিত্বের দুটি দিক বিদ্যমান রয়েছে বলে মনে করেন। যথা : আকার ও উপাদান। প্রকৃতপক্ষে আকার ও উপাদান আলাদা থাকতে পারে না।
৫. সত্তা সম্পর্কে ধারণা : ইবনে রুশদ সত্তাকে দুই ভাগে ভাগ করেছেন। যথা : সক্রিয় সত্তা ও নিষ্ক্রিয় সত্তা। সক্রিয় সত্তা চালক সত্তা যা সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে। আর নিষ্ক্রিয় সত্তা হলো চালিত সত্তা যা নিয়ন্ত্রিত হয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মুসলিম দর্শনের ইতিহাসে ইবনে রুশদের সৃষ্টি বিষয়ক মতবাদ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তাঁর সৃষ্টি তত্ত্ব পূর্ববর্তী বিভিন্ন মুসলিম দার্শনিকদের মতের চেয়ে স্বতন্ত্র এবং মৌলিক।