ইবনে রুশদের দৃষ্টিতে গাজালির মতবাদ সংক্ষেপে লিখ।

অথবা, গাজালির মতবাদ ইবনে রুশদ কিভাবে সমালোচনা করেন?
অথবা, ইবনে রুশদের দৃষ্টিতে গাজালির মতবাদ সংক্ষেপে তুলে ধর।
অথবা, ইবনে রুশদ গাজালির মতবাদের কী কী সমালোচনা করেন সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।
অথবা, ইবনে রুশদ কিভাবে গাজালির মতবাদের সমালোচনা করেন সংক্ষিপ্ত ধারণা দাও।
উত্তর৷ ভূমিকা : ইসলাম ধর্মে জ্ঞান অর্জনকে অনেকটা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। মানুষকে কুরআন ও হাদিসের বাণীতে জ্ঞান অর্জনের প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে। মুসলমানরা ইসলামের এ অন্তর্নিহিত প্রেরণা থেকে জ্ঞান
অর্জনের প্রতি উৎসাহী হয়ে উঠে। ইমাম আল-গাজালি মুসলিম দার্শনিকদের অধিকাংশ তত্ত্বের প্রতিবাদ করেন। তবে ইবনে
রুশদ গাজালির প্রতিবাদ মেনে নিতে রাজি নন। জ্ঞানবিজ্ঞানের ইতিহাসে সেটা মধ্যযুগ বলে পরিচিত। সে যুগে মুসলমানরাই জ্ঞানবিজ্ঞান চর্চাকে অগ্রগতির দিকে ত্বরান্বিত করেছেন।
ইবনে রুশদের দৃষ্টিতে গাজালির মতবাদসমূহ : আল-কিন্দি, আল-ফারাবি, ইবনে সিনা প্রমুখ ফালাসিফা সম্প্রদায়ের প্রখ্যাত দার্শনিকদের অধিকাংশ তত্ত্বকে গাজালি ভ্রান্ত বলে মনে করেন। তিনি তাঁদেরকে ইসলাম বিদ্বেষী
এমনকি কাফের বলেও মন্তব্য করেন। তাঁদের বিরুদ্ধে তিনি এক বড় রকমের তাত্ত্বিক আন্দোলনের সূচনা করেন। তাফাতুল ফালাসিফা নামক গ্রন্থে দার্শনিকদের পদস্থলন তুলে ধরার চেষ্টা করেন। ইবনে রুশদ গাজালির এ ধরনের প্রতিবাদ মেনে নেন নি। দার্শনিকদের মতবাদসমূহকে তিনি অতি গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন। তাঁর ধারণা দার্শনিকদের মতবাদসমূহ সম্পূর্ণরূপে যথার্থ না হতে পারে, দার্শনিকদের মতবাদসমূহে ভুলভ্রান্তি থাকলেও এর গুরুত্ব সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করা যায় না। যেভাবে গাজালি তাঁদেরকে সমালোচনা করেছেন তাঁর অনেক
দিককেই তিনি আপত্তিকর বলে মনে করেন। ইবনে রুশদ তাঁর “Tahafut al Tahafut’ নামক গ্রন্থে আল-গাজালির মতবাদসমূহ পর্যালোচনা করেন। তিনি এটা প্রমাণ করতে সচেষ্ট হন যে, আল-গাজালি দার্শনিকদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করেছেন তা সর্বক্ষেত্রে সঠিক নয়। গাজালির সমালোচনা করতে গিয়ে তিনি যেসব বিষয়গুলো প্রাধান্য দিয়েছেন বা গাজালির প্রতি তাঁর দৃষ্টিভঙ্গির সাধারণ দিকসমূহ নিম্নে তুলে ধরা হলো :
১. ইবনে রুশদের মতে, যেভাবে গাজালি দার্শনিকদের মতবাদসমূহ খণ্ডন করার প্রয়াস নিয়েছেন তা অধিকাংশ ক্ষেত্রে হিংসাত্মক। কারণ দার্শনিকদের মতবাদ পর্যালোচনা করতে গিয়ে গাজালি তাঁদের প্রতি স্বাভাবিক
সহানুভূতি অথবা সৌজন্যতাও দেখান নি।
২. ইবনে রুশদ মন্তব্য করেন, গাজালি দার্শনিকদের মতবাদসমূহ না বুঝেই অনেক ক্ষেত্রে তাঁদের বিরুদ্ধে আক্রমণ করেছেন। মূলত কোনকিছুকে সমালোচনা বা পর্যালোচনা করতে হলে সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে
পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকা আবশ্যক।
৩. ইবনে রুশদের অভিযোগ, তড়িঘড়ি করে গাজালি প্রচুর পরিমাণ গ্রন্থ লিখে জ্ঞানের রাজ্যে এক ধরনের বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে ফেলেছিলেন। তাঁর অধিকাংশ গ্রন্থই পর্যাপ্ত বাস্তব অভিজ্ঞতাভিত্তিক বা পাণ্ডিত্যের ফসল নয়। তিনি অনেক ক্ষেত্রেই আবেগ, অন্ধবিশ্বাসের আশ্রয় নিয়েছেন।
৪. গাজালি যেভাবে ধর্মতাত্ত্বিক অনেক বিষয় গোঁড়া ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেছেন বা আক্ষরিক অর্থেই গ্রহণ করেছেন, ইবনে রুশদ তা মেনে নেন নি।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ইবনে রুশদ ছিলেন অত্যন্ত যুক্তিনিষ্ঠ সংস্কারমুক্ত ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন একজন উঁচুমানের চিন্তাবিদ। কোন মতবাদ কট্টরভাবে বর্জন না করে অনেকটা সহমর্মিতার সাথে পর্যালোচনা করার জন্য তিনি পরামর্শ দিয়েছেন। গাজালির বিরুদ্ধে তাঁর কোন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছিল না। তিনি শুধু মনে গাজালির আরও উদার হওয়া দরকার ছিল