ইবনে বতুতার বিবরণীর আলোকে বাংলার আর্থসামাজিক অবস্থার বিবরণ দাও।

উত্তর ভূমিকা : সুজলা সুফলা, শস্য শ্যামলা বাংলা অর্থসম্পদে পরিপূর্ণ ছিল। বাংলার ধনসম্পদে মুগ্ধ হয়ে বৈদেশিক স্পরিব্রাজকরা বাংলায় আগমন করেছিলেন। ইবনে বতুতা ছিলেন স বাংলার আগমনকারী অন্যতম পরিব্রাজক। বাংলার পণ্যসামগ্রীর মূল্য এত সস্তা ছিল যা দেখে ইবনে বতুতা মুগ্ধ হন। বাংলার আর্থসামাজিক অবস্থা স্বয়ংসম্পূর্ণ ছিল।
→ বাংলার আর্থসামাজিক অবস্থা : ইবনে বতুতার বিবরণ অনুযায়ী বাংলার আর্থসামাজিক অবস্থা নিম্নে বর্ণনা করা হলো:
(ক) বাংলার অর্থনৈতিক অবস্থা : ইবনে বতুতার বিবরণ অনুযায়ী বাংলার অর্থনৈতিক অবস্থা নিম্নে বর্ণনা করা হলো :
১. কৃষি : ইবনে বতুতা বাংলার কৃষি অর্থনীতি দেখে মুগ্ধ হন। সুজলা সুফলা, শস্য শ্যামলা বাংলার প্রকৃতি দেখে ইবনে বতুতা মুগ্ধ হন। তিনি বলেন অসংখ্য নদ-নদীর দেশ বাংলা ছিল কৃষিপ্রধান দেশ। এদেশের সমতমভূমি ছিল উর্বর।
২. দ্রব্যমূল্য : ইবনে বতুতা বলেন, বাংলাতে দ্রব্যমূল্য এত কম ছিল যে পৃথিবীতে তত কম মূল্যে দ্রব্য পাওয়া যেত না। নিম্নে ইবনে বতুতার বিবরণ অনুযায়ী বাংলার দ্রব্যমূল্য-
-৩. গ্রামীণ জীবন : ইবনে বতুতা নদীবক্ষ ও নদীকূল থেকে নাগরিক জীবনের চেয়ে গ্রাম বাংলা জীবনকে উপলব্ধি করেছিলেন। গ্রামীণ বাংলার সুজলা-সুফলা, শস্য শ্যামলা, সবুজ
প্রকৃতি ঘেরা গ্রামীণ জীবন ইবনে বতুতাকে মুগ্ধ করে।
৪. মুদ্রা ব্যবস্থা : ইবনে বতুতার বিবরণ হতে তৎকালীন মুদ্রা ব্যবস্থা সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়। তার মতে ঐ সময় বাংলার মুদ্রা প্রচলিত ছিল স্বর্ণ দিনার, রৌপ্য দিনার ও রৌপ্য দিরহাম।
৫. উন্নত অর্থনৈতিক অবস্থা : ইবনে বতুতা তার বিবরণীতে বাংলার ধনসম্পদের কথা উল্লেখ করেন। তার বিবরণ হতে জানা যায় বাংলার মত তত ধন সম্পদ পৃথিবীর কোথাও নাই ।
(খ) সামাজিক অবস্থা : ইবনে বতুতার বিবরণ হতে বাংলার সামাজিক অবস্থায় বিবরণ নিম্নে বর্ণনা করা হলো :
১. হিন্দুদের আধিক্য : ইবনে বতুতার বিবরণ হতে জানা যায় তৎকালীন বাংলায় হিন্দু অধিবাসীদের অধিকার বেশি ছিল। যদিও মুসলমান শাসক ছাড়া দেশ পরিচালনা করত। হিন্দু মুসলমানদের আচার-আচরণের মধ্যে পার্থক্য বিদ্যমান ছিল ।
২. হিন্দুদের প্রকৃত অবস্থা : ইবনে বতুতার বিবরণ হতে জানা যায় তৎকালীন হিন্দু প্রজাদের শোচনীয় অবস্থা ছিল। হিন্দু
প্রজাদের উৎপাদিত ফসলের অর্ধেক সুলতান পেত আর অর্ধেক প্রজারা ভোগ করত। এছাড়া প্রজারা কর দিত।
৩. শ্রেণি ব্যবধান : সমাজের মানুষের মধ্যে শ্রেণিবিভাগ বিদ্যমান ছিল। সমাজের উচ্চ শ্রেণিভুক্ত আমির ওমরাহ এবং নিম্ন শ্রেণিভুক্ত কর্মজীবী ছিল ।
৪. দাস প্রথা : ইবনে বতুতার বিবরণী হতে জানা যায় সমাজে দাস প্রথা ছিল। তৎকালীন সময়ে ৭০ টাকায় একজন সুন্দরী যুবতী দাসী পাওয়া যেত। তাছাড়া ইবনে বতুতার সহযোগী একজন বন্ধু ১০ টাকা দিয়ে একজন দাসী ক্রয় করেন।
৫. সুফিদের প্রভাব : ইবনে বতুতার বর্ণনা হতে জানা যায় বাংলার হিন্দু মুসলিম জনগণের ওপর সুফি সাধক ও দরবেশদের প্রভাব অনেক বেশি ছিল। বাংলায় মুসলিম আধিপত্য ও ধর্ম প্রচারে শাহজালালের অবদান অনেক।
৬. নারীদের অবস্থা : ইবনে বতুতার বিবরণী হতে জানা যায় তৎকালীন সমাজে নারীদের যথেষ্ট সম্মান ছিল। তবে হিন্দু সমাজে সতীদাহ প্রথা চালু ছিল ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ধনসম্পদে পরিপূর্ণ বাংলা বিশ্বের ইতিহাস সোনার বাংলা নামে পরিচিত। বিদেশি পরিব্রাজকরা বাংলার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে বাংলা ভ্রমণ করতে আসতেন। মধ্যযুগে
ভারতবর্ষ তথা বিশেষ করে বাংলাদেশে খ্রিষ্ট্রীয় চৌদ্দ শতকে ইবনে বতুতা এসেছিলেন বাংলার অতীত ইতিহাস, ঐতিহ্য ও প্রাচুর্য সম্পর্কে গবেষণা ও বিশেষণে ইবনে বতুতার অবদান অনেক।