ইতিহাস পাঠের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা কর।

অথবা, ইতিহাসের প্রয়োজনীয়তা কী?
অথবা, মানবজীবনে ইতিহাসের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
ইতিহাসের মাধ্যমে মানুষ তার আত্মপরিচয় ও অতীত কার্যাবলি সম্পর্কে অবগত হতে পারে। ফলে মানুষ অতীতের অভিজ্ঞতা ও শিক্ষা হতে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ পথ চলার দিক নির্দেশনা পায়, যা জাতীয় জীবনে অত্যন্ত অপরিহার্য। অতীত ঘটনার ধারাবাহিক বিবরণই ইতিহাস। সূর্যোদয়কে বাদ দিয়ে যেমন সূর্যাস্ত কল্পনা করা যায় না, তেমনি ইতিহাসের ধারাবাহিকতা বাদ দিয়ে ইতিহাস কল্পনা করা যায় না। তাই ইতিহাসের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা একান্ত প্রয়োজন। নিচে ইতিহাসের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হলো :

ইতিহাসের প্রয়োজনীয়তা বিভিন্ন দিকে থাকতে পারে এবং এটি সমাজ, রাজনীতি, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনীতি ইত্যাদির বিভিন্ন দিকে দেখা যেতে পারে।

  1. সমাজ ও ব্যক্তির উন্নতি: ইতিহাস সমাজের উন্নতি এবং ব্যক্তির প্রবৃদ্ধির সাক্ষাৎকার হিসেবে প্রয়োজনীয়। ইতিহাস থেকে মানব সমাজের ভূতকালের অভিজ্ঞান, তাদের অভিজ্ঞান থেকে সমাজের উন্নতির দিকে পথনির্দেশ হয়।
  2. রাজনীতি এবং শাসন: রাজনীতি এবং শাসনের মৌলিক মৌলিক অংশগুলির উৎপন্ন হয়েছে ইতিহাসে। পূর্বের সময়ে ঘটবার ঘটনা, শাসকদের নীতি, জনগণের প্রতি আপনাদের আচরণের বৎসর, এসব সময়কে আমাদেরকে শেখা সহায় করে আসে এবং আমাদেরকে আগামীকালের জন্য বোঝায় কী করতে উপযুক্ত।
  3. সাংস্কৃতিক পরিস্থিতি: ইতিহাস সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য, উৎপাদন এবং উন্নতির একটি ব্রহ্মসূত্র হিসেবে কাজ করে। পূর্বের সময়ের সংস্কৃতি এবং তার বিভিন্ন প্রভাবের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে আমাদেরকে সাহায্য করে এবং বর্তমানের সাংস্কৃতিক পরিস্থিতির মূল কারণগুলি সম্পর্কে বোঝার সাহায্য করে।
  4. মানবাধিকার এবং ন্যায়: ইতিহাসের মাধ্যমে আমরা মানবাধিকার এবং ন্যায়ের মৌলিক প্রস্তুতি বোঝার চেষ্টা করতে পারি। ঐতিহ্যবাহিত অপরাধ এবং ন্যায়বিচারের ঘটনার মাধ্যমে আমরা কীভাবে সমাজ এবং রাজনীতি প্রণালীতে ন্যায়ের মূল প্রিন্সিপলগুলি তৈরি করতে পারি, তা বোঝতে পারি।
  5. বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির উন্নতি: ইতিহাস সময়ের সাথে সাথে বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির উন্নতির সাথেও সম্পর্কিত থাকে। প্রাচীন সময়ে বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির উন্নতির পথে সমাজ কীভাবে পরিবর্তিত হয়েছিল, সেই অভিজ্ঞান থেকে আমরা ভবিষ্যতে কীভাবে উন্নতি করতে পারি তা শেখতে পারি।

ইতিহাস কেবল অতীতের ঘটনার বর্ণনা নয়, বরং এটি আমাদের বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্য অপরিহার্য। ইতিহাসের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করা হলো:

ব্যক্তি ও জাতির পরিচয়:

  • ইতিহাস আমাদের জাতির উৎপত্তি, বিবর্তন, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণা দেয়।
  • আমাদের পূর্বপুরুষদের ত্যাগ ও সংগ্রামের কাহিনী জানতে ইতিহাসের সাহায্য নিতে হয়।
  • ইতিহাস আমাদের ব্যক্তি ও জাতিসত্তার পরিচয় দান করে।

শিক্ষা ও জ্ঞান:

  • ইতিহাস আমাদের বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান দান করে, যেমন রাষ্ট্রনীতি, অর্থনীতি, সমাজ, সংস্কৃতি, শিল্প, সাহিত্য ইত্যাদি।
  • ইতিহাস আমাদের ভুল থেকে শিক্ষা নিতে সাহায্য করে।
  • ইতিহাস আমাদের বিশ্লেষণী, সমালোচনামূলক ও সৃজনশীল চিন্তাভাবনার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

সামাজিক ও রাজনৈতিক উন্নয়ন:

  • ইতিহাস আমাদের সমাজের বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে ধারণা দেয়।
  • ইতিহাস আমাদের সমাজের উন্নয়নে সহায়ক নীতিমালা প্রণয়নে সাহায্য করে।
  • ইতিহাস আমাদের রাষ্ট্রীয় নীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

নৈতিকতা ও মূল্যবোধ:

  • ইতিহাস আমাদের ন্যায়, নীতি, সত্য, সাহস, ত্যাগ, ভালোবাসা, সহনশীলতা ইত্যাদি মূল্যবোধের শিক্ষা দেয়।
  • ইতিহাস আমাদের ভালো ও মন্দ কাজের পার্থক্য বুঝতে সাহায্য করে।
  • ইতিহাস আমাদের সৎ, ন্যায়পরায়ণ ও নীতিবান মানুষ হতে অনুপ্রাণিত করে।

অনুপ্রেরণা ও আশাবাদ:

  • ইতিহাস আমাদের মহান ব্যক্তিদের জীবনী ও তাদের কর্মের কাহিনী জানতে সাহায্য করে।
  • ইতিহাস আমাদের অনুপ্রাণিত করে জীবনে সফল হতে এবং সমাজ ও দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে।
  • ইতিহাস আমাদের ভবিষ্যতের জন্য আশাবাদী হতে সাহায্য করে।

বিনোদন ও জ্ঞানচর্চা:

  • ইতিহাস আমাদের জ্ঞানচর্চার মাধ্যম হিসেবে কাজ করে।
  • ইতিহাস আমাদের বিনোদন ও আনন্দ দান করে।
  • ইতিহাস আমাদের অবসর সময়কে মূল্যবান করে তোলে।


উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, ইতিহাস আমাদের জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ। ইতিহাস জ্ঞান, শিক্ষা, নীতিশিক্ষা, অনুপ্রেরণা, বিনোদন ও জ্ঞানচর্চার মাধ্যমে আমাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।