অথবা, ইতিহাসের পরিধি সম্পর্কে সংক্ষেপে উল্লেখ কর।
অথবা, ইতিহাসের পরিধি আলোচনা কর।
অথবা, ইতিহাসের পরিধি সম্পর্কে লিখ।
ভূমিকা : সাধারণভাবে ইতিহাসের পরিধি বলতে ইতিহাসের কার্যক্ষেত্রের সুবিশাল দিগন্তকে বুঝায় অর্থাৎ ইতিহাসের বিস্তৃতি বা ইতিহাসের পরিব্যাপ্তিকে ইতিহাসের পরিধি বলা হয়।
ইতিহাসের পরিধি : সমাজ ও সভ্যতার ক্রমবিবর্তনের প্রেক্ষিতে বিভিন্ন পর্যায় অতিক্রম করে মানুষ আজ বর্তমান সভ্যতায় উপনীত হয়েছে, যা ইতিহাসের সীমানা বা পরিধি। ইতিহাসের পরিধি ব্যাপক ও বিস্তৃত। নিচে এ সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো : মানব সভ্যতা যখন শুরু হয় তখন পৃথিবীর গণ্ডি ছিল সীমাবদ্ধ। ফলে ইতিহাসের পরিধি বিস্তৃতি লাভ করতে পারেনি। মানব সভ্যতার প্রথম পর্যায় ছিল প্রাগৈতিহাসিক যুগের পর্যায় এবং এ সময় মানুষের কর্মপন্থায় পরিসর তথা পরিসীমা
যতদূর বিস্তৃত ছিল, ইতিহাসের পরিধিও ঠিক ততটা বিস্তৃত ছিল। প্রাগৈতিহাসিক যুগে খাদ্য সংগ্রহমূলক কর্মের মাধ্যমে মানুষ যতদূর অগ্রসর হয়েছিল ঐ সময়ে ইতিহাসের পরিধিও ততদূর সম্প্রসারিত হয়েছিল।প্রাগৈতিহাসিক যুগের পর ঐতিহাসিক যুগেও ইতিহাসের পরিধি ক্রমসম্প্রসারিত হতে থাকে আরো দ্রুতগতিতে। কারণ এ সময়ই মানুষ চিন্তাচেতনায় উন্নত হতে থাকে এবং এ সময়ই প্রাচীন, মধ্য ও আধুনিক যুগে সভ্যতা বিভক্ত হয়ে যায়। ঐতিহাসিক যুগের পূর্বেই লিখিত ও প্রামাণিক তথ্যভিত্তিকভাবেই ইতিহাসের পরিধি পরিমাপের সূচনা ঘটে। প্রাচীন যুগের ইতিহাসের মূল উপজীব্য ছিল মানুষের যুদ্ধনীতি। ফলে এ যুগের ইতিহাসের পরিধি যুগের দিকে ধাবিত হতে থাকে। মধ্যযুগে এসে ইতিহাসের পরিধি বৃদ্ধি পেতে থাকে। তবে এ সময় ধর্মের প্রভাব এত বেশি বৃদ্ধি পায় যে ইতিহাসের পরিধিও ধর্মের বেড়াজালে বন্দি হয়ে পড়ে। অবশ্য এ যুগে ভারত উপমহাদেশ ও আফ্রিকীয় রাজনীতি এবং সমাজকে উপজীব্য করে ইতিহাসের অভিযাত্রা অব্যাহত থাকে। এ সময় ভারতীয় উপমহাদেশে বিখ্যাত কয়েকজন ঐতিহাসিকের প্রচেষ্টায় পরিধি বৃদ্ধি পায়। মধ্যযুগে ধর্মযাজক ও পোপদের অন্যায়, দুর্নীতি ও অত্যাচার শেষ পর্যায় চলে যায়। ফলে এমন কতিপয় ঘটনা ঘটে
যার ফলে আধুনিক যুগের সূচনা হয় এবং ইতিহাসের পরিধি দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সময়, অবস্থা ও ঘটনার ক্রমবিবর্তনের মধ্য দিয়ে মানুষের চাহিদা ও বুদ্ধিবৃত্তির
দিগন্তও সম্প্রসারিত হয়। এতে মানুষের জানার পরিমাপ বৃদ্ধি পায় এবং সাথে সাথে বৃদ্ধি পায় ইতিহাসের পরিধি।