ইকবালের স্বজ্ঞাবাদ মরমি অভিজ্ঞতার বৈশিষ্ট্য কী?

অথবা, ইকবালের স্বজ্ঞাবাদে কী কী বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়?
অথবা, ইকবালের স্বজ্ঞাবাদের বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।
অথবা, ইকবালের স্বজ্ঞাবাদ মরমি অভিজ্ঞতার বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে আলোচনা কর।
অথবা, ইকবালের স্বজ্ঞাবাদে মরমি অভিজ্ঞতার বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে বিশ্লেষণ কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : আল্লামা ইকবাল মুসলিম দার্শনিকবাদের মধ্যে অন্যতম একজন খ্যাতনামা দার্শনিক। দর্শনে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে আছেন। মুসলিম দর্শনে তিনি প্রাচ্যে আধ্যাত্মিক ও পাশ্চাত্যের বস্তুবাদের মধ্যে সমন্বয়সাধন করেছেন। তিনি জ্ঞানের উৎস হিসেবে অভিজ্ঞতার পাশাপাশি সঙ্গকে স্বীকার করেন। তাঁর মতে, সজ্ঞার মাধ্যমেই প্রকৃত জ্ঞান লাভ করা যায়।
মরমি অভিজ্ঞতার বৈশিষ্ট্য : ইকবাল মনে করেন সজ্ঞাকেই জ্ঞানের ক্ষেত্রে প্রথমে প্রয়োগ করতে হবে। তিনি সজ্ঞাকে বুদ্ধির চেয়ে উন্নততর বলে মনে করেন। ইকবালের মতে সজ্ঞা হলো জ্ঞান অর্জনের এমন একটি উৎস যার মাধ্যমে আমরা কোন মাধ্যম ছাড়াই সরাসরি কোন কিছুকে জানতে পারি। ইকবালের সজ্ঞাবাদ বিশ্লেষণ করলে আমরা নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্যগুলো পাই :
ক. স্বজ্ঞার মাধ্যমে সরাসরি সত্তার পূর্ণ জ্ঞান লাভ : স্বজ্ঞার মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ সত্তা সম্পর্কে আমরা তাৎক্ষণিক ও সরাসরি লাভ করা যায়। বুদ্ধির মাধ্যমে আমরা শর্তারোপ করে অগ্রসর হয় এবং শর্তারোপ যেখানে সম্ভব হয় না সেখানে সেটি স্তব্ধ হয়ে যায়। আর এখানেই বুদ্ধিজাত ও স্বজ্ঞজাত জ্ঞানের মধ্যে বিস্তার পার্থক্য। তিনি মনে করেন যে, মরমি অভিজ্ঞতার মাধ্যমেই পরমসত্তা বা আল্লাহর পরিপূর্ণ জ্ঞান লাভ করা যায়। তবে জ্ঞানের মাধ্যম হিসেবে অন্যান্য অভিজ্ঞতার সাথে মরমিয়া অভিজ্ঞতার তেমন কোন পার্থক্য নেই ।
খ. স্বজ্ঞা ব্যক্তিগত নয় বিষয় গত : বুদ্ধি বস্তুজগৎকে মন আরোপিত জ্ঞানের আকার বা সম্বন্ধের মাধ্যমে জানেন। বুদ্ধি তাই তার ক্যাটাগরির বাইরে যেতে পারে না। আর সেজন্য সে পরমসত্তাকে জানতে পারে না। অন্তর অনুভূতিতেই পরমসত্তার প্রভৃতি ধরা পড়ে। কাজে দেখা যাচ্ছে যে, যদি ও বস্তুজগৎকে দেশ, কালের মাধ্যমে জানা যায়, তবুও পরমসত্তাকে ইন্দ্রিয়ানুভূতির মাধ্যমে জানা যায় না। কেবল অন্তরের অনুভবের মাধ্যমে একে জানা যায়।
গ. স্বজ্ঞা হলো অবিশ্লেষণাত্মক সমগ্র : ইকবাল স্বজ্ঞাকে অবিশ্লেষণাত্মক সমগ্র বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন এর মাধ্যমে সত্তা পূর্ণ ও অখণ্ড ঐক্যরূপের প্রকাশিত হয়। মরমিয়া অভিজ্ঞতার ব্যক্তি ও বস্তুকে পৃথক করা যায় না। সুফি নিজের আত্মাকে মিশিয়ে দেন পরমসত্তার মাঝে। পরমসত্তা তার কাছে এক অখণ্ড অবিশ্লেষণাত্মক সমগ্র হিসেবে ধরা দেয়। সাধারণ অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে এরূপ দেখা যায় না। সাধারণ অভিজ্ঞতার কর্তা বা ব্যক্তি এবং বস্তুকে আনয়নের পৃথক করা যায়।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বলতে পারি যে, ইকবালের সজ্ঞাবাদ হলো বিষয়গত বা
Subjective, অর্থাৎ যিনি এটি আহরণ করেন তাঁর উপর নির্ভরশীল। সজ্ঞার মাধ্যমে জ্ঞানলাভের জন্য মধ্যবর্তী কোন মাধ্যমের প্রয়োজন হয় না বলে তিনি একে বুদ্ধি অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ বলে মনে করেন। তবে পূর্ণাঙ্গ জ্ঞানলাভের জন্য প্রত্যাদেশের প্রয়োজনীয়তাকেও স্বীকার করেছেন।