অথবা, ইকবালের শিক্ষা দর্শন সংক্ষেপে বর্ণনা কর।
অথবা, ইকবালের শিক্ষা দর্শন সম্পর্কে যা জান সংক্ষেপে লেখ।
অথবা, ইকলারের শিক্ষা দর্শন সংক্ষেপে আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : আল্লামা ইকবাল মুসলিম দর্শনের অন্যতম বিশিষ্ট দার্শনিক। তিনি একজন কবি ও দার্শনিক হিসেবে খ্যাত। তিনি ইসলামের বিভিন্ন বিষয় বিজ্ঞান ও দর্শনের আলোকে আলোচনা করেছেন। তিনি প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের অধ্যাত্মবাদ ও বস্তুবাদের মধ্যে সমন্বয়সাধন করেন। তিনি মুসলিম দর্শনে ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার করেছিলেন। তার
শিক্ষা দর্শন ইসলামের মূল শিক্ষার অনুকূলে ছিল।
ইকবালের শিক্ষা দর্শন : আল্লামা ইকবাল সামাজিক নীতি ও শিক্ষার মৌলিক বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। তিনি মনে করেন আমাদের জীবনের মূল লক্ষ্য হলো কর্ম ও শিক্ষার মাধ্যমে ব্যক্তিত্বের বিকাশ সাধন এবং জগৎ সম্পর্কে সাধারণ ধারণা গঠন। এজন্য তিনি যে অধ্যাত্মবাদের প্রবর্তন করেন তার নাম খুদী তত্ত্ব। তাঁর এ খুদী দর্শন জীবন বিমুখ নয় । সংসারবিরাগী কিংবা নিষ্ক্রিয় জীবনধারাও সমর্থন করে না। তাঁর মতে, সার্থক জীবন দর্শন কর্মবিমুখ জীবনদর্শন হতে
পারে না। প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল এ জগতে তাই আমাদের নিজেদের খাপখাইয়ে নিতে হবে। মানবজীবন নিছক কল্পনা বিলাসী নয়; সুষ্ঠু ও কর্মময় জীবনযাপন মানবজীবনের অন্যতম আদর্শিক লক্ষ্য । তিনি মুসলিম সমাজের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে বলেন, মুসলমানদের দীনতা থেকে উত্তরণের জন্য সংকীর্ণ মানসিকতা ত্যাগ করতে হবে। তাদেরকে সাম্য, মৈত্রী ও ভ্রাতৃত্বের আদর্শে অনুপ্রাণীত হয়ে জীবনের পথে অগ্রসর হতে হবে। এজন্য তিনি কলহ, বিবাদ, কর্মবিমুখতা, নিষ্ক্রিয়তা প্রভৃতি পরিহারের কথা বলেন। তাঁর মতে, “একজন সক্রিয় নাস্তিক একজন
নিষ্ক্রিয় আস্তিক অপেক্ষা উত্তম।” কর্মতৎপরতাই মানুষের তাত্মিক উন্নতি ও বিকাশের একমাত্র উপায়। ইকবালের মতে,
কর্মই ধৰ্ম বা পূর্ণতা। মানুষ স্বভাবতই স্বাধীন। জড় জগতের নানা বাধাই তাকে কাজের জন্য জড়িত করে। ফলে তার চিন্তা ও ব্যক্তিত্ব
বিকশিত হয়। ইকবালের মতে, জগতের বিরোধী শক্তির সাথে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে খুদি বা অহং বিকশিত হয়। অতীত ইতিহাস ও কৃষ্টিগত ঐতিহ্যের প্রেরণা এক্ষেত্রে সহায়তা করে। মানুষ যখন নিজেই নিজের সাহায্য করে, তখন আল্লাহ তাকে সাহায্য করেন।
উপসংহার : উপরের আলোচনার আলোকে আমরা বলতে পারি যে, আল্লামা ইকবাল পাশ্চাত্য আধুনিক ও প্রগতিশীল শিক্ষার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে মুসলমানদের মধ্যে নবজাগরণে উদাত্ত আহ্বান জানান। তিনি ইসলামের সাথে সংগতিপূর্ণ ধ্যানধারণা গ্রহণের জন্য মুসলমানদের অনুপ্রাণিত করেন। তিনি সর্বোপরি বলেন, মুসলমানদের সার্বিক কল্যাণ।খুদির বিকাশ অপরিহার্য।