অথবা, “এত এত লোক কী অন্ধ? বিচিত্র জায়গা এ শহর।”- ব্যাখ্যা কর।
উৎস : ব্যাখ্যেয় গদ্যাংশটুকু বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ বিরচিত ‘নয়নচারা’ শীর্ষক ছোটগল্প থেকে চয়ন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গ : গল্পকার এখানে শহরের মানুষদের অন্ধত্ব সম্পর্কে কটাক্ষ করে আমুর মুখ দিয়ে কথাগুলো বলিয়েছেন।
বিশ্লেষণ : দুর্ভিক্ষতাড়িত আমু শহরে এসেছে বাঁচার তাগিদে। এখানে সে অন্যান্যদের সাথে রাস্তার ফুটপাতে আশ্রয় নিয়েছে। সারাদিন আমু শহরের রাস্তায় রাস্তায়, মানুষের দুয়ারে দুয়ারে একমুঠো খাদ্যের জন্য ঘুরে বেড়ায়। কিন্তু পেটের অন্ন জোটে না। দুপুরে লঙ্গরখানা থেকে যে সামান্য আহার্য দেয় তাতে পেটের ক্ষুধাতো মেটেই না বরং বেড়ে যায়। বিকেল বেলা আমু আবার পথে নামে। এ পথের শেষ খুঁজে পায় না সে। এ পথ ধরে ঘরে পৌঁছানো যায় না। সন্ধ্যায় ময়রার দোকানে আলো জ্বলে, কারা খেতে আসে, কারা খায় আর পয়সা ঝনঝন করে। কিন্তু এধারে কাঁচ, কাঁচের এধারে মাছি, মাছির এপাশে আমু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখে। হঠাৎ ভিতর থেকে একটা লোক বাজের মতো খাঁই খাঁই করে আমুর দিকে তেড়ে আসে। লোকটা কি অন্ধ? সে কি দেখতে পায় না? প্রশ্ন জাগে আমুর মনে। পথে নেমে সে ভাবে দোকানের লোকটি অন্ধই। নিশ্চয়ই সে তার চোখে নকল চোখ পরেছে। শহরের কোন লোকইতো তাদের দেখতে পারে না।
মন্তব্য : শহরের মানুষেরা আসলে অন্ধ নয়। গরিব মানুষদের তারা মানুষ জ্ঞান করে না বলেই এমন নিষ্ঠুর ব্যবহার করে।