আশার বর্তমান ভূমিকা ও কর্মসূচি আলোচনা কর ।

অথবা, আশার বর্তমান কর্মসূচিসমূহ ব্যাখ্যা কর।
অথবা, আশার বর্তমান ভূমিকাসমূহ বিশ্লেষণ কর।
অথবা, “আশা” জাতীয় উন্নয়নে কী ধরনের কর্মসূচি পরিচালনা করছে তা লিখ।
অথবা, আশার অবদানসমূহ আলোচনা কর।
উত্তর।৷ ভূমিকা :
আশা বাংলাদেশের সবচেয়ে বৃহৎ ও দ্রুত বর্ধনশীল ক্ষুদ্রঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান।এর ব্যয় সাশ্রয়ী স্থায়িত্বশীল ক্ষুদ্রঋণ মডেলের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন দেশ-বিদেশে ব্যাপক পরিচিতি এনে দিয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আজ আশা মডেলে ঋণ বিতরণ করা হচ্ছে। ক্ষুদ্রঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে আশা গণদারিদ্র্য বিমোচনে ব্যাপক ভূমিকা রেখে যাচ্ছে, যা UNDP ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক স্বীকৃত। আশার উল্লেখযোগ্য বর্তমান কর্মসূচির মধ্যে ক্ষুদ্রঋণ ও সঞ্চয় কর্মসূচি, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ে ঋণদান কর্মসূচি ব্যবসায়িক ঋণদান কর্মসূচি, সেল কর্মসূচি এবং দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি উলেখযোগ্য ।
আশার বর্তমান ভূমিকা ও কর্মসূচি
১. ক্ষুদ্রঋণ এবং সঞ্চয় কর্মসূচি (Microcredit and savings programme) : আশা ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে দেশের দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। আশার ক্ষুদ্রঋণ এবং সঞ্চয় প্রকল্প দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনয়নে সহায়তা করছে। আশা থেকে লোকজন আয়বর্ধনমূলক কাজের জন্য ঋণ পায় যা পরিবারের আয় বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। আশার ঋণ কর্মসূচির সুফল মূলত গ্রাম ও শহরের নারীগোষ্ঠী ভোগ করে থাকে। ঋণ কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সাহায্যার্থীর পরিবার ও সমাজে ক্ষমতায়ন (Empowerment) ক্ষুদ্রঋণ সহায়তার আওতায় বর্তমানে প্রাথমিক পর্যায়ে ৪,০০০-৬,০০০ টাকা যা বছরে ১৫% সার্ভিস চার্জসহ ৪৬টি সমান কিস্তিতে পরিশোধ করতে হয়।ঋণগ্রহীতাদেরকে সাপ্তাহিক ভিত্তিতে কিস্তি পরিশোধ করতে হয়। ঋণ পরিশোধ করা শুরু করতে হয় ঋণ বিতরণের ২ সপ্তাহ পর থেকে। ঋণগ্রহীতাদেরকে বছরে ছয় সপ্তাহ জাতীয় ছুটির দিনের কারণে কিস্তি দিতে হয় না। আশার সঞ্চয় প্রকল্প দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সঞ্চয় প্রবণতা বৃদ্ধি করছে। নিচে এর কিছু উদাহরণ তুলে ধরা হলো :
i. সক্রিয় সদস্য : ২০০৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত আশার সক্রিয় সদস্য ছিল ২.৩৪ মিলিয়ন যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০০৪ সালের জুনের মধ্যে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ২.৭৪ মিলিয়ন। প্রায় ১৭% সদস্য গত ছয় মাসে বৃদ্ধি পেয়েছে।
ii. সঞ্চয় : ২০০৩ সালের ডিসেম্বর মাসের শেষ নাগাদ আশার সদস্যরা ১.৪৮২ মিলিয়ন টাকা সঞ্চয় করে। এ সময়ের মধ্যে আশার সদস্যরা ১,৪৩২ মিলিয়ন টাকা ফেরত নিয়েছে এবং উত্তোলন করেছে। জানুয়ারি ২০০৪ থেকে জুন ২০০৪ পর্যন্ত নিট সঞ্চয় বৃদ্ধি হয় ২,৮০৪ মিলিয়ন টাকা, যেখানে জুনের শেষ নাগাদ তা দাঁড়ায় ২,৮৫৪ মিলিয়নে।
iii. সক্রিয় ঋণগ্রহীতা : ২০০৩ সালের ডিসেম্বর মাসে সক্রিয় ঋণগ্রহীতার পরিমাণ ছিল ২.১৩ মিলিয়ন। ২০০৪ সালের জুনের শেষ নাগাদ আশার সক্রিয় ঋণগ্রহীতার পরিমাণ দাঁড়ায় ২.৫২ মিলিয়ন। অর্থাৎ ২০০৪ সালের প্রথমার্ধে ঋণগ্রহীতার পরিমাণ ১৮% বৃদ্ধি পায় ।
iv. ঋণ : জানুয়ারি ২০০৪ থেকে জুন ২০০৪ সাল পর্যন্ত ৬ মাসে মোট ১১,৬৪৯ মিলিয়ন টাকা বণ্টন করা হয় এবং অপরিশোধিত (Outstanding) ঋণের পরিমাণ ছিল ১২,১৭৪ মিলিয়ন টাকা। গত ৬ মাসে (Outstanding) ঋণ বৃদ্ধি পেয়েছে ২১%। জানুয়ারি থেকে জুন ২০০৪ পর্যন্ত সময়ে সার্ভিস চার্জসহ ক্রমপুঞ্জীভূত (Cumutative) ঋণের পরিমাণ ছিল ৯৭,০১৭ মিলিয়ন টাকা, যার মধ্যে ৮৩,০০৮ মিলিয়ন টাকা অবমুক্ত (Realized) হয়।
২. ক্ষুদ্রঋণ (Small loan) : সদস্যদেরকে প্রাথমিক পর্যায়ে ৪০০০ থেকে ১০,০০০ টাকা ঋণ দেয়া হয়, যা প্রতি বছর ১,০০০ থেকে ৩,০০০ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। প্রত্যেক ঋণ ১ বছরের মধ্যে ১৫% সার্ভিস চার্জসহ পরিশোধ করতে মিলিয়ন টাকা ঋণ হিসেবে বণ্টন করা হয় এবং জুন হয়। জানু য়ারি থেকে জুন ২০০৪ পর্যন্ত সময়ে এখানে মোট ১১,৩০২ মিলিয় শেষে (Outstanding loan) ছিল ৯,০৭০ মিলিয়ন।
৩. ক্ষুদ্র ব্যবসায় কর্মসূচি (Small business programme) : আশা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদেরকে লোন সুবিধা দিয়ে থাকে। এটি দারিদ্র্য বিমোচন ও আয় বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটায়। এ ক্ষুদ্র ব্যবসায় কর্মসূচির অধীনে প্রাথমিকভাবে ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ দেয়া হয় এবং তা প্রতি বছর ৪,০০০ টাকা থেকে ৬,০০০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি করা যেতে পারে। প্রতিটি ঋণ ১৫% সার্ভিস চার্জসহ ১ বছরের মধ্যে পরিশোধ করতে হয়।
৪. ক্ষুদ্র উদ্যোগ ঋণ কর্মসূচি (Small lending loan programme) : আশা ক্ষুদে সংগঠক বা উদ্যোক্তাদের মাঝেও ঋণ বিতরণ করে থাকে। এক্ষেত্রে আশার ২৮টি বিশেষ শাখা রয়েছে। এ কর্মসূচি সংক্ষেপে SEL নামে অভিহিত করা হয়। এ SEL কর্মসূচির আওতায় আশা ১ বছর, ১.৫ বছর অথবা ২ বছরের জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে ৩০,০০০ টাকা থেকে ১,৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত ঋণ দিয়ে থাকে। আশা বিশ্বাস করে মাঝারি ধরনের প্রতিষ্ঠান দারিদ্র্য দূরীকরণের ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে। মাঝারি ধরনের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সার্ভিস চার্জের পরিমাণ ১২.৫০%।
৫. ক্ষুদ্র ঋণের অধীনে অতি দরিদ্র (Hardcore poor under microcredit) : আশা আয়বর্ধনমূলক কার্যাবলির ক্ষেত্রে অতি দরিদ্রদেরকেও ক্ষুদ্রঋণ দিয়ে থাকে। আশা এ ধরনের নমনীয় প্রকৃতির ঋণ সুবিধা দিচ্ছে ১ থেকে ১২ মাসের জন্য। এ ধরনের ঋণ পরিশোধ মাসিক, ষাণ্মাসিক বা মেয়াদ শেষে একসাথেও পরিশোধ করা যায়। এ ধরনের ক্ষেত্রে মাসিক সার্ভিস চার্জ ১% মাত্র।
৬. আশার বিমা কার্যক্রম (ASA insurance activities) : আশার বিমা কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ঋণ বিমা ও জীবনবিমা কর্মসূচি । নিম্নে এগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
i. ঋণ বিমা : ‘নিরাপদ জীবনের নিশ্চয়তা’ এই দর্শনের ভিত্তিতে আশা তার সদস্যদের জন্য ঋণ বিমা কর্মসূচি চালু করেছে। প্রতি হাজারে এ বিমার জন্য প্রিমিয়াম হলো ৩ টাকা। মৃত গ্রহীতারা এ সুবিধা পেয়ে থাকে। জানুয়ারি থেকে জুন ২০০৪ পর্যন্ত আশা মৃত ঋণগ্রহীতাদের পরিবারে এ কর্মসূচির আওতায় ১৪ মিলিয়ন টাকা প্রদান করেছে।
ii. সদস্যদের নিরাপত্তা তহবিল (জীবনবিমা) : ঋণ বিমা ছাড়াও প্রত্যেক ক্ষুদে ব্যবসায়ী ও ঋণগ্রহীতাকে সপ্তাহে ১০ টাকা নিরাপত্তা জমা অথবা জীবনবিমার জন্য বিমার কিস্তি দিতে হয়। SEL সদস্যদেরকে প্রতিমাসে বিমার কিস্তি বাবদ ৫০ টাকা জমা দিতে হয়। সদস্যদের মৃত্যুর ক্ষেত্রে সদস্যদের উত্তারাধিকারীগণ সদস্য কর্তৃক প্রদত্ত বিমা কিস্তির ৬ গুণ পেয়ে থাকে। অন্যথায় সদস্যগণ ৪০ সপ্তাহ পর জমাকৃত বিমাকৃত মোট টাকার ৪% সুদসহ পেতে পারেন। জানুয়ারি থেকে জুন ২০০৪ সাল পর্যন্ত আশা এক্ষেত্রে ২০ লক্ষ টাকা প্রদান করেছে।
৭. দেশব্যাপী কর্মসূচি বিস্তার (Countrywide coverage) : আশার কর্মসূচি সমগ্র বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে প্রসারিত করা হয়েছে। জুন ২০০৪ সালে আশার মোট শাখার সংখ্যা দাঁড়ায় ১,৭২৫টি। এর মধ্যে ১,৫০৩টি শাখা পল্লি এলাকায় এবং ২২২টি শাখা শহর এলাকায়।
৮. বিভিন্ন সংস্থাকে সহযোগিতা (Helping many organization) : আশা তার এনজিও পার্টনারশিপ কর্মসূচির
অধীনে বিভিন্ন ছোটখাটো এনজিওগুলোকে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। আশা সেগুলোকে প্রযুক্তিগত এবং ঋণ তহবিলের মাধ্যমে সাহায্য করে। দেশে এর অধীনে আশার ২৪টি সহযোগী এনজিও রয়েছে। ২০০৪ সালে জুনের শেষ নাগাদ আশা তার সহযোগী এনজিওগুলোকে ক্ষুদ্রঋণ প্রদানের জন্য ১৩৩,৬৭ মিলিয়ন টাকা ঋণ প্রদান করেছে ।
৯. আশার কারিগরি সহযোগিতা (Technical help of ASA) : দেশীয় এনজিও ছাড়াও এশিয়া মহাদেশের বিভিন্ন দেশ যেমন- ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, লাওস, মিয়ানমার, পাকিস্তান, ইয়েমেন, আফগানিস্তান, আফ্রিকার নাইজেরিয়া ও ল্যাটিন আমেরিকার পেরুতে আশার কনস্যাল টেন্টর কারিগরি সহায়তা দিচ্ছেন।”
উপসংহার : আশা বাংলাদেশে ক্ষুদ্রঋণ প্রদানের মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে স্বাবলম্বী করে তোলার ক্ষেত্রে যে উদ্যোগ হাতে নিয়েছে সত্যিকার অর্থেই তা প্রশংসার দবিদার। “গত ১৪ বছর ধরে আশা লক্ষ লক্ষ দরিদ্র নারীকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে সহায়তা দিয়ে আসছে। প্রায় ৩০ লক্ষ দরিদ্র পরিবার আশার ঋণ সহযোগিতায় জীবন পরিবর্তনের সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। স্বল্প সুদে গ্রামের নারীরা হাঁস-মুরগি, ছাগল পালন, মাছ চাষ, গাভী পালন ও কুটিরশিল্প করে তাদের আয় বাড়ানোর চেষ্টা করছে। আশা এ পর্যন্ত প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে, আর যার আদায়ের হার ৯৯
শতাংশ। ২০০৫ সালে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ঋণ দেবে বলে আশা স্থির করে।”

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%a4%e0%a7%83%e0%a6%a4%e0%a7%80%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%ad%e0%a6%bf%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%a8-%e0%a6%95/