অথবা, আশারিয়া কারা?
অথবা, মুসলিম দর্শনে কাদের আশারিয়া সম্প্রদায় বলা হয়?
অথবা, আশারিয়াদের পরিচয় দাও।
অথবা, আশারিয়া বলতে কাদের বুঝানো হয়?
উত্তরা৷ ভূমিকা : মুতাজিলাদের ধর্মীয় বুদ্ধিবাদের বিরুদ্ধে আশারিয়া মতবাদ হচ্ছে একটি প্রতিবাদ। মানব প্রজ্ঞার।দ্বারা বিশ্বজগতের রহস্য এবং ধর্মীয় বিশ্বাসের গভীর তাৎপর্য অনুধাবন করা যায় বলে মুতাজিলারা মনে করেন। কিন্তু।আশারিয়াগণ আল্লাহর কালাম, পরম্পরাগত ঐতিহ্য (হাদিস) রাসূল (স) এর আচরণ বিধি এবং।আদি সম্প্রদায়ের আদর্শিক।নমুনার উপর দৃঢ় আস্থাশীল। মুতাজিলাদের বিশুদ্ধ বুদ্ধিবাদী ধর্মতত্ত্বের পদ্ধতি গঠনের অসম্ভব কার্য থেকে আশারিয়াদের পশ্চাদপসারণ।
আশারিয়া সম্প্রদায় : আবুল হাসান আল আশারিয়ার (৮৭৩ খ্রি:-৯৩৬ খ্রি:) অনুসারীদেরকে আল আশারিয়া বলা হয়। আশারিয়ারা ইসলামের পবিত্রতা রক্ষার উদ্দেশ্যে মুতাজিলা মতবাদ পরিত্যাগ করে নিজস্ব।মতবাদ প্রচার করেন। দর্শনের সঙ্গে ধর্মের মধ্যে সমন্বয় সাধনের প্রচেষ্টা হতেই আশারিয়া মতবাদের জন্ম। এই মতবাদ ধর্ম ও দর্শন এ দুয়ের উপরই প্রতিষ্ঠিত। নিজেদের মতবাদকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে এ মতবাদের সমর্থকরা কয়েকটি ক্ষেত্রে দর্শনের সাহায্য গ্রহণ করেন। মুতাজিলা সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া স্বরূপ আশারিয়া সম্প্রদায়ের উদ্ভব ঘটে। হিজরির তৃতীয় শতাব্দীতে মুসলমানেরা
দুটি পরস্পর বিরোধী দলে বিভক্ত হয়। যথা : চরম যুক্তিবাদী ও গোঁড়া ধর্মবিশ্বাসী। যুক্তিবাদীরা প্রত্যেক ধর্মীয় প্রশ্নকে যুক্তির মানদণ্ডে বিচার করতেন। তারা একমাত্র যুক্তিনির্ভর সিদ্ধান্তকেই স্বীকার করতেন। আর গোঁড়া মুসলমানরা ধর্মীয় ক্ষেত্রে নতুন কোন পদ্ধতির প্রবর্তনকে কঠোরভাবে বাধা দেন। তারা কুরআন ও হাদিসের প্রতি একান্তভাবে বিশ্বস্ত ছিলেন। আল আশারিয়া মুতাজিলাদের বিরুদ্ধে স্বীয় বিশ্বাসের সমর্থনে ‘কালাম শাস্ত্র’ প্রয়োগ করতেন। এই কারণে তাদের অনুসারীদেরকে মুতাকাল্লিমিন বলা হতো।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, আশারিয়ারা বিনা প্রশ্নে কুরআনের বক্তব্য মেনে নেয়ার জন্য উপদেশ দিয়েছেন। জীবনের যাবতীয় জটিল সমস্যা সমাধানের জন্য স্বাধীন চিন্তার পথ অনুসরণ না করে কুরআন ও হাদিসের নির্দেশনাবলি মেনে চলার পক্ষে তারা অভিমত ব্যক্ত করেন। আল আশারিয়া আল্লাহর ক্ষমতা ও ইচ্ছার সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠায় ছিলেন দৃঢ় সংকল্প। তাঁর মতে, আল্লাহ্ যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন। তাঁর পক্ষে পুরস্কার বা শাস্তির কোন নীতিসম্মত ভিত্তি নেই।