আল ফারাবি কিভাবে দর্শন ও ধর্মতত্ত্বের মধ্যে সমন্বয়সাধন করেন?

অথবা, আল ফারাবি কর্তৃক দর্শন ও ধর্মতত্ত্বের সমন্বয় সম্পর্কে সংক্ষেপে লিখ।
অথবা, আল ফারাবি কর্তৃক দর্শন ও ধর্মতত্ত্বের সমন্বয় লেখ।
অথবা, আল ফারাবি কিভাবে দর্শন ও ধর্মতত্ত্বের মধ্যে সমন্বয়সাধন করেন সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
মুসলিম চিন্তাধারার বিবর্তনের ক্ষেত্রে যে কয়েকজন দার্শনিক অসামান্য অবদান রেখেছেন আল ফারাবি তাদের মধ্যে অন্যতম। মুসলিম দার্শনিক ঐতিহ্যে আল-কিন্দির পরে তিনি আগমন করেন। তিনি দর্শনে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন। এরিস্টটলের দর্শনের ভাষ্য রচনা ও পদ্ধতি প্রয়োগ করার কারণে তাকে ‘দ্বিতীয় শিক্ষক’ বা ‘মোয়াল্লেম সানী’ বলে অভিহিত করা হয়।
দর্শন ও ধর্মতত্ত্বের সমন্বয় : আল ফারাবি দর্শন ও ধর্মতত্ত্বের মধ্যে সমন্বয় সাধনের প্রচেষ্টা চালান। তাঁর মতে, দর্শন ও ধর্ম উভয়ই একই লক্ষ্য অর্জনে এবং উদ্দেশ্য দ্বারা পরিচালিত। তাদের অভিন্ন লক্ষ্য হলো পরমসত্তা বা পরম সত্যের জ্ঞান লাভ বা সন্ধান লাভ। দর্শন ও ধর্মের মধ্যে সমন্বয় বিধানের চেষ্টা তাঁর মধ্যে ছিল বলে তিনি দার্শনিককে দেখেছেন ধর্মপ্রাণ ব্যক্তির মতো করে। পাশাপাশি তিনি ধর্মকেও ব্যাখ্যা করেছেন যুক্তিবাদী দার্শনিক দৃষ্টিকোণ থেকে। ধর্মতত্ত্ব বলতে আল ফারাবি প্রত্যাদিষ্ট ধর্মতত্ত্বকে নির্দেশ করেছেন। তিনি দেখেছেন যে, ধর্মের মাধ্যমে বা প্রত্যাদেশের মাধ্যমে আমরা সত্যের সন্ধান পাই। কিন্তু মানুষের অবিবেচনা, যুক্তিহীনতা এ সত্য আহরণে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তাই প্রথমে আমাদেরকে এ বাধা
দূর করতে হবে। অর্থাৎ, গণিত ও যুক্তিশাস্ত্রের উপর দখল থাকতে হবে। ওহি বা প্রত্যাদেশ যে সত্য এতে কোন সন্দেহ নেই। তবে এ কথা সত্য যে, ধর্মতত্ত্বের মধ্যে যুক্তির অভাব রয়েছে। আর তাই বুদ্ধিবাদীরা ধর্মতত্ত্বকে সবসময় সমালোচনা করে আসছে। আল গাজালি যুক্তির মাধ্যমে ধর্মতত্ত্বকে পরবর্তী কালে প্রমাণের চেষ্টা করেছেন। আল ফারাবি বলেন, ধর্মতত্ত্বের সত্যে সন্দেহ থাকতে পারে না। তবে আমাদেরকে ধর্মতত্ত্বের পাশাপাশি যুক্তিবিদ্যা অধ্যয়ন করতে হবে। ধারণা করা হয়, আল ফারাবির কাছ থেকে গাজালি যুক্তির আলোকে ধর্মতত্ত্বের প্রতিষ্ঠা করার অনুপ্রেরণা লাভ করেন। এভাবে ফারাবি ধর্ম ও দর্শনের সমন্বয় সাধনের চেষ্টা করেন।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার আলোকে বলা যায় যে, আল ফারাবি ছিলেন একজন বুদ্ধিবাদী মুসলিম দার্শনিক। তিনি ধর্মতত্ত্বের বিভিন্ন বিষয়ের আলোচনায় দার্শনিক জ্ঞান ও পদ্ধতি প্রয়োগ করেছেন। তাঁর এরূপ সমন্বয়ধর্মী প্রচেষ্টা মুসলিম দর্শনকে সমৃদ্ধি দান করেছে।