অথবা, আল ফারাবির জ্ঞানসূত্র কী?
অথবা, আল ফারাবির মৌলিক জ্ঞানসূত্র কাকে বলে?
অথবা, আল ফারাবির মৌলিক জ্ঞানসূত্র সম্পর্কে যা জান সংক্ষেপে লেখ।
অথবা, আল ফারাবির জ্ঞানসূত্র সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : দর্শন চর্চার প্রাক প্রস্তুতি হিসেবে গণিতের ন্যায় যুক্তিবিদ্যা বিষয়ক জ্ঞান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য। প্রাচীন ও মধ্যযুগে ভারত ও চীনে যুক্তিবিদ্যার চর্চা ছিল। যুক্তিবিদ্যার চর্চার ইতিহাস সুপ্রাচীন ও ব্যাপক। আল ফারাবির যুক্তিবিদ্যা ব্যাকরণের উপর মন্তব্য ও টীকা এবং জ্ঞানতত্ত্বের আলোচনাকে অন্তর্ভুক্ত করে।
আল ফারাবির জ্ঞানসূত্র : গ্রিক ‘Categoria’ থেকে ইংরেজি ‘Gategory’ শব্দটি উদ্ভূত। গ্রিক শব্দটির অর্থ হলো যা কোন উদ্দেশ্যের বিষয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন ধরনের বিধেয় বিভিন্ন অবধারণের উদ্দেশ্যকে বুঝানোর জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে। জ্ঞানের এ অপরিহার্য মৌলিক ধারণাগুলো অভিজ্ঞতার পূর্বগামী সমস্ত মৌলিক ধারণাকে শোপেনহাওয়ার কার্যকারণ তত্ত্বে সীমিত করেছেন। মৌলিক জ্ঞানসূত্রের উপর আল ফারাবি একখানা গ্রন্থ রচনা করেছেন। এরিস্টটলের জ্ঞানসূত্রের পরিমাণের চেয়ে আল ফারাবির দেয়া জ্ঞানসূত্রের পরিধি ব্যাপক, অনেকটা কান্টের জ্ঞানসূত্রের কাছাকাছি। আল ফারবি ক্যাটেগরির আলোচনায় এমন কিছু প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলেন, যা তদানীন্তন যুক্তিবিদদের উদ্বিগ্ন
করেছিল। আল-ফারাবির ধারণা, এরিস্টটলের ক্যাটেগরির সব ক’টি পুরোপুরিভাবে মৌলিক নয়। চারটি জ্ঞানসূত্র শুধুমাত্র মৌলিক। যেমন- দ্রব্য, গুণ, পরিমাণ এবং অবস্থান। দ্রব্য ও গুণের সাথে ক্রিয়া ও নিষ্ক্রিয়তা সম্বন্ধযুক্ত। দেশ ও কাল, দ্রব্য ও পরিমাণের সাথে সম্পর্কিত অবস্থানের অস্তিত্ব দুটি দ্রব্যের মাঝখানে অবস্থিত।
আল ফারাবির মতে, দুটি ঘটনাকে পাশাপাশি ঘটতে দেখলে এটা মনে করা উচিত নয় যে, সম্পর্কের দৃষ্টিতে একটি অন্যটির উপর নির্ভরশীল । সূর্যোদয়ের সাথে দিনের, দ্রব্যের সাথে অবান্তর লক্ষণের, শব্দের সাথে জিহ্বার যে সম্পর্ক সেটা অনিবার্যতার সম্পর্ক/ অনিবার্যতা নিশ্চিত হতে পারে। যেমন- উষালগ্ন নির্ভর করে সূর্য উঠার উপর। সম্পূর্ণ অনিবার্যতা বা অসম্পূর্ণ অনিবার্যতা একটির অস্তিত্ব অন্যটির উপর নির্ভরশীল। যেমন- পুত্রের অস্তিত্ব পিতার উপর নির্ভরশীল।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, আল ফারাবির জ্ঞানতত্ত্বের মৌলিক ধারণাগুলো অভিজ্ঞতার পূর্বগামী সমস্ত মৌলিক ধারণাকে শোপেনওয়ারের কার্যকারণতত্ত্বে অন্তর্ভুক্ত করে এরিস্টটলের জ্ঞানসূত্রের পরিমাণের চেয়ে আল ফারাবির জ্ঞানসূত্রের পরিধি অত্যন্ত ব্যাপক। সুতরাং আল ফারাবির জ্ঞানসূত্রের গুরুত্বকে অস্বীকার করা যায় না।


