অথবা, দেহ ও আত্মা সম্পর্কে আল ফারাবির বক্তব্য কী?
অথবা, দেহ ও আত্মা সম্পর্কে আল ফারাবির মতবাদ সংক্ষেপে আলোচনা কর।
অথবা, আল ফারাবি দেহ ও আত্মা সম্পর্কে যে মতবাদ দেন তা সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : মুসলিম দর্শনের ইতিহাসে যে কয়জন খ্যাতনামা চিন্দাবিদ অসামান্য অবদান রেখেছেন আল ফারাবি তাদের মধ্যে অন্যতম। তিনি ইসলামি শিক্ষাকে প্লেটো ও এরিস্টটলের দর্শনের সাথে সমন্বয় সাধন করেন। তাঁর মতে আত্মার বিশুদ্ধতা লাভ করাই দর্শনের লক্ষ্য। তিনি মনে করেন দেহ ও আত্মার মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে।
দেহ ও আত্মার সম্পর্ক : আল ফারাবি মনে করেন জীবাত্মার কল্পনা থেকে দেহধারী সত্তার উৎপত্তি। দেহের নিয়ন্ত্রক হলো আত্মা । সৎগুণ আত্মার উৎকর্ষতা থেকে উৎপত্তি হয়। সাধনার মাধ্যমে মানুষ যখন আত্মিক উন্নতি লাভ করে তখন দেহের চেয়ে আত্মার কথা অনুভূত হয় বেশি এবং পরিণামে খোদার নৈকট্য লাভ করে। আত্মা উন্নত স্তরে যখন উন্নীত হয় এবং পূর্ণতা লাভ করে তখন জড় পদার্থ বা দেহের উপর তার নির্ভরশীলতা কমে যায়। আত্মার প্রকৃতি ও দেহের প্রকৃতি ভিন্ন। তিনি আত্মার প্রকৃতি সম্পর্কে কুরআনের সাথে সঙ্গতি রেখে ব্যাখ্যা দেন। আত্মা হলো আল্লাহর হুকুম
বা আদেশ। আত্মা দেহের মতো বিভাজ্য নয় বরং অবিভাজ্য, মৌলিক এবং অতীন্দ্রিয় সত্তা। জড় থেকে আত্মা ভিন্ন। দেহের মতো আত্মা বাহ্য জগতে অবস্থান করলেও প্রকৃতপক্ষে আত্মার বাসস্থান হলো “আলামে আমর”-এ। এর কোনো আকার নেই, স্থিতি ও গতিতে এর কোনো পরিবর্তন সাধিত হয় না। কিন্তু আত্মা পার্থিব জগতে দেহে অবস্থান করে এবং দেহে অবস্থান কালে তার বিকাশ বা উৎকর্ষতা সাধিত হয়। আল ফারাবি আত্মার প্রতিশব্দ হিসেবে কুরআনের মতো বিভিন্ন স্থানে কালব, নাফস ও রুহ শব্দটি ব্যবহার করেছেন।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার আলোকে আমরা বলতে পারি যে, দেহ ও আত্মার সমন্বয়েই মানুষের অস্তিত্ব। দেহ হীন আত্মা বা আত্মাহীন দেহ সম্ভব নয়। কেননা দেহহীন আত্মা বিমূর্ত ধারণা আর আত্মাহীন দেহ জড় পদার্থেরই নামান্তর। সুতরাং দেহ ও আত্মার মধ্যে যে অনিবার্য সম্পর্ক রয়েছে তা অনস্বীকার্য।


