অথবা, আল-ফারাবির রাষ্ট্রদর্শনের অবদান লিখ।
অথবা, রাষ্ট্রদর্শনে আল-ফারাবির অবদান কী?
অথবা, রাষ্ট্রদর্শনে আল-ফারাবির অবদান সংক্ষেপে তুলে ধর।
উত্তর৷ ভূমিকা : রাষ্ট্রদর্শনে আল-ফারাবির অবদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রাচীন যুগে প্লেটো, এরিস্টটল, সেন্ট অগাস্টিন; মধ্যযুগে আল-ফারাবি, নিযামুল মুলক, মাওয়ারদি; বর্তমান ও সমসাময়িক যুগে মার্টিন লুথার, ম্যাকিয়াভেলি, হবস, জন লক, মন্টেস্কু, রুশো, বেন্থাম, জন স্টুয়ার্ট মিল, কার্ল মার্কস, সৈয়দ আহম্মদ খান ও আল্লামা ইকবালের নাম
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। আল-ফারাবি রাষ্ট্রদর্শনের ইতিহাসে একজন খ্যাতনামা চিন্তাবিদ।
রাষ্ট্রদর্শনে আল-ফারাবির অবদান : মুসলিম দার্শনিক আল-ফারাবি আরবি ভাষায় প্লেটোর রিপাবলিক এবং এরিস্টটলের নিকোমেকিয়ান ইথিকস এর ভাষ্য রচনা করেছেন। তাছাড়া প্লেটো এবং এরিস্টটলের দর্শনের উপর স্বতন্ত্রভাবে অনেক গ্রন্থ রচনা করেছেন। আল-ফারাবির মৌলিক অবদান রাষ্ট্রদর্শনের যেসব গ্রন্থে রয়েছে সেগুলো হলোnমদিনাতুল ফাজিলাহ, সিয়াসাতুল মাদানিয়াহ, ফুসুল আল-মাদানি, তাহসিল আল সা’আদাহ। অধিবিদ্যা ও নীতিবিদ্যাকে তিনি রাষ্ট্রদর্শনের ভিত্তি হিসেবেই ব্যবহার করেছেন। আল-ফারাবির মতে, মানবজীবনের অন্যতম লক্ষ্য হলো সুখ অর্জন। নিম্নোক্ত চারটি মানবিক গুণের উৎকর্ষের মাধ্যমে মানুষ ইহকালের ক্ষণস্থায়ী সুখ ও পরকালের চিরস্থায়ী সুখ লাভ করতে পারে। যথা :
গ. নৈতিক সদ্গুণ এবং
ক. আত্মিক সদ্গুণ,
খ. চিন্তামূলক সদ্গুণ,
ঘ. বাস্তব জীবনের ব্যবহারিক ও প্রায়োগিক কলাকৌশলের উন্নতি সাধন। জীবনের পরম ও চরম কাম্য লাভ করার ব্যাপারে আত্মিক সদ্গুণ প্রয়োজনীয় জ্ঞান সরবরাহ করে। এসব জ্ঞান সহজাত হতে পারে আবার অর্জিতও হতে পারে। আল-ফারাবি স্রষ্টা ও সৃষ্টির সম্পর্কে বিশ্লেষণ করতে গিয়ে ছয়টি স্তরের কথা উল্লেখ করেছেন। প্রথম কারণ হচ্ছে প্রাথমিক স্তর, মাধ্যমিক কারণগুলো দ্বিতীয় স্তর, সক্রিয় বুদ্ধি হচ্ছে তৃতীয় স্তর, আত্মা চতুর্থ স্তর, আকার পঞ্চম স্তর, জড় হচ্ছে ষষ্ঠ স্তর। প্রথম স্তর পরিপূর্ণভাবে একক সত্তা, এখানে দ্বিত্বের বা বহুত্বেরnকোন স্থান নেই। অন্যান্য স্তরের সাথে এক না হয়েও একাধিকও হতে পারে। আত্মিক জড় এবং মাধ্যমিক কারণগুলো জড়পদার্থ নয়। প্রথম কারণ মাধ্যমিক কারণও সক্রিয় বুদ্ধির সাথে জড়পদার্থের সরাসরি কোন সংযোগ নেই এবং এগুলো জড়ের মধ্যে অবস্থানও করে না। আবার আকার ও উপাদান জড়পদার্থের উপর নির্ভরশীল। জড়পদার্থের সাথে এগুলোর সরাসরি সম্পর্ক বিদ্যমান। মানুষ সাধনার মাধ্যমে যখন এ পার্থিব ও জাগতিক বস্তুর মায়াজাল ছিন্ন করে সক্রিয় বুদ্ধির স্তরে উন্নীত হয় তখন সে অবারিত পরম সুখ লাভ করে। মূলত সক্রিয় বুদ্ধি এক। এটা অনুক্রমের দিক থেকে মানুষের এমন পরিশুদ্ধ রূপের বহিঃপ্রকাশ, যার মাধ্যমে শান্তি অর্জিত হয়। সক্রিয় শক্তিকে পবিত্র রুহ বলা যেতে পারে। আধ্যাত্মিক জগতের শক্তি বলা হয় এ শক্তিকে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, রাষ্ট্রদর্শনে আল-ফারাবির অবদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যে কৃতিত্বের সাথে তিনি মানুষের প্রকৃতি ও শিক্ষা সম্পর্কে আলোচনা করেছেন তা প্রশংসার দাবিদার। তাঁর মতে, সব বিষয়ে প্রশিক্ষণ দানের ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তিই হচ্ছেন জ্ঞান জগতের প্রধান নেতা। তিনি শিক্ষাক্ষেত্রে নৈতিক প্রশিক্ষণের কথা বলেন, যা জাতির মধ্যে নৈতিক গুণ ও বিজ্ঞানভিত্তিক কলাকৌশলের সৃষ্টি ও বিকাশের পদ্ধতি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ ও তার বাস্তবায়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।


