আল-ফারাবির দর্শনতত্ত্ব সংক্ষেপে লিখ ।

অথবা, দর্শন সম্পর্কে আল-ফারাবির দৃষ্টিভঙ্গি সংক্ষেপে লিখ।
অথবা, আল-ফারাবির দর্শনতত্ত্ব সংক্ষেপে লেখ।
অথবা, দর্শন সম্পর্কে আল-ফারাবির দৃষ্টিভঙ্গির সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।
অথবা, দর্শনতত্ত্ব সম্পর্কে আল-ফারাবির বক্তব্য কি?
উত্তর৷৷ ভূমিকা :
মুসলিম দর্শন হলো মুসলিম জাতির চিন্তা ও চেতনার ধারা। মুসলিম দর্শনের চিন্তাধারা বিবর্তনের ক্ষেত্রে যে সম্প্রদায় অবর্ণনীয় অবদান রেখেছে তার নাম ফালাসিফা সম্প্রদায় বা দার্শনিক সম্প্রদায়। এ
দার্শনিক চিন্তাধারার শুরু হয়েছিল মূলত আরবীয় দার্শনিক আল-কিন্দি থেকে। আল-কিন্দির পরে যারা মুসলিম দার্শনিক হিসেবে বিশেষভাবে সমৃদ্ধি অর্জন করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলেন আবু নসর আল-ফারাবি (হিজরি ২৫৮/৮৭০ খ্রি.

  • ৩৩৯ হিজরি/৯৫০ খ্রি.)।
    দর্শন সম্পর্কে আল-ফারাবির দৃষ্টিভঙ্গি : আল-ফারাবি বিভিন্ন বিষয়ে প্রগাঢ় পাণ্ডিত্যের অধিকারী ছিলেন এবং তাঁকে মুসলিম দার্শনিকদের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ দার্শনিক হিসেবে অভিহিত করা হয়। নিম্নে তাঁর দর্শনতত্ত্ব আলোচনা করা হলো :
    ১. স্বাতন্ত্রিকতা বা মৌলিকত্ব : আল-ফারাবির দর্শনে একটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ও সুস্পষ্ট লক্ষ্য পরিলক্ষিত হয়। তিনি তাঁর পূর্ববর্তী দার্শনিকদের মতামত গ্রহণ করে তাঁর নিজস্ব সাংস্কৃতিক পরিবেশের সাথে সেগুলোর সঙ্গতি বিধান করে এমন এক দার্শনিক মতবাদ গড়ে তোলেন, যার ফলে তাঁর দার্শনিক মতবাদ সুসংবদ্ধ ও সুসংহত রূপ ধারণ করে।
    ২. দর্শন অনুশীলনে লক্ষ্য নির্ণয় : আল-ফারাবি মনে করেন, দর্শন মূলত এমন একটি বিষয়, যার প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে সত্যানুসন্ধান করা। সত্যের অনুশীলন ও অনুসন্ধান করাই যথার্থ দার্শনিকের লক্ষ্য। তাঁর মতে, সত্যনিষ্ঠা ও আত্মার বিশুদ্ধিকরণ দর্শনের অভীষ্ট লক্ষ্য।
    ৩. সত্যানুসন্ধানী দৃষ্টিভঙ্গি : আল-ফারাবি সত্যের নিষ্ঠাবান সাধক ছিলেন। তিনি দর্শনে কেবল একটি চিন্তাগোষ্ঠী, অর্থাৎ সত্যের চিন্তাগোষ্ঠীর অস্তিত্বে বিশ্বাস করেন। এজন্য তিনি সত্যের স্বার্থে প্রয়োজনে এরিস্টটলের মতকেও অস্বীকার করতে দ্বিধাবোধ করেন নি।
    ৪. গ্রিক দর্শনের সাথে সমন্বয় : আল-ফারাবি আল-কিন্দির মত প্লেটো ও এরিস্টটলের দার্শনিক মতের বিচার বিশ্লেষণ করে ইসলামি চিন্তাচেতনার সাথে তার সমন্বয় সাধনের প্রচেষ্টা চালান।
    ৫. দর্শন ও বিজ্ঞান : আল-ফারাবির মতে, দর্শন হচ্ছে সকল সত্তার বিজ্ঞান, যা বস্তুসত্তার স্বরূপের সাথে আমাদেরকে পরিচিত করে তোলে। তিনি মনে করেন দার্শনিক জ্ঞান লাভ করাই মানবজীবনের পরম লক্ষ্য।
    ৬. গাণিতিক ও যুক্তিবিদ্যার জ্ঞান : সত্যানুসন্ধানের জন্য আমাদেরকে গাণিতিক ও যুক্তিবিদ্যার মত বিশুদ্ধ বিষয়ের জ্ঞান থাকতে হবে বলে ফারাবি মনে করেন।
    ৭. দর্শন অনুশীলনের পূর্বশর্ত : আল-ফারাবি দর্শন অনুশীলনের পূর্বশর্ত হিসেবে চরিত্র গঠন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন। তাঁর মতে, আত্মোৎকর্ষ ব্যতিরেকে জীবনের গভীর রহস্য উদ্ঘাটন করা অসম্ভব, কেবল বুদ্ধিময় সত্তায় প্রদীপ্ত হতে পারলেই দর্শনের গভীর তত্ত্ব মানুষের চিন্তায় উদ্ভাসিত হতে পারে।
    ৮. চিন্তার যৌক্তিক কাঠামো : আল-ফারাবির উদ্দেশ্য ছিল এমন এক বিষয় উপস্থাপন করা, যাতে করে চিন্তার যৌক্তিক কাঠামো গঠিত হতে পারে।
    উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, আল-ফারাবি ছিলেন একজন বুদ্ধিবাদী মুসলিম দার্শনিক। তাঁকে প্রাচ্যের শ্রেষ্ঠ মুসলিম দার্শনিক বলা হয়ে থাকে। পরবর্তী দার্শনিকদের উপর তাঁর প্রভাব গভীর। দর্শনের বিভিন্ন শাখায় তাঁর ছিল অসাধারণ পাণ্ডিত্য। আর এজন্য তিনি মুয়াল্লিম সানী উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন।