আল-ফারাবির আত্মার বৃত্তিসমূহ কি কি?

অথবা, আত্মার বৃত্তি সম্পর্কে আল-ফারাবির অভিমত সংক্ষেপে লিখ।
অথবা, আল-ফারাবির আত্মার বৃত্তিসমূহ সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।
অথবা, আত্মার বৃত্তি সম্পর্কে আল-ফারাবি কিরূপ মতবাদ দেন?
অথবা, আল-ফারাত্রি আত্মার বৃত্তিসমূহ সংক্ষেপে বিশ্লেষণ কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
আল-ফারাবির দর্শনে আত্মাতত্ত্ব একটি বিশেষ স্থান দখল করে। প্রাচীন ও আধুনিক যুগের পাশ্চাত্য দার্শনিকরা আত্মাতত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করেছে। আল ফারাবি মনে করেন, আপাতদৃষ্টিতে মস্তিষ্ককে শরীরের পরিচালক এবং শরীরের প্রধান অঙ্গ মনে হয়। ফারাবির বুদ্ধিবৃত্তির সাথে আত্মার মূল সম্পর্কে ইঙ্গিত পাওয়া যায়। তাঁর আত্মা সম্পর্কে একটি হাদিসের সাথেও মিলে যায়।
আত্মার বৃত্তিসমূহ : আল-ফারাবির মতে, আত্মার বৃত্তি পাঁচটি। যথা :
১. পৌষ্টিক বৃত্তি (Nurative faculty),
২. সংবেদন বৃত্তি (Sensative faculty),
৩. বুদ্ধিবৃত্তি (Rational faculty),
৪. কল্পনা বৃত্তি (Imaginative faculty) এবং
৫. কামনা বৃত্তি (Appetitive faculty)।
১. পৌষ্টিক বৃত্তি (Nurative faculty) : মানুষের সৃষ্টি হচ্ছে দেহ ও মনের সমন্বয়ে। দেহের জন্য খাদ্যের প্রয়োজন। পৌষ্টিক বৃত্তি অনেক এবং তার অনুগামী ও সহকারী বৃত্তি অনেক। যেমন- পাকস্থলি, কলিজা, প্লীহা, কিডনি ইত্যাদি ।
২. সংবেদন বৃত্তি (Sensative faculty) : চোখ, নাক, কান, জিহ্বা ও ত্বকের মাধ্যমে আমাদের চতুষ্পার্শ্বস্থ বিষয় সম্পর্কে জানার জন্য যে বৃত্তি সাহায্য করে তাকে সংবেদন বৃত্তি বলে। সংবেদন বৃত্তিতে অন্তঃকরণের ভূমিকাই প্রধান আর পঞ্চ ইন্দ্রিয় হলো তার সহকারী।
৩. বুদ্ধিবৃত্তি (Rational faculty) : মানুষ বুদ্ধিবৃত্তির সাহায্যে চিন্তা করে। বুদ্ধিবৃত্তি দুই শ্রেণীতে বিভক্ত। যথা :
ক. তাত্ত্বিক বুদ্ধিবৃত্তি এবং খ. ব্যবহারিক বুদ্ধিবৃত্তি।
ক. তাত্ত্বিক বুদ্ধিবৃত্তি : তাত্ত্বিক দিক সম্পূর্ণভাবে চিন্তামূলক।
খ. ব্যবহারিক বুদ্ধিবৃত্তি : ব্যবহারিক বুদ্ধিবৃত্তি কিছুটা চিন্তামূলক ও কিছুটা অনুশীলনের উপর নির্ভরশীল।
৪. কল্পনা বৃত্তি (Imaginative faculty) : কল্পনা বৃত্তি বলতে বুঝায় ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য কোন বস্তুকে ভুলে যাওয়ার পরে পুনরায় স্মরণ করার শক্তিকে। এ কল্পনার উদয় জাগ্রত অবস্থায় অথবা ঘুমের ঘোরে হতে পারে।
৫. কামনা বৃত্তি : মানুষ যে বৃত্তির সাহায্যে কোন বস্তুকে পছন্দ বা অপছন্দ করে তাকে কামনা বৃত্তি বলে। প্রেম বিরহ, শান্তি ভীতি, সুখ দুঃখ প্রভৃতি কামনা বৃত্তির অন্তর্গত।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, আল-ফারাবি আত্মা সম্পর্কে একটি সুস্পষ্ট ধারণা প্রদান করতে সক্ষম হয়েছেন। পবিত্র কুরআনের সুরে সুর মিলিয়ে তিনি আত্মা সম্পর্কে যে অভিমত ব্যক্ত করেছেন তা মুসলিম দর্শনের ইতিহাসে খুবই অর্থবহ ও তাৎপর্যপূর্ণ। প্রকৃতপক্ষে তিনি ছিলেন মানবদরদি ও কল্যাণকামী। আর এ কারণেই তিনি মানুষের কল্যাণ সাধনের জন্য সংঘবদ্ধভাবে প্রচেষ্টার উপর জোর দিয়েছেন ও বিশ্বব্যাপী কল্যাণকামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চিন্তা করেছেন।