আল ফারাবিকে দ্বিতীয় শিক্ষক বলা হয় কেন?

অথবা, আল ফারাবিকে দ্বিতীয় শিক্ষক বলার কারণ কী?
অথবা, আল ফারাবিকে দ্বিতীয় শিক্ষক বলার যৌক্তিকতা কী?
অথবা, আল ফারাবিকে দ্বিতীয় শিক্ষক বলার কারণ সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।
অথবা, মুসলিম দর্শনে আল ফারাবিকে দ্বিতীয় শিক্ষক বলাটা কতটুকু যুক্তিযুক্ত সংক্ষেপে লেখ।
উত্তর৷ ভূমিকা :
মুসলিম দর্শনে ফালাসিফা সম্প্রদায়ের পরবর্তী শ্রেষ্ঠ চিন্তাবিদ ছিলেন আল-ফারাবি। তার পূর্ণ নাম আবু নছর মুহাম্মদ আল-ফারাবি। তিনি পরবর্তী মুসলিম দার্শনিকদের শিক্ষক হিসেবে পরিচিত। মুসলিম দর্শনের প্রায় সকল দিক সম্পর্কে তিনি আলোচনা করেছেন। মুসলিম দর্শনে তার অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে ‘দ্বিতীয় শিক্ষক’ হিসেবে অভিহিত করা হয়।
আল-ফারাবিকে দ্বিতীয় শিক্ষক বলার কারণ : এরিস্টটল হলেন দর্শনের প্রথম শিক্ষক। তিনিই সর্বপ্রথম ধর্মতত্ত্বকে খাঁটি দর্শন বলে আখ্যা দেন। তাঁর দার্শনিক তত্ত্বই সমগ্র বিশ্বে প্রচারিত হয়ে আসছে। এরিস্টটলের ভাবগম্ভীর দর্শন ও বস্তুবাদী জ্ঞানের দ্বারা ইউরোপে পুনর্জাগরণ তথা আধুনিক বিজ্ঞান যুগের সূচনা হয়। আল ফারাবি এরিস্টটলের দর্শন অধ্যয়ন করেন এবং তার দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হন। আর তাই তার দর্শনে এরিস্টটলের প্রভাব সুস্পষ্ট। এরিস্টটলের একটি উল্লেখযোগ্য অবদান হলো যুক্তিবিদ্যা প্রতিষ্ঠা। আল ফারাবি এরিস্টটলের মতো যুক্তিবিদ্যাকে জ্ঞান অর্জনের গুরুত্বপূর্ণ বাহন মনে করেন এবং যুক্তিবিদ্যা দ্বারা তিনি বিশেষভাবে প্রভাবিত হন। তারা উভয়ই যুক্তিবিদ্যাকে জ্ঞানের যে কোন ক্ষেত্রে ব্যবহার উপযোগী বৈজ্ঞানিক গবেষণার উপায় মনে করেন। এরিস্টটলের মতে ফারাবিও কারণের কারণ খুঁজতে গিয়ে আদিসত্তায় উপনীত হন। ফারাবির দৃষ্টিতে সে আদিসত্তা হলেন আল্লাহ। সুতরাং ফারাবির যুক্তিবিদ্যায় এরিস্টটলের প্রভাব সুস্পষ্ট। শুধু যুক্তিবিদ্যা নয় অনেক ক্ষেত্রেই এরূপ প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। দর্শনের ক্ষেত্রেও তিনি এরিস্টটলের ধর্মতত্ত্বকে একটি খাঁটি দর্শন বলে গ্রহণ করেন। অনেক দার্শনিক এরিস্টটলের দর্শনে অগাধ পাণ্ডিত্য ও সূক্ষ্মদর্শিতা অর্জন করে এর টীকা-ভাষ্য রচনা, আলোচনা- সমালোচনা করেছেন। এরা সবাই এরিস্টটলের অনুসারী ছিলেন; আর আল ফারাবি এ সকল সমালোচক, ভাষ্যকার ও
অনুসারীদের মধ্যে শীর্ষে ছিলেন। আর তাই আল ফারাবিকে দ্বিতীয় শিক্ষক বলা হয়।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে আমরা বলতে পারি যে, মুসলিম দর্শনে আল-ফারাবির অবদান অসামান্য এবং তাঁর সমস্ত দর্শন জুড়েই রয়েছে এরিস্টটলীয় দর্শন চিন্তার প্রভাব। তাই দার্শনিক এরিস্টটলকে বলা হয় প্রথম শিক্ষক এবং আল ফারাবিকে বলা হয় দ্বিতীয় শিক্ষক। মূলত আল ফারাবি এরিস্টটলীয় দর্শনের ধারক ও বাহক ছিলেন এবং মুসলিম দর্শনের সাথে সমন্বয় সাধন করেন।