অথবা, জ্ঞানতত্ত্ব বলতে আল-গাজালি কী বুঝান?
অথবা, আল-গাজালির মতে জ্ঞান কাকে বলে?
অথবা, আল গাজালির জ্ঞানতত্ত্ব বলতে কী বুঝ?
অথবা, আল গাজালির জ্ঞানতত্ত্ব কিরূপ?
উত্তরা৷ ভূমিকা : আল-গাযালি ছিলেন মুসলিম দার্শনিকদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ দার্শনিক। তাঁর দার্শনিক চিন্তাধারার মূল লক্ষ্য ছিল ইসলামকে ক্রমবর্ধমান অবিশ্বাস হতে রক্ষা করা। জাগতিক সাফল্য এবং বস্তুবাদী চিন্তাধারার বিকাশের ফলে মুসলমানদের ভিতর পারলৌকিক জীবন সম্পর্কে শৈথিল্য পরিলক্ষিত হচ্ছিল। ইমাম আল-গাযালি তাঁর লেখনী দ্বারা মুসলিম সমাজকে জাগ্রত করেছিলেন।
গাযালির জ্ঞানতত্ত্ব : জ্ঞানতত্ত্ব হলো দর্শনের এমন একটি শাখা যেখানে জ্ঞানের স্বরূপ, উৎস, শর্ত, সীমা, সম্ভাবনা ও বৈধতা নিয়ে আলোচনা করা হয়। গাযালিও তাঁর ‘আল-মুনকিদ-মিল-আল’ নামক গ্রন্থে জ্ঞানতত্ত্ব সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। তাঁর বক্তব্য ছিল কোন বিষয়ে সুচিন্তিত জ্ঞান অর্জন করতে হলে জ্ঞানের উৎস ও প্রকৃতি সম্পর্কে আলোকপাত করা আবশ্যক হয়ে উঠে। তাঁর জ্ঞানতত্ত্ব পর্যালোচনা করলে নিম্নলিখিত দিকগুলো পাই :
১. জ্ঞানের উৎসসমূহ পর্যালোচনা : জ্ঞান সম্পর্কিত আলোচনার কেন্দ্রীয় বিষয় হলো জ্ঞানের যেসব স্বীকৃত উৎস রয়েছে তার পর্যালোচনা করা । আল গাযালি কঠোর সাধনার মাধ্যমে জ্ঞানবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার উপর দখল স্থাপন করেন।
২. জ্ঞানের বিভিন্ন উৎসের প্রতি সংশয় : গাযালি জ্ঞানের যে বিভিন্ন শাখা রয়েছে তা আত্মস্থ করার পর দেখলেন যে, ধর্মতত্ত্ব, দর্শন ও বিজ্ঞান প্রতিটি শাখাই।ত্রুটিপূর্ণ। এদের কোনটিই এককভাবে সুনিশ্চিত জ্ঞান দিতে পারে না।
৩. সত্যকে জানার জন্য পদ্ধতিগত সংশয় : গাযালির মতে, প্রাধিকারের প্রতি অন্ধ আনুগত্যের ফলে ধর্মতত্ত্ব, দর্শন ও বিজ্ঞানের অযথার্থতা প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু জ্ঞান চর্চা হবে স্বাধীন। এ স্বাধীন মনন সবকিছুতেই সংশয় করবে যার উদ্দেশ্য হচ্ছে সুনিশ্চিত সত্যকে আবিষ্কার করা।
৪. জ্ঞানের উৎসসমূহ সম্পর্কে সংশয় : একজন সংশয়বাদীর প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো জ্ঞানের উৎসসমূহ সম্পর্কে সংশয় প্রকাশ করা। কেননা জ্ঞানের উৎস যদি স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়, তাহলে নিশ্চিত জ্ঞান পাওয়ার আর কোন উপায় থাকে না।
৫. জ্ঞানের উৎস হিসেবে স্বজ্ঞা : স্বজ্ঞা হলো এমন একটি বিষয় যার দ্বারা মানব মন কোন মাধ্যম ছাড়াই কোন • কিছুকে জানতে পারে। স্বজ্ঞাকেই গাযালি জ্ঞানের উৎস বলে মনে করেন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, গাযালির দার্শনিক পদ্ধতি ছিল বিজ্ঞানভিত্তিক। শুধু তাই নয় তাঁর দর্শন ছিল প্রজ্ঞার ও বুদ্ধির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। এ কারণে তার নাম বিশ্ব ইতিহাসে এক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্কের মতো। মুসলিম বিশ্বে তার গুরুত্ব অপরিসীম।