আল কিন্দির অধিবিদ্যা সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখ ।

অথবা, আল কিন্দির অধিবিদ্যক আলোচনা সংক্ষেপে লেখ।
অথবা, অধিবিদ্যা সম্পর্কে আল কিন্দির বক্তব্য কী?
অথবা, আল কিন্দির অধিবিদ্যক আলোচনা সম্পর্কে যা জান সংক্ষেপে লেখ।
অথবা, আল কিন্দির অধিবিদ্যা কিরূপ?
অথবা, আল কিন্দির অধিবিদ্যা সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।
উত্তর৷৷ ভূমিকা :
আল-কিন্দি একজন আরব দার্শনিক। তিনি ফালাসিফা বা দার্শনিক গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে পরিচিত। তিনি ইসলামকে ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে না দেখে এবং একে দার্শনিক যুক্তি ও বিশ্লেষণের আঙ্গিকে দেখার চেষ্টা করেন। তিনি ইসলামকে যুক্তি ও বুদ্ধির আলোকে দেখার চেষ্টা করেছেন। তিনিই প্রথম মুসলমান দার্শনিক, যিনি গ্রিক দর্শনের গভীর অধ্যয়ন করেছেন এবং ইসলাম ধর্মের আওতায় থেকে গ্রিক বুদ্ধিবাদের সাথে ইসলামি ঐতিহ্যকে সমন্বয়ে সার্থক ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন।
আল-কিন্দির অধিবিদ্যা : দার্শনিকগণ জগতের আদিকরণ সম্পর্কে জানতে চেষ্টা করেন। এ সম্পর্কিত অনুসন্ধান দর্শনে অধিবিদ্যা নামে পরিচিত। নি েএ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচিত হলো :.আল-কিন্দির নির্গমন মতবাদে তার অধিবিদ্যক চিন্তার প্রতিফলন দেখা যায়। তার এ নির্গমন মতবাদ পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, তিনি গ্রিক দর্শন দ্বারা এখানে সুস্পষ্টভাবে প্রভাবিত হয়েছেন। গ্রিক দার্শনিক প্লটিনাস সর্বপ্রথম এ
মতবাদ আমাদের সামনে নিয়ে আসেন। তবে কিন্দি একে প্লেটোর মতবাদ বলে ভুল করেন। প্রকৃতপক্ষে, তা ছিল নব্য প্লেটোবাদী প্লটিনাসের মতবাদ। এ মতবাদ অনুসারে এ জগতের যা কিছু রয়েছে তার সবকিছু প্রকৃত সত্তা বা আল্লাহ হতে নির্গমিত হয়েছে বা বিকিরণের মাধ্যমে এ জগৎ সৃষ্টি হচ্ছে। এ মতবাদ বিকিরণবাদ নামেও পরিচিত। প্লটিনাস একটি উদাহরণ দেন। তিনি বলেছেন, সূর্য হতে যেমন সূর্যরশ্মি বিকিরিত হয় এবং সূর্য যেমন তা জানে না, তেমনি এ জগতের যা কিছু রয়েছে তা বিকিরণের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে, আল্লাহর ইচ্ছায় জগৎ সৃষ্টি হয় নি। কেননা, এটি আল্লাহর অসীমতাকে সীমাবদ্ধ করে। শুধু তাই নয়; এটি বস্তু ও ব্যক্তি, জ্ঞেয় ও জ্ঞাতার মধ্যে প্রভেদ সৃষ্টি করে। কিন্তু আল্লাহ অসীম, তিনি কোনকিছুর দ্বারা সীমাবদ্ধ হতে পারেন না। ইচ্ছা বলতে বুঝায় কোন কামনা বাসনা যা কোন অভাবকে নির্দেশ করে, যে কোনভাবেই হোক না কেন তা পূরণ হয় নি। কিংবা এমন কোন উদ্দেশ্য, যা এখনও বাস্তবায়িত হয় নি। কিন্তু আমরা আল্লাহর ধারণা বলতে বুঝি পূর্ণতার ধারণা। আল্লাহর ভিতরে কোন অপূর্ণতা থাকতে পারে না, তিনি স্বয়ংসম্পূর্ণ, তার কোন অভাব থাকতে পারে না। আর অভাব থেকে যেহেতু ইচ্ছার সৃষ্টি হয়। আল্লাহর ভিতরে যেহেতু কোন অভাব নেই, তাই আল্লাহর কোন ইচ্ছা থাকতে পারে না। আল-কিন্দি তাই মনে করেন যে, কোন ইচ্ছার ফলে নয়, বরং জগৎ আল্লাহ থেকে নির্গমিত হয়েছে। জগৎ আল্লাহর অনন্ত সত্তার অনিবার্য প্রাচুর্য এবং এটি এ সৃজনী শক্তির আবশ্যিক পরিণতি। সূর্য হতে যেমন আলো বিনির্গত হয়, তেমনি আল্লাহ থেকে এ জগৎ বিনির্গত হয়েছে।
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার শেষে বলা যায় যে, জগতের উৎপত্তি সম্পর্কে যে বিদ্যা আলোচনা করে তা দর্শনে অধিবিদ্যা নামে পরিচিত। আল-কিন্দি তার দর্শনে অধিবিদ্যা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছে। তবে তার অধিবিদ্যা অনেকটা গ্রিক দর্শন দ্বারা প্রভাবিত। তার অধিবিদ্যা গ্রিক প্রভাব থাকলেও সেখানে তার স্বাতন্ত্র্য ফুটে উঠেছে।