উত্তর ভূমিকা : “The reign of Husain Shah
Constitutes a brilliant epoch in the history of mediaval Bengal’ – AM Chowdhury. অর্থাৎ “হুসেন শাহের শাসনকাল বাংলার ইতিহাসের মধ্যযুগে একটি উজ্জ্বল অধ্যায়ের সৃষ্টি করেছে।” বাংলার ইতিহাস হাবশি শাসন যখন একটি অরাজকতা অবস্থার সৃষ্টি করেছিল তখন তিনি বাংলার শাসকরূপে স্থায়ী এবং শান্তিপূর্ণ একটি শাসনব্যবস্থা গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন।
বাংলার ইতিহাসে হুসেন শাহের গুরুত্ব : বাংলার ইতিহাসে হুসেন শাহ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একজনশাসক হিসেবে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। বাংলার ইতিহাসে তিনি একজন
গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। নিম্নে তার গুরুত্ব সম্পর্কে বর্ণনা দেয়া হলো-
১. শান্তিপূর্ণ শাসক : হাবশি শাসনকালে বাংলার ইতিহাসেঅরাজকতাপূর্ণ সময় চলছিল। আলাউদ্দিন হুসেন শাহ এসময়ে
ক্ষমতায় আরোহণ করেন। প্রভুকে বধ করে ক্ষমতায় আরোহণ কিছুটা অমানবিক মনে হলেও তার শাসন ব্যবস্থা একে উতরে গেছে। তিনি বাংলায় একটি শান্তিপূর্ণ শাসন ব্যবস্থা প্রণয়ন করেছিলেন।
২. উদারতা : হুসেন শাহ বাংলার ইতিহাসে শাসক হিসেবে উদারতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। তিনি হিন্দুদের প্রতি সহনশীল আচরণ করেন। তার রাজসভায় হিন্দু কর্মকর্তা-কর্মচারী ও কবি- সাহিত্যিকদের সচরাচর আনাগোনা তার স্বাক্ষর বহন করে। তিনি উদার শাসন ব্যবস্থা চালু করেন।
৩. সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রতি অনুরাগ : হুসেন শাহ সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রতি তীব্র অনুরাগ প্রদর্শন করেন। তিনি বাংলা ভাষায় সাহিত্য রচনা করতে উৎসাহিত করেন। তার সময়ে মহাভারতকে অবলম্বন করে অনেক সাহিত্য রচিত হয়েছিল ।
৪. ধর্মীয় সহিষ্ণুতা : হুসেন শাহ একজন ধর্মসহিষ্ণু ব্যক্তি ছিলেন। তিনি সকল ধর্মের স্বাধীনতা প্রদান করেন। ফলে হিন্দুরাও তাদের ধর্মীয় সকল আচার-আচরণ পালনের সাথে
ধর্মপ্রচারের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা লাভ করে। শ্রী চৈতন্য ধর্মপ্রচারে বের হলেও তাকে কোনো প্রকার বাধা দেয়া হয়নি। ।
৫. স্থাপত্য শিল্পে অবদান : ইলিয়াস শাহী যুগে বাংলার মুসলিম স্থাপত্য শিল্পক্ষেত্রে যে নতুন ধারার সূচনা হয়েছিল হুসেন শাহের সময়ে
সেই ধারার প্রচলন ছিল। তিনি বহু মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। তার সময়ে নির্মিত মসজিদের মধ্যে ‘গৌড়ের ছোট সোনা মসজিদ’ এবং গুমতি দ্বার শিল্প সৌন্দর্যে বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে রয়েছে।
৬. সামরিক সাফল্য : হুসেন শাহ তার সুদীর্ঘ রাজত্বকালে সামরিক ক্ষেত্রে যথেষ্ট সাফল্য অর্জন করেছিলেন। তিনি কামতাপুরের খেন রাজ্য ধ্বংস করেন। উড়িষ্যা ও ত্রিপুরা রাজ্যের
কিয়দংশে অধিকার বিস্তার করেন, উত্তর বিহার ও দক্ষিণ বিহারের অংশ বিশেষেও তার আধিপত্য বিস্তৃত হয়েছিল। আরাকান ও
ত্রিপুরা রাজ্যের বিরুদ্ধেও তিনি সাফল্য লাভ করেছিলেন।
৭. উপাধি লাভ : হুসেন শাহের উদার শাসন ব্যবস্থা ও সকল ধর্মের প্রতি সমআচরণ তাকে প্রজাদের কাছে ঈশ্বরের প্রতিরূপ হিসেবে তুলে ধরেছিল। হিন্দুদের দেয়া উপাধিগুলো
থেকে তা সহজেই অনুভূত হয়। তাকে ‘নৃপতি তিলক’, ‘জগভূষণ’, কৃষ্ণাবতার প্রভৃতি উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে।
উপসংহার : উপরের আলোচনা থেকে বলা যায় যে, বাংলার ইতিহাসে হুসেন শাহ গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।
হুসেন শাহের শাসনের ফলে বাংলা সাহিত্য বেশ প্রসার লাভ করেছিল। তার উদার শাসন ব্যবস্থা হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের ভিত্তি স্থাপন করেছিল