উত্তর.ভূমিকা : মধ্যযুগীয় বাংলায় মুসলিম শাসনের ইতিহাসে আলাউদ্দিন হুসেন শাহ অন্যতম শ্রেষ্ঠ শাসক। সুষ্ঠু শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করে এবং দেশের জনগণের সর্বাঙ্গীন মঙ্গল চিন্তাই তাকে শ্রেষ্ঠ শাসকদের কাতারে প্রথম দিকে স্থান করে দিয়েছে। তিনি শাসক হিসেবে উদারনীতি গ্রহণের মাধ্যমে সকল ধর্মের মানুষের আস্থা লাভ করতে সক্ষম হন। তার শাসন ব্যবস্থা ছিল প্রজা কল্যাণকামী শাসন ব্যবস্থা।
ভাষা ও সাহিত্য অনুরাগ : আলাউদ্দিন হুসেন শাহ একজন ও সাহিত্যপ্রেমী শাসক ছিলেন। তিনি তার শাসন ব্যবস্থায় ভাষা ও সাহিত্যের প্রতি তার তীব্র অনুরাগ প্রদর্শন করেছেন। নিম্নে তার ভাষা ও সাহিত্যের প্রতি অনুরাগের চিত্র তুলে ধরা হলো।
১. আরবি ও ফারসি সাহিত্য : মুসলমানরা আরবি ও ফারসি ভাষার সাহিত্যের প্রতি দুর্বল ছিল। আরবি ও ফারসি সাহিত্য মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতির সাথে সম্পৃক্ত। ফলে মুসলিম
শাসক হিসেবে হুসেন শাহ আরবি ও ফারসি ভাষায় রচিত বাংলা সাহিত্যের প্রতি অনুরাগ দেখান।
২. বাংলা ভাষায় সাহিত্য : বাংলা ভাষায় সাহিত্য রচনাকে হুসেন শাহ উৎসাহ প্রদান করেন। তিনি আরবিয় বংশোদ্ভূত হলেও ভাষা হিসেবে বাংলা ব্যবহার করতেন। তিনি এদেশীয় ভাষা ও সংস্কৃতির সাথে দৃঢ়ভাবে জড়িত হয়ে পড়েছিলেন। ফলে বাংলা ভাষায় সাহিত্য রচনায় উৎসাহ প্রদান তার আত্মতৃপ্তি
বোধেরই পরিচায়ক।
৩. ভিন্ন ধর্মীয় গ্রন্থ রচনায় উৎসাহ প্রদান : হুসেন শাহ ভিন্ন ধর্মীয় বিশেষ করে হিন্দু ধর্মীয় গ্রন্থ রচনায় উৎসাহ প্রদান করেছিলেন ।
তার উৎসাহের ফলে রবীন্দ্র পরমেশ্বর ‘পাণ্ডব বিজয়’ রচনা করেন। বিজয় গুপ্ত ‘মনসামঙ্গল’ কাব্য রচনা করেন। মহাভারতকে কেন্দ্র করে
এসময়ে বাংলা ভাষায় অনেকগুলি সাহিত্য রচিত হয়।
৪. বিভিন্ন পণ্ডিতদের রচনা : হুসেন শাহের সময়ে বিভিন্ন পণ্ডিতগণ তাদের সাহিত্য রচনা করেন। পণ্ডিতরা অন্য ধর্মাবলম্বীদের বিভিন্ন গ্রন্থাবলি সম্পর্কে লেখেন। যশোরাজ খান
অনেকগুলি পদাবলি রচনা করেছিলেন। কৃষ্ণদাস কবিরাজ এসময়ে ‘চৈতন্য চরিতামৃত’ গ্রন্থ রচনা করে বেশ সাড়া ফেলেন। এ গ্রন্থে
তিনি আলাউদ্দিন হুসেন শাহ সম্পর্কে অনেক বিবরণ প্রদান করেন।
৫. শ্রী চৈতন্যের প্রতি উদারতা : শ্রী চৈতন্য আলাউদ্দিন হুসেন শাহের সমসাময়িক। হুসেন শাহের রাজত্বকালে তিনি তার ধর্মমত প্রচার করেন। হুসেন শাহ তার সম্পর্কে জানতে পারেন। তবে তিনি কোনো বাধা না দিয়ে বরং তাকে উৎসাহিত করেন। চৈতন্যের প্রতি তার এ উদারতা সাহিত্য ক্ষেত্রে ব্যাপক অবদান
রাখে। কারণ চৈতন্যের কথাগুলো পরবর্তীতে সংকলিত হয় যা সাহিত্যের সবচেয়ে শক্তিশালী এবং সমৃদ্ধ একটি উৎস।
৬. পৃষ্ঠপোষকতা : হুসেন শাহ অনেক কবি-সাহিত্যের প্রতি পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন । তিনি কবি-সাহিত্যকদের রচনাকে সম্মানিত
করতেন। তিনি কবি-সাহ্যিকদের দ্বারা তার সভাকে আলোকিত করে রেখেছিলেন। সাহিত্যক্ষেত্রে তার উদার মনোভাব বাংলার সাহিত্য বিকাশের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।
উপসংহার : “The reign of Husain Shah witnessed a remarkable development of Bengali literature.” অর্থাৎ হুসেইন
শাহের শাসনামল বাংলার সাহিত্যক্ষেত্রে লক্ষণীয় উন্নতি নিয়ে আসে। সুলতান আলাউদ্দিন শাহ শুধুমাত্র শাসক হিসেবে নয়, একজন সাহিত্যানুরাগী হিসেবেও বাংলার ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছেন । বাংলা সাহিত্যে তার অবদান অবিস্মরণীয়।