উৎস : আলোচ্য অংশটুকু বিদ্রোহী প্রাবন্ধিক কাজী নজরুল ইসলামের ‘রাজবন্দীর জবানবন্দী’ প্রবন্ধ থেকে নেয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গ : রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ না করা সত্ত্বেও কেন কবি রাজকারাগারে নিক্ষিপ্ত হয়েছেন সে প্রচ্ছন্ন প্রশ্নটিই প্রদত্ত চরণে প্রকটিত হয়েছে।
বিশ্লেষণ : রাজা রাজ্যের সর্বোচ্চ পদ। একই সাথে রাজা একজন ব্যক্তি। কেউ ব্যক্তি বা পদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বা সমালোচনা করে না। নিন্দা, সমালোচনা, প্রতিবাদ বা বিদ্রোহ করে তার আচরণ তার স্বভাব, তার অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে। রাজার সমস্ত অপকর্মের বিরুদ্ধেই প্রজাসাধারণ বিদ্রোহী হয়ে উঠে। বিচারককে নিযুক্ত করেছেন রাজা। তাই বিচারকের উদ্দেশ্য রাজাকে সন্তুষ্ট করা। কিন্তু কবির উদ্দেশ্য রাজাকে সন্তুষ্ট করা নয়। আবার রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করাও তিনি উচিত মনে করেন না। বরং রাজার অসত্য, অন্যায়, অবিচারের বিরুদ্ধেই তাঁর অব্যাহত বিদ্রোহ। কেননা, রাজা তাঁর নিজের স্বার্থপর, লোভী ও পরস্বাপহরণের ভূমিকাকেই বড় করে দেখেন। সাধারণ মানুষের স্বার্থরক্ষা এবং কল্যাণ কামনা রাজার মুখ্য উদ্দেশ্য নয়। সাধারণ মানুষ তাদের কাছে তুচ্ছ। তারা তাদের শোষণের নির্মম শিকার। ‘প্রজাপালন’শব্দটি তাদের কাছে রসালো কৌতুক মাত্র। রাজার এ কৌতুক কবিকে আহত করে। তাই শায়ক বেঁধা পাখির মতো কারাগারে ছটফট করেও তিনি তাঁর সত্যবাণী উচ্চারণে পিছপা হননি। মানুষ ও দেশের কল্যাণ কামনা তাঁর আরাধ্য বলেই তিনি উৎপীড়িত। আর্ত বিশ্ববাসীর পক্ষে সত্য তরবারি ভগবানের আঁখিজল। এজন্যই কবির লেখায় ফুটে উঠেছে সত্য, তেজ আর প্রাণ। কেননা, তাঁর উদ্দেশ্য স্রষ্টার সন্তুষ্টি অর্জন।
মন্তব্য : রাজার উদ্দেশ্যে কবির কোন ক্ষোভ নেই, বিদ্রোহ নেই। কবির বিদ্রোহ রাজআচরণে, রাজকর্মে; যা কিছু অসত্য, অন্যায়, অবিচার, নির্মমভাবে দাবিয়ে রাখার বিরুদ্ধে। কারণ কবির আকাঙ্ক্ষা জনগণের মুক্তি, গণমানুষের কল্যাণ।