“আমি পৃথিবীর কবি সেথা তার যত উঠে ধ্বনি আমার বাঁশির সুরে সাড়া তার জাগিবে তখনি এ স্বরসাধনায় পৌছিল না বহুতর ডাক, রয়ে গেছে ফাঁক।”- ব্যাখ্যা কর।


উৎস : আলোচ্য পঙক্তিত্রয় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ঐকতান’ শীর্ষক কবিতা থেকে চয়ন করা হয়েছে। এখানে কবি তাঁর নিজের প্রসঙ্গে বলেছেন যে, পৃথিবীর কবি হওয়ার পরও তাঁর বাঁশির সুর সর্বত্র পৌঁছল না। কবির বাণীর মধ্যে অনেক ফাঁক রয়ে গেল । কবির বাণী বিশ্বমাত্রিকতায় পৌছাতে চেয়েছে, কিন্তু পারেনি। তাঁর কাব্য সাধনায় অপূর্ণতা রয়ে গেছে। জীবন সায়াহ্নে এসে কবি ঐকতান কবিতার মাধ্যমে তাঁর কাব্যকীর্তির অসংকোচ ও নিরপেক্ষ বিচার করতে চেয়েছেন এবং জানিয়েছেন তাঁর সৃষ্টি অসামান্য হলেও অপূর্ণতার গ্লানি থেকে মুক্ত নয়। কবি ঐ কৃষক ও মেহনতী মানুষগুলোর দিকে সীমাহীন মমতা নিয়ে দৃষ্টিপাত করেছেন বিশ্বসাহিত্যের সম্পদভারে আত্ম-অবগাহন এর মাধ্যমে নিজের কাব্য প্রতিভার পরিধি ব্যাপ্ত করতে চেয়েছেন কবি। কিন্তু কবির এ বিশ্বভাবনার আকাঙ্ক্ষা সমাজ সংসারে শত বাধার কারণে পূর্ণ হতে পারেনি। বিশ্ব প্রকৃতির অপরিসীম জ্ঞান কবির অন্তরালে রয়ে
গেছে। তাঁর কাব্য সর্বশ্রেণির মানুষের মাঝে একাকার হতে পারেনি। কবির এ অতৃপ্তি তাঁর প্রতিভার সাথেই সঙ্গতিপূর্ণ। তিনি যে অপার কবিশক্তি ও অসীম মেধার অধিকারী ছিলেন তা আলোচ্য পঙক্তিগুলোতে প্রকাশ পেয়েছে। কবি তাঁর সুর সাধনায় সর্বত্র পৌছাতে পারেননি। কিন্তু সর্বত্র পৌছানোর জন্য চেষ্টা করেছেন। বহু জায়গায় তাঁর ডাক
পৌঁছায়নি। অনেক ক্ষেত্রে সুর মূর্ছনায় ফাঁক রয়ে গেছে।