অথবা, আমার পরমায়ুর সমস্ত দিনরাত্রির মধ্যে সেই একটিমাত্র রাত্রিই আমার তুচ্ছ জীবনের একমাত্র চরম সার্থকতা।”- ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘একরাত্রি’র গল্পকথক সুরবালার বাল্যসাথী। তারা একত্রে পাঠশালায় গিয়েছে এবং বউ বড় খেলেছে। সুরবালার উপর লেখক সকল সময় কর্তৃত্ব করতো। আর সুরবালাও তা নির্বিবাদে মেনে নিতো। সুরবালা লেখকের সমস্ত আবদার মাথা পেতে নিতো আর সহিষ্ণুভাবে ফরমাশ ঘটতো। গল্পকথক এক সময় কলকাতার পালিয়ে যায়। আর মাথা থেকে বিয়ের চিন্তা বাদ দিয়ে দেশ সেবায় আত্মনিয়োগ করে। আর এদিকে সুরবালার বিয়ে হয়ে যায় এক উকিলের সাথে। গল্পকথকের পিতার মৃত্যু হলে সে সংসারের হাল ধরার জন্য নওয়াখালি বিভাগের ছোট শহরে এনট্রেন্স স্কুলের সেকেন্ড মাস্টারের পদপ্রাপ্ত হয় । এখানকার উকিল রামলোচনের বাড়িতে গিয়ে সে সুরবালার অস্তিত্ব আবিষ্কার করে। ফিরে এসেও তার কিছু ভালো লাগে না। একসময় রামলোচন মকদ্দমার কাজে অন্যত্র যায়। এক রাত্রে বানের ডান শোনা যায়। সমুদ্র ছুটে যমদূতের মতো। সেই মুহূর্তে সেকে মাস্টার সুরবালার বাড়ির দিকে রওনা হয়। পুষ্করিণীর পাড়ে উঠলে অন্য পাড় থেকে সুরবালাও আসে। শুধু পাঁচ-ছয় হাত দ্বীপের উপর দুটি প্রাণী। কেউ কোন কথা বলে না- বানের পানি নেমে গেলে যে যার ঘরে ফিরে যায়। এ সামান্য দর্শনে গল্প কথক অনন্ত আনন্দের আস্বাদ পায়- এই ভেবে যে, সে এতদির পরে হলেও সে তার বাল্যসাথীকে দেখতে পেয়েছেন এবং সেই সুরবালা ভালো আছে। সে সুরবালাকে মনে মনে স্বামী, সন্তান, সংসার নিয়ে সুখে থাকার জন্য কামনা করে। এই রাত ছিল লেখকের তুচ্ছ জীবনের একমাত্র মনে রাখার মতো রাত- তাই রাতটি গল্পকারের কাছে স্মরণীয়।